মধুপুরের সিরিয়াল কিলার সাগরের কারাগারে মৃত্যু
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার মির্জাবাড়ী ইউনিয়নের ব্রাহ্মণবাড়ি গ্রামের আলোচিত সিরিয়াল কিলার সাগর শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শনিবার বিকালে তার লাশ গ্রহণ করেন পরিবারের সদস্যরা। রাত ৮টায় একটি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়িতে পৌঁছান তারা। রাত ১০টায় মসজিদচালা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। লাশ বাড়িতে পৌঁছার খবর পেয়ে দেখতে এলেও প্রতিবেশীদের অনেকেই সাগরের জানাজায় অংশ নেননি বলে জানা যায়।
রাত ১০টায় জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন সাগরের চাচাতো ভাই জমশের আলী। তিনি জানান, রাত হওয়ার কারণে জানাজায় লোক কম ছিল।
স্থানীয় আব্দুল আজিজ, তারা মিয়া, মাসুদ রানা জানান, ৭ খুনের আসামি সাগরের প্রতি এলাকার মানুষের ঘৃণা ছিল। এজন্য তার জানাজায় যাওয়ার আগ্রহ এলাকার মানুষের মধ্যে তেমন দেখা যায়নি।
সাগরের ভাবি হেনা বেগম জানান, বুধবার রাতে সাগর ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সাগর মারা যান। ওই দিনই কর্তৃপক্ষ ফোনে তাদের সাগরের মৃত্যুর খবর দেন।
এদিকে মধুপুর থানার দুই পুলিশ সদস্য পরিবারের সদস্যদের কাছে খবরটি শুক্রবার বিকালে পৌঁছায় বলে মধুপুর থানার এসআই আপেল মাহমুদ নিশ্চিত করেন।
শনিবার পরিবারের ৫ সদস্যের একটি দল প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ পৌঁছে আনুষ্ঠানিকতা শেষে ঢাকায় গিয়ে লাশ গ্রহণ করতেই বিকাল হয়ে যায়। পরে লাশবাহী একটি অ্যাম্বুলেন্সে তারা সাগরের লাশ নিয়ে রাত ৮টায় বাড়ি পৌঁছান। সাগরের বড় ভাইয়ের স্ত্রী হেনা এবং আরেক বড় ভাই শাহাদসহ পরিবারের ৫ জন ছিলেন লাশ গ্রহণকালে।
উল্লেখ্য, সাগরের বাবার নাম মোবারক হোসেন। ৫ ভাইবোনের মধ্যে সাগর ছিল সবার ছোট। বাল্যকাল থেকেই কিশোর অপরাধ আর নেশার সঙ্গে পরিচিত হয় সাগর। এরপর নানা ধরনের অপরাধ করে বেড়াতে থাকে।
গ্রামের প্রবীণ হাশেম মিয়া জানান, ২০১০ সালে সাগর এক নিকটাত্মীয় কিশোরীকে ধর্ষণ করে। এ অপরাধে তাকে মারপিট করে গ্রামছাড়া করা হয়। এরপর মধুপুর পৌরশহরের মাস্টারপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে বাস করত সাগর। ২০২০ সালের ১৫ জুলাই দুইশ টাকা ধার না পেয়ে ক্ষোভে একই পরিবারের আব্দুল গণি, তার স্ত্রী কাজিরন বেগম, মেয়ে সাদিয়া এবং পুত্র তাইজুলকে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে গলা কেটে হত্যা করে।
গত কয়েক মাস আগে টাঙ্গাইল কারাগার থেকে রহস্যজনকভাবে জামিন পেয়ে স্ত্রী ঈশিতা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে আশুলিয়ায় বাসা ভাড়া নেয়। এখানে থাকাবস্থায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর সস্ত্রীক কবিরাজ সেজে সাভারের জামগড়ার ফকিরবাড়ীর মেহেদী হাসানের মালিকানাধীন ছয়তলা ভবনের চারতলার ফ্লাটে গিয়ে ভাড়াটে স্বামী মুক্তার হোসেন, স্ত্রী শাহিদা বেগম এবং পুত্র মেহেদী হাসানকে নেশাদ্রব্য খাইয়ে গলা কেটে হত্যা করে। পরে র্যাব দুদিন পর মোবাইলের কললিস্ট ফলো করে সাগর ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে। তখন থেকেই সাগর সাত খুনের মামলায় কেরানীগঞ্জ জেলহাজতে ছিলেন।