বিভিন্ন স্থানে হামলা-সংঘর্ষ, নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর
ফরিদপুর সদর-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ. কে. আজাদের নির্বাচনী অফিসে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে নৌকা মার্কার প্রার্থী শামীম হকের কর্মী সমর্থকরা। এতে এ. কে. আজাদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ১৪নং ওয়ার্ডের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রহমান জনকসহ অন্তত পাঁচ জন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে আব্দুর রহমান জনকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফরিদপুর পৌরসভার ১৪নং ওয়ার্ডের মাহমুদপুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে৷
এ. কে. আজাদের কর্মী আশরাফ হোসেন, পরেশ চন্দ্রসহ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিদিনের মতো প্রচারণা শেষে আজও আমরা অফিসে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করছিলাম। এমন সময় পৌরসভার কাউন্সিলর মোবারক খলিফা, আতিয়ার শেখের নেতৃত্বে প্রায় দেড়-দুইশ মানুষ নৌকার স্লোগান দিয়ে আমাদের অফিসে অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় তারা আমাদের অফিসের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা রামদা দিয়ে ঈগল মার্কার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রহমান জনকের মাথায় রামদা দিয়ে আঘাত করে। তখনই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
গুরুতর আহত আব্দুর রহমানের স্ত্রী পারভিন বলেন, আমার স্বামী অত্যন্ত শান্ত মেজাজের মানুষ। নৌকার সন্ত্রাসী লোকজনেরা রামদা দিয়ে তার মাথায় কোপ দিয়েছে।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর সদর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, খবর পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গেছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ও তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নওগাঁ-৬
নওগাঁ-৬ (রানীনগর ও আত্রাই) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ওমর ফারুক ওরফে সুমনের কর্মী-সমর্থকদের ওপর একাধিক হামলার খবর পাওয়া গেছে।
সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর নির্বাচনী প্রচারে রানীনগর উপজেলা সদরের বাসস্ট্যান্ড, হাসপাতাল এলাকা, কাশিমপুর ও জিয়ানীপাড়া এলাকায় পৃথক এসব হামলার ঘটনা ঘটে। নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেনের সমর্থকেরা হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ওমর ফারুক। এসব ঘটনায় থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে।
এ আসনে মোট পাঁচ প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সোমবার স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হওয়া চার দফা হামলায় আহত হয়েছেন ছয়জন। গুরুতর আহত আনোয়ার হোসেন, আবদুল মালেক ও মাহাবুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অন্যরা রানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
ওই ঘটনার জের ধরে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলা সদরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এবং রাত আটটার দিকে জিয়ানীপাড়া এলাকায় দুই সমর্থকের ওপর পৃথক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে নৌকার প্রার্থী আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আমার কর্মী-সমর্থকেরা ট্রাকের কর্মী-সমর্থকদের ওপর কোনো হামলা করেনি।
কুষ্টিয়া-৩
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পারভেজ আনোয়ারের সমর্থকদের ওপর হামলা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে সদর উপজেলার ঝাউদিয়া ইউনিয়নের ঝাউদিয়া বাজারে এই হামলার ঘটনা ঘটে। নৌকার কর্মীরা এই হামলা করেছেন বলে ঈগলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। এই আসনের নৌকার প্রার্থী টানা দুবারের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।
হামলায় আহত বুলবুল আহম্মেদ ওরফে সাগর (২৪) নামের এক কর্মীকে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচন ক্যাম্প পরিচালনার দায়িত্বে আছেন।
এ ছাড়া সোমবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া পৌরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প ভেঙে সেখানে নৌকার ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীরা।
তবে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারুকউজ্জামান নৌকার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ-৪
নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে নৌকার প্রার্থী শামীম ওসমানের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রচারণায় বাধা, হামলা ও ভাঙচুর এবং কর্মীদের মারধরের লিখিত অভিযোগ করেছেন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী আলী হোসেন।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজের কাছে এ লিখিত অভিযোগ দেন সোনালী আঁশের প্রার্থী।
আলী হোসেন উল্লেখ করেন, সোমবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার বটতলা রেললাইন এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছিলেন তার কর্মী-সমর্থকেরা। এ সময় প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শামীম ওসমানের ১০-১২ জন সমর্থক প্রচারণায় বাধা দেন।
প্রচারে ব্যবহৃত মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় মাইক ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। কর্মী ও অটোরিকশাচালককে মারধর করা হয়। এলাকায় নৌকা ছাড়া আর কোনো প্রতীকের প্রচার-প্রচারণা চালানো যাবে না বলে হুমকি দেন তারা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ অতি উৎসাহী হয়ে কিছু করে থাকলে খোঁজ নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাবনা
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার একটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কার্যালয় লক্ষ্য করে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে উপজেলা সদরের পিআরপুর মোড় বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি।
আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সরকার ও নির্বাচনবিরোধী লিফলেট বিতরণ করতে না দেওয়ায় তারাই গুলি করেছেন এবং ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব মেহেদী হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, বিএনপির কর্মী-সমর্থকেরা এমন কোনো ঘটনা ঘটাননি। বিএনপিকে চাপে রাখতে কেউ নিজেরাই গুলি ছুড়ে ও ককটেল ফাটিয়ে এখন দোষ চাপাচ্ছেন।
রংপুর-৫
রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনের নৌকার প্রার্থী রাশেক রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন সরকারের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ৬ জন কর্মী আহত হয়েছেন বলে জাকির হোসেন দাবি করেছেন।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উপজেলার জায়গীর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকেরা জড়ো হয়ে ঘটনার প্রতিবাদে বিকেল পাঁচটার দিকে জায়গীরহাট এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন। পুলিশের হস্তক্ষেপে প্রায় আধা ঘণ্টা পর তারা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন।