Home নির্বাচন ‘গ্রেফতার করতে এলে পুলিশের হাড্ডি ভেঙে দেব’
Disember ২৮, ২০২৩

‘গ্রেফতার করতে এলে পুলিশের হাড্ডি ভেঙে দেব’

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ পুলিশকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, আমার কোনো কর্মীকে গ্রেফতার করতে আসলে একেবারে হাড্ডি ভেঙে দেব। পুলিশেরা আমাকে বলছেন— এটা সরকারি নির্দেশ। আমি তাদেরকে বলেছি— আমার বিনা অনুমতিতে আমার কোনো কর্মী, আমার কোনো লোক বা কাউকে গ্রেফতার করতে পারবেন না। আমি তাহেরপুরের রাজা। আমিই এখনকার সরকার।

নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের বাড়ি বাগমারার তাহেরপুরে এবং তিনি তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ছিলেন।

কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হককে উদ্দেশ্য করে কালাম বলেন, শালা…বাচ্চারা তোরা আমাকে চিনিস না। আমরা বহু সহ্য করেছি। আর সহ্য করব না। আর যদি আমাদের লোককে কোনো ভয় দেখানো হয়, তা হলে কাউকে আমি আস্ত রাখা হবে না। শালারা আমাকে চেনে না। আমি যে কি করতে পারি তা তুই জানিস না।

এদিকে নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের বেপরোয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহী-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক বলেন, তফশিল ঘোষণার পর থেকে কালাম এভাবেই বাগমারার সর্বত্র ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। আমরা ইতোমধ্যে তার এসব বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জেলা রিটার্নিং অফিসার, নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে একাধিকবার জানিয়েছি। কিন্তু তার বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

অন্যদিকে নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের দুই সশস্ত্র ক্যাডারের ধারালো অস্ত্র হাতে পোজ দেওয়া আরেকটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। আয়েশি ভঙ্গিতে মুখে সিগারেট গুঁজে কালামের দুই ক্যাডার দুটি বড় ও ধারালো কান্তাই হাতে পোজ দিয়েছেন।

এলাকাবাসী অভিযোগে জানিয়েছেন, ধারালো কান্তাই হাতে পোজ দেওয়া পেছনের জনের নাম শামীম হোসেন (৩৫)। এলাকায় দাগি সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত শামীমের বাবার নাম ইদ্রিস আলী। তিনি বাগমারার রামগুইয়া গ্রামের বাসিন্দা। মুখে সিগারেট থাকা সন্ত্রাসীর নাম নাঈম হোসেন (২৫)। তার বাবার নাম বাক্কার আলী। নাঈমের বাড়িও রামগুইয়া গ্রামে। এলাকায় নির্বাচনি কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এই দুই সন্ত্রাসীসহ তাদের দলটি বাগমারা চষে বেড়াচ্ছে।

প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনি অফিসে অগ্নিসংযোগ থেকে শুরু করে হামলার অভিযোগে ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে বাগমারা থানায় মামলা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেনি।

এদিকে নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, বাগমারার পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হচ্ছে। সহিংসতার আশঙ্কায় অনেকেই এলাকা ছাড়ছেন। ফলে নির্বাচনের দিন বড় সহিংসতার আশঙ্কা করছেন এলাকার মানুষ।

তাদের আরও অভিযোগ, রাতের বেলা কালামের মাইক্রোবাস বাহিনী আগের মতোই টহল দিয়ে এলাকায় ভীতি সৃষ্টি করছে। তারা যেখানেই কাঁচি প্রতীকের পোস্টার দেখতে পাচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে তা তুলে ফেলছে। ইতোমধ্যে বাগমারায় কাঁচি প্রতীকের ২৬টি নির্বাচনি অফিস ভাঙচুর ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুলের প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট মোসলেহ উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, নৌকার প্রার্থী কালামের সশস্ত্র ক্যাডারদের হামলায় কাঁচি প্রতীকের ৪৫ কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন। আহতদের অনেকেই এখনো বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাগমারার মানুষ অনেক বছর শান্তিতে ছিলেন। কালাম আবার সন্ত্রাস আমদানি করল।

বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও হুমকিমূলক বক্তব্য প্রদানের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহী-৪ আসনের কালাম সরাসরি কোনো জবাব না দিয়ে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল ও তার কর্মী-সমর্থকদেরই দায়ী করেন।

তিনি বলেন, আমার কোনো কর্মী-সমর্থক সন্ত্রাস করছে না। এনামুলের লোকেরাই সন্ত্রাস করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশান) ও সনাতন চক্রবর্তী বলেন, বিষয়গুলো আমাদের নজরে এসেছে। আমরা ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছি।

নৌকা প্রার্থীর হুমকিমূলক বক্তব্য প্রদান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, অভিযোগ পাওয়া সাপেক্ষে আমরা প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিচ্ছি। কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। কেউ এমন হুমকিমূলক বক্তব্য দিলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *