Home ধর্মীয় সংবাদ আল-আকসা প্রাঙ্গণের সোনালী গম্বুজের রহস্য
নভেম্বর ২৮, ২০২৩

আল-আকসা প্রাঙ্গণের সোনালী গম্বুজের রহস্য

ডোম অব দ্য রকের আরবি নাম ‘কুব্বাতুস সাখরা’ বা পাথরের ওপর নির্মিত গম্বুজ। অনিন্দ্যসুন্দর মুসলিম স্থাপত্যটির নির্মাতা উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান। ডোম অব দ্য রকে নামাজ আদায়ের সুযোগ থাকলেও মূলত এটি কোনো মসজিদ নয়। এটি আল-আকসা কম্পাউন্ডেই অবস্থিত একটি স্থাপনা।

ধারণা করা হয়, পবিত্র মিরাজের রাতে নবী কারিম (সা.) যে পাথরের ওপর অবতরণ করেছিলেন তার ওপরই নির্মিত হয়েছে গম্বুজটি এবং সে অনুসারেই তার নাম ‘কুব্বাতুস সাখরা’ রাখা হয়েছে।

ঐতিহাসিক আল-আকসা মসজিদ থেকে এর দূরত্ব ২০০ মিটার। ইহুদি ধর্মবিশ্বাস অনুসারে ডোম অব দ্য রক নির্মিত হয়েছিল ‘সেকেন্ড টেম্বল’ (দ্বিতীয় হাইকালে সোলায়মানি)-এর স্থানে, যা ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমানরা ধ্বংস করেছিল এবং সেখানে জুপিটারের মন্দির স্থাপন করেছিল।

নির্মাণশৈলী
অষ্টভুজাকার ডোম অব দ্য রক মূলত ইসলামি ও বাইজান্টাইন স্থাপত্যরীতিতে নির্মাণ করা হয়, যা একটি কেন্দ্রীয় গম্বুজ দ্বারা আবৃত। এর ব্যাসার্ধ ২০ মিটার এবং উন্নত ড্রামের ওপর স্থাপিত। গম্বুজের সমর্থনে আছে চারটি স্তর ও ১২টি কলাম। চারপাশে ২৪টি পিয়ার ও কলামের একটি অষ্টাভুজাকার তোরণ আছে। বাইরের দেয়ালগুলো অষ্টভুজাকৃতির, প্রতিটির পরিমাপ প্রায় ১৮ মিটার প্রশস্ত এবং ১১ মিটার উঁচু।

নির্মাণের ইতিহাস
রোমান সম্রাট প্রথম কনস্টেটিন খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের পর খ্রিস্ট ধর্মবিশ্বাস অনুসারে ‘চার্চ অব দ্য হলি সেপুলচার’ নির্মিত হয় এবং ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে যখন খলিফা হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) জেরুজালেম জয় করেন, তখন শহরটি খ্রিস্টানদের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। তার জেরুজালেম আগমন উপলক্ষে পবিত্র আল-আকসা প্রাঙ্গণ ঐতিহাসিক মসজিদুল আকসা নির্মাণ করেন। এর কয়েক দশক পর পঞ্চম উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান ডোম অব দ্য রক নির্মাণ করেন। নির্মাণকাজ ৭২ হিজরি মোতাবেক ৬৯২ খ্রিস্টাব্দে শেষ হয়। এরপর বিভিন্ন শাসনামলে এর একাধিক সংস্কার হয়।

ধারণা করা হয় মেরাজের রাতে নবী কারিম (সা.) এই পাথরের ওপর অবতরণ করেছিলেন

 

সংস্কারের ইতিহাস
আব্বাসীয় আমলে ডোম অব দ্য রক একাধিকবার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তা সংস্কার করা হয়। ৮০৮ ও ৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে দুইবার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্থাপত্যটি। ১০১৫ খ্রিস্টাব্দে ভূমিকম্পে মূল গম্বুজ ধসে গেলে ১০২২-২৩ খ্রিস্টাব্দে তা পুনর্নির্মাণ করা হয়। ১০২৭-২৮ খ্রিস্টাব্দে স্মৃতিস্তম্ভটিতে মোজাইক লাগানো হয়। ১০৯৯ সালে ক্রুসেডাররা জেরুজালেম জয় করার পর তারা কুব্বাতুস সাখরাকে গির্জায় রূপান্তর করে।

২ অক্টোবর ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবি (রহ.) জেরুজালেম উদ্ধার করলে তা আবারও নামাজের স্থানে পরিণত হয়। তিনি গম্বুজের ওপর থেকে ক্রুশ সরিয়ে চাঁদ স্থাপন করেন এবং পাথরের চারপাশে কাঠের আবরণ দেন। জেরুজালেম শহরটি ১২৫০ থেকে ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মামলুক শাসকদের অধীনে ছিল। তারা ডোম অব দ্য রককে রাজকীয় স্থাপনার মর্যাদা দান করে।

আধুনিকায়ন
কুব্বাতুস সাখরার আধুনিকায়নে উসমানীয়দের অবদান বিশেষভাবে স্মরণীয়। সুলতান প্রথম সোলায়মানের সময় প্রায় সাত বছর ব্যয় করে স্থাপত্যটির বহির্ভাগ টাইলসে আচ্ছাদিত করা হয়। এ ছাড়া উসমানীয়রা অভ্যন্তরভাগ মোজাইক, ফাইয়েন্স ও মার্বেল দ্বারা সৌন্দর্য বর্ধন করে। ডোম অব দ্য রকের কারুকাজে সুরা ইয়াসিন, বনি ইসরাইল ও মারিয়ামের আয়াতের ক্যালিগ্রাফি ব্যবহার করা হয়।

১৮১৭ সালে সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ স্থাপত্যটিতে বড় ধরনের সংস্কার করেন। ১৯২৭ সালে ভূমিকম্পে তা আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৫৫ সালে আরব রাষ্ট্রগুলো এবং তুরস্কের অর্থ সহায়তায় জর্দান সরকার ডোম অব দ্য রকের সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে। ১৯৬৫ সালে গম্বুজের ওপর অ্যালুমিনিয়িাম ও ব্রোঞ্জের মিশ্রণের প্রলেপ দেওয়া হয়। ১৯৯৩ সালে গম্বুজের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য জর্দানের রাজা হুসাইন তার লন্ডনের বাড়ি বিক্রি করে ৮০ কেজি স্বর্ণ ব্যবহার করে প্রলেপ দেন।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *