Home সারাদেশ জবি কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানেনা খোদ অভিযোগকারীরাই!
নভেম্বর ১৫, ২০২৩

জবি কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানেনা খোদ অভিযোগকারীরাই!

তৌকির আহমেদ, জবি প্রতিনিধি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে জমা দিলেও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কেউ৷ অভিযোগপত্রের নিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,শিক্ষার্থী,কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কথা লেখা থাকলেও অভিযোগ কি নিয়ে বা কবে তৈরী করা হয়েছিল এ বিষয়ে অবগত নয় কেউ।
 এভাবে সুস্পষ্ট কারো নাম উল্লেখ করা ছাড়াই অভিযোগ প্রেরণের বিষয়টিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদের মানক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা বলেও দাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। দীর্ঘদিন পর এসে হঠাৎ কেন এসব অভিযোগ উথ্বাপন করা হয়েছে সেই প্রশ্নও তাদের। মূলত কোষাধ্যক্ষ পদের দৌড়ে এগিয়ে যেতেই এহেন কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়েরও দুর্নাম হয়েছে দাবি অধিকাংশদের।
জানা যায়, গত ৯ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে গুঞ্জন উঠে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদের কথিত দুর্নীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এমন একটি অভিযোগপত্রের ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। কিন্তু অভিযোগপত্রের নিবেদনে সুস্পষ্ট কারো নাম ছিলনা। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে অধিকাংশ শিক্ষক,শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে পারে৷ অথচ অভিযোগের নিচে উল্লেখ করা ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষ থেকে এটি দেওয়া হয়েছে।
তবে বাস্তবতা ভিন্ন হওয়ায় বিষয়টিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট একটি পক্ষের ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন অনেকে। কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেতে মরিয়া হয়ে থাকা জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সুকৌশলে এমনটি করতে পারেন বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশদের। ইতিমধ্যেই ডজনখানেক বিবৃতি ও চিঠি দিয়ে নিজেদের মধ্য থেকে কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ কয়েকজন শিক্ষক।
এমনকি জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হকের মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগেও শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে নিজেদের মধ্যে থেকে উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে তোপের মুখে পড়ে সংগঠনটি। তাই কোষাধ্যক্ষ পদের দৌড়ে অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদকে বিতর্কিত করা ও তাকে পেছনে ফেলার জন্যই এই অপচেষ্টা বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষক,শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন,কোষাধ্যক্ষ স্যারের অনেক নিউজ দেখি৷ তিনি শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দেন সবসময় এটাই জানি৷ আলোচিত ওই অভিযোগপত্রটির বিষয়ে ফেসবুকে জানতে পারি৷ অভিযোগের নিচে শিক্ষার্থীদের কথাও লেখা। আমরাও শিক্ষার্থী। কিন্তু অভিযোগপত্রের কথা জানতামই না। আমি মনে করি বিষয়টিতে কোন স্বচ্ছতা নেই। সুস্পষ্ট নাম ছাড়া এগুলোর ভ্যালিডিটি কতটা। এখানে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মানক্ষুন্ন করা হয়েছে এতে আরও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বিষয়ে অনেক কথা শোনা যায়। কিন্তু ট্রেজারার স্যারের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছে কারা বা কবে এটা আমাদের জানাই ছিলনা। এমনকি অভিযোগপত্রটিও দেখিনি। ঢালাওভাবে সবার নাম ব্যবহার করে এভাবে অভিযোগ দেওয়ার মানে হয়না কোন। এতে দুর্বলতা প্রকাশ পায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের এক কর্মচারী এই প্রতিবেদককে বলেন,আমি গতকাল শুনেছি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কবে দিল বা কারা দিল জানিনা। কারণ আমাদের সাথে এ বিষয়ে কেউ কখনো কিছু বলেনি। নামে-বেনামে কত কিছুই করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রার বলেন, প্রধানমন্ত্রী দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছে সবাই মিলে এটা শুনছি গত কয়েকদিন ধরে৷ কিন্তু অভিযোগে কি লেখা বা আদৌ কতটা সঙ্গতিপূর্ণ সেটাই এখন প্রশ্ন। এটা লুকোচুরি করার মত। আমরাই জানিনা আমরা অভিযোগ দিলাম। বিষয়টি ভুয়া কিনা যাচাই করা দরকার। আর এতদিন পর এসে হঠাৎ অভিযোগের চিঠি চালাচালি কেন সেটাও তদন্ত করা দরকার।
কর্মকর্তা সমিতির এক নেতা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ হবে শিক্ষকদের মধ্যে থেকে। তাই শুধু শিক্ষকদের এ বিষয়ে আগ্রহ থাকতে পারে৷ কর্মকর্তাদের এই বিষয়ে জড়িত হবার প্রশ্নই আসেনা। কোষাধ্যক্ষ স্যার এমন কিছু করেননি যে তারা অভিযোগ তুলবেন। এই অভিযোগপত্রে কর্মকর্তাদের কথা উল্লেখ করে মূলত নোংরামির মধ্যেই কর্মকর্তাদের জড়ানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন,অভিযোগ কে বা কারা দিয়েছে এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। অভিযোগ সত্য কিনা সেটা তদন্ত করা যেতে পারে।
জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও কোন সাড়া পাওয়া যায় নি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, বিগত দুই-তিন বছর ধরে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটা সংস্কৃতি চালু হয়েছে যখন যার মেয়াদ শেষের দিকে থাকবে তখনই তাকে নানা ধরনের অপবাদ দেওয়া শুরু হয়। আক্রমণও করা হয় নানাভাবে৷ অথচ আগে এ বিষয়ে তেমন কিছুই শোনা যায়না। এতে করে মূলত বিশ্ববিদ্যালয়কেই ছোট করা হয়। এটি কোন সুষ্ঠু প্রবণতা নয়।
তিনি বলেন, যখন একজন ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য বা কোষাধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পান তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কতটুকু কি করেন সেটা শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই অবগত থাকেন৷ কোন ব্যত্যয় ঘটলে বা অনিয়ম হলে সেটি সাথে সাথেই সামনে আসার কথা, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরতরাই খতিয়ে দেখতে পারেন বিষয়টি। কিন্তু কার্যকাল শেষ হয়ে যাওয়ার আগমুহূর্তে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অপবাদ দেওয়া হয়। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই অপমানজনক।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *