Home শিক্ষা-ক্যাম্পাস শিক্ষকরা প্রস্তুত নন, তবু চার শ্রেণিতে চালু হচ্ছে নতুন কারিকুলাম
Disember ৭, ২০২৩

শিক্ষকরা প্রস্তুত নন, তবু চার শ্রেণিতে চালু হচ্ছে নতুন কারিকুলাম

চলতি বছরে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। আর আগামী বছরই, অর্থাত আর ২৪ দিন পর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম—এই চার শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম চালু হবে। কিন্তু শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি এখনো। তাই এই চার শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চলতি বছর তিন শ্রেণিতে এই কারিকুলাম চালু নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে শিক্ষা প্রশাসনকে। শিক্ষকেরা প্রশিক্ষণ পেলেও তা ততটা কার্যকর হয়নি। যারা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন (মাস্টার ট্রেইনার) তাদের প্রশিক্ষণও ভালো হয়নি। এ কারণে মাঠ পর্যায়ে এই কারিকুলাম সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণাও তৈরি হয়েছে। এছাড়া সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা, অভিভাবকদের গ্রেফতার, সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি এই কারিকুলাম সম্পর্কে আরও নেতিবাচক ধারণা তৈরি করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষা প্রশাসন বুঝিয়ে নয়, ভয় দেখিয়ে, জোর করে, সমালোচনাকারীদের মুখ বন্ধ করে এই কারিকুলাম বাস্তবায়ন করতে চায়।

শিক্ষক

বিশেষ এই কারিকুলামের মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে মোটাদাগে বেশির ভাগ অভিভাবক আপত্তি জানিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষা প্রশাসন এসব অভিযোগ আমলে না নিয়ে উলটো কোচিং ও নোট-গাইড মালিকদের দায়ী করেছেন। মামলা করেছেন। সতর্কবার্তা দিয়েছেন।

নতুন শিক্ষাবর্ষের ২৪ দিন বাকি। প্রশিক্ষণ এখনো দেওয়া হয়নি। আগামী ৯ ডিসেম্বর থেকে শিক্ষকদের দুই ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও গতকাল তা স্থগিত করে দেওয়া হয়। সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (এসইডিপি) আওতায় ডেসিমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম স্কিমের মাধ্যমে এই কার্যক্রম চলার কথা ছিল।

স্কিমের পরিচালক সৈয়দ মাহফুজ আলী বলেন, ‘৪ লাখ ২৫ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এতসংখ্যক শিক্ষকের নাম এসেছে, যা আমাদের পক্ষে যাচাই বাছাই করা সম্ভব নয়। এগুলো মাঠ পর্যায় থেকে যাচাই-বাছাই করে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যে আবেদন আসছে, তাতে শিক্ষকের সংখ্যা ৫ লাখেরও বেশি হবে। এবার আমরা এমপিও এবং ননএমপিও সব ধরনের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

ফলে এই প্রশিক্ষণ নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন। রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ সামনে নানা অনিশ্চয়তা থাকতে পারে। এ কারণে আরও আগে এই কারিকুলামের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত ছিল বলে জানিয়েছেন শিক্ষাবিদেরা। এছাড়া শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য বাজেট নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে।

প্রাথমিক-2309061428

অন্যদিকে আগামী বছরের প্রাথমিক স্তরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে নতুন কারিকুলামের বই আসবে। সেই বইয়ের ওপর জানুয়ারির আগে প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন না শিক্ষকেরা।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ) মাহবুবুর রহমান বিল্লাহ বলেন, ‘আমাদের কারিকুলামের প্রশিক্ষণ চলছে। তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে যে বইয়ের ওপর বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ, তা বই পাওয়ার পরই হবে। জানুয়ারি মাসে বই পাওয়ার পরই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যাবে।

তবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর দেখবে। আমরা দেড় হাজার মাস্টার ট্রেইনারকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তারাই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবে। এখন বাকি বিষয়গুলো দেখার দায়িত্ব প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের।’ ফলে কারিকুলামের শিক্ষক প্রশিক্ষণ পিছিয়ে থাকার বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক

শিক্ষকেরা বলছেন, কোনো ব্যাবহারিক বিষয়ে পাঠদানের ক্ষেত্রে ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত হওয়া উচিত সর্বোচ্চ ৩০:১। এর বেশি হলে একজন শিক্ষকের পক্ষে সামাল দেওয়া বা তদারক করা সম্ভব নয়। কিন্তু বাংলাদেশে এমন অনেক শ্রেণিকক্ষ আছে, যেখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৮০ থেকে ১০০ জন।  সেখানে এই কারিকুলাম বাস্তবায়নে সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকেরা।

কারিকুলাম নিয়ে কাজ করেন এমন শিক্ষকেরা বলছেন, কারিকুলাম ভালো। তবে এক লাফে তালগাছ ওঠার মতো। শিক্ষকদের পুরোপুরি প্রশিক্ষণ দিয়ে, মাঠ পর্যায়ে যাচাই-বাছাই ও সক্ষমতা যাচাই করেই চালু করা উচিত ছিল। যারা মাস্টার ট্রেইনার, তারা প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর কতটা সক্ষম হলেন সেটা যাচাই করা হয় না। ফলে তারা কোনো বিষয় ভালোভাবে না বুঝে কী প্রশিক্ষণ দেবেন তা সহজেই অনুমেয়।

২০২৪ শিক্ষাবর্ষে সারা দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ ছাত্রছাত্রীর হাতে বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭ কপি বই ছাপানো হচ্ছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের বই ১৮ কোটি ৬১ লাখ ১ হাজার ২০৬টি, প্রাথমিক স্তরের প্রায় ৯ কোটি ৫০ লাখ এবং ইবতেদায়ির বই  ২ কোটি ৭১ লাখ ৭৩ হাজার ১৩৫টি। নতুন কারিকুলামের কারণে প্রতি ক্লাসে ১০টি করে বই হওয়ায় এবার ৩ কোটি বই কম ছাপানো হচ্ছে। এবারও যথাসময়ে বই পাওয়া নিয়ে কিছু অনিশ্চয়তা রয়েছে। অনেক বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রকাশকদের বিলম্বে দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৫ সালে নতুন কারিকুলাম চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে চালু হবে। পর্যায়ক্রমে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে এই পদ্ধতি চালু হবে উচ্চমাধ্যমিকে।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *