বিজয়ের মাহাত্ম্য সঠিকভাবে বুঝতে হবে: ড. সাদেকা হালিম
তৌকির আহমেদ, জবি প্রতিনিধি:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেছেন, বিজয়ের মাহাত্ম্য সম্পর্কে সঠিকভাবে বুঝতে হবে। সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানতে হবে। শিক্ষার্থীরাই জাতির ভবিষ্যৎ কান্ডারী। সঠিক ইতিহাস না জানলে শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে নতুন প্রজন্মকে সেই বিষয় জানাতে পারবেনা।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘গৌরবদীপ্ত বিজয়’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজিব মঞ্চে অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, মহান বিজয় দিবস আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। যার ফলে একটি জাতি বিশ্বের মঞ্চে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছে। বিশ্বের মানচিত্রে আমরা এখন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত। মাত্র নয় মাসেই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বর্তমানে আমরা সেই স্বাধীনতাকে কতটুকু ধারণ করছি, কিভাবে রক্ষা করছি, কতটুকু অনুধাবন ও চর্চা করতে পারছি এবং বাস্তব জীবনে কিভাবে প্রয়োগ করছি সেটি দেখা দরকার।
জবি উপাচার্য বলেন, যখন আমরা বিজয় দিবস পালন করি তখন বিভিন্ন চিত্তে আমাদের মনে করতে হবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় বঙ্গবন্ধুকেই ১৯৭৫ সালে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে সপরিবারে। অলৌকিকভাবে তার দুইজন কন্যা বেঁচে যান যেহেতু তারা বিদেশে অবস্থান করছিলেন।
ড. সাদেকা হালিম বলেন, বিজয় মাস আমাদের সবার। বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানে চারটি স্তম্ভের কথা পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে৷ সেগুলো হচ্ছে- গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র,জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমাজতন্ত্র বলতে যেটি বুঝিয়েছেন সেটি হলো ন্যায্যতা।
তিনি আরও বলেন, নতুন প্রজন্মের মনে প্রশ্ন আসে ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে। বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। সংবিধানে যখন ধর্মনিরপেক্ষতার কথা লেখা হলো তখন অনেকে মনে করলেন এটি মনে হয় ধর্মহীনতা, বঙ্গবন্ধু মনে হয় ধর্মে বিশ্বাস করেন না। এটি আসলে ঠিক নয়। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক ইসলামিক সম্মেলনে তিনি অংশ নিয়েছেন,বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল তার।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ ছিল সকল আন্দোলনের সূতিকাগার। ১৯৪৭ এর দেশভাগ, দ্বি-জাতিতত্ত্ব ও পাকিস্তানের সেই যাত্রাটা এই উপমহাদেশকে একটা অন্ধকারের মধ্য দিয়ে ফেলে দিয়েছিল, বিশেষ করে পূর্ব বাংলার মানুষদের। সেখান থেকে জাগরণের চেষ্টা নানানভাবে ঘটেছে। আর এই জাগরণের জায়গাটাতে তরুণ সমাজ, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। এসব কিছু মিলে মিশে যে ইতিহাস সেই ইতিহাস নিয়েই ১৯৪৭ ও ১৯৭১। বাঙালি আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তিই ছিলেন বঙ্গবন্ধু।
তিনি আরও বলেন, উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বর্তমান সরকারের অবদান অনেক। এই অবদান যারা বিনষ্ট করে আমরা যেন তাদের কালো হাত ভেঙ্গে দিতে পারি। লড়াইটা বাইরের ও ভেতরের শত্রুদের বিরুদ্ধে হতে হবে এবং এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এই প্রক্রিয়া তরুণ প্রজন্মের মাঝে বহন করে নিতে হবে। আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তার নেতৃত্বে নানানভাবে প্রকাশ ঘটছে। আমরা যেন সেই ধারাবাহিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শবনম শারমিন লুনার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবীর চৌধুরী। আলোচনা সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন কলা অনুষদের ডীন এবং অনুষ্ঠান আয়োজক কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম।
সভায় আরও বক্তব্য রাখনে জবি ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহীম ফরাজী ও সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইন সহ প্রমুখ। সভা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। যার মধ্যে ছিল নাট্যকলা বিভাগের নাটক মঞ্চায়ন ও নৃত্য পরিবেশনা এবং সংগীত বিভাগের অংশগ্রহণে সংগীতানুষ্ঠান। পরবর্তীতে জবি আবৃত্তি সংসদ, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে বিভিন্ন পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডীন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপিকা রাণী সরকার। পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক,শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
এর পূর্বে মঙ্গলবার সকালে বিজয় দিবস উপলক্ষে চারুকলা বিভাগের আয়োজনে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় গাথা’ শীর্ষক আর্ট ক্যাম্প প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনের নিচতলায় আয়োজিত এই প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত।