Home বানিজ্য ইলিশ কেন ছোট হয়ে গেল, প্রশ্ন কক্সবাজারের জেলেদের
নভেম্বর ১৬, ২০২৩

ইলিশ কেন ছোট হয়ে গেল, প্রশ্ন কক্সবাজারের জেলেদের

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর ফিশারিঘাট মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে সকালে মাছ নিয়ে এসেছেন কয়েকজন জেলে। তাঁদেরই একজন সাব্বির আহমদ (৪৫)। তিনি নুনিয়াছটার শামশুল আলমের মালিকানাধীন একটি ট্রলারে কাজ করেন। মুখ ভার করে একদিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। জানতে চাইলে বলেন, ‘পাঁচটামাত্র ইলিশ পাইলাম, তাও ছোট ছোট। ওজন ৪০০-৪৫০ গ্রামের মতো। এবার ইলিশ যা ধরতেছি, সবই এই সাইজ। হঠাৎ কেন ইলিশ ছোট হয়ে গেল, বুঝতে পারতেছি না।’ সাব্বিরের ট্রলারে মাইট্যা, গুইজ্যা, চাপা ও কামিলা মাছ মোটামুটি ধরা পড়লেও ইলিশ পাননি তিনি। আর ইলিশ না পাওয়ায় খরচও তুলতে পারছেন না জেলেরা। এ জন্য সাব্বিরের মতো জেলেরা এখন লোকসান গুনছেন।
সাব্বির আহমদ বলেন, ৭ দিন আগে ট্রলার নিয়ে তাঁরা ২১ জন জেলে ৪০-৫০ কিলোমিটার দূরে সাগরে গিয়ে জাল ফেলেন। এই কয়েক দিনে পাঁচটি ইলিশসহ পাঁচ মণ মাছ ধরা পড়েছে। মাছ বিক্রি করে এক লাখ টাকার মতো পাওয়া গেলেও খাবার, জ্বালানিসহ ট্রলারে তাঁদের খরচ হয়েছে প্রায় তিন লাখ টাকা। ইলিশ ধরা না পড়ায় খরচই ওঠেনি। বঙ্গোপসাগরে এখন ইলিশ আহরণের ভরা মৌসুম চলছে। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ৩ নভেম্বর থেকে সাগরে নেমেছে ছোট–বড় কয়েক হাজার ট্রলার। কিন্তু জেলেরা ফিরছেন ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ছোট ইলিশ নিয়ে। তা-ও সংখ্যায় কম। এ কারণে এক লাখের বেশি জেলে এখন লোকসানে পড়েছেন। গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় ফিশারিঘাট মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, সাগর থেকে মাছ ধরে ঘাটে ফিরেছে ১৫-২০টি ট্রলার। কয়েকটি ট্রলারে অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের সঙ্গে কিছু ইলিশ দেখা গেছে। তবে পরিমাণে কম।
নতুন ফিশারিঘাটে মিজানুর রহমানের মালিকানাধীন একটি ট্রলারে ইলিশ ধরা পড়েছে ৮০০টি। কিন্তু ওজন ৪৫০ গ্রামের কম হওয়ায় দামও উঠেছে কম। তাতে হতাশ ট্রলারের জেলে আবদুল মালেক (৫০)। তিনি বলেন, সাগরে ছয় দিন তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ইলিশের নাগাল মেলেনি। যদিও শীতের শুরুতে সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে বড় ইলিশ ধরা পড়ার কথা। ইলিশ ধরা না পড়ায় পরিবারের খরচ দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মহেশখালীর শাপলাপুরের আবদুল শুক্কুরের মালিকানাধীন একটি ট্রলারে ধরা পড়েছে ১ হাজার ১০০টি ইলিশ। ফিশারিঘাটে ইলিশগুলো বিক্রি হয়েছে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকায়। ইলিশের ওজন ছিল ৪৫০ গ্রামের কম। ওজন ৮০০-৯০০ গ্রাম হলে ১ হাজার ১০০ ইলিশের দাম ১১ লাখ টাকার মতো হতো।
গতকাল বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ফিশারিঘাটের মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে ৪০ মণের বেশি ইলিশ বেচাবিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ ইলিশের ওজন ৪০০-৪৫০ গ্রাম, ১৫ শতাংশ ইলিশের ওজন ৬০০-৭০০ গ্রাম। আর মাত্র ৫ শতাংশ ইলিশের ওজন ৮০০-১০০০ গ্রাম। ৪৫০ গ্রামের কম ওজনের ইলিশ ৪৫০ টাকায়, ৫০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৭৫০-৮০০ টাকা, ৮০০-১০০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৯৫০-১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, গত ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ২২ দিনের জন্য সমুদ্রে ইলিশ আহরণ বন্ধ ছিল।
এ সময় মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে। ৩ নভেম্বর থেকে কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়াসহ জেলার অন্তত পাঁচ হাজার ট্রলার সাগরে নেমেছে ইলিশ ধরতে। কিন্তু চাহিদামতো ইলিশ ধরা পড়ছে না। বেশ কিছু ট্রলারে ইলিশ ধরা পড়লেও তা আকারে ছোট। এ কারণে দামও খুব বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। ইলিশ ধরা না পড়ায় হতাশ ফিশারিঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির কয়েক শ ব্যবসায়ী। এই সমিতির উপদেষ্টা ও ইলিশ ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বলেন, এখন ট্রলারের জালে যেসব ইলিশ ধরা পড়ছে, তার ৮০ শতাংশের ওজন ৪০০-৪৫০ গ্রাম। এত ছোট ইলিশের চাহিদা ঢাকার বাজারে নেই।
ইলিশের নাগাল না পাওয়া প্রসঙ্গে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা সবে শেষ হলো। সাগরে সব সময় বড় ইলিশ ধরা পড়বে, এমন নয়। বড় ইলিশের জন্য জেলেদের আরও কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে হবে। এখন ছোট ইলিশ ধরা পড়ছে কেন, তার কারণও কয়েক দিন পর বোঝা যাবে।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *