অন্যের এনআইডির তথ্য হাতিয়ে প্রতারণা করতেন তারা
ফরিদপুরের রূপকুমার বৈরাগী ও রিগ্যান মণ্ডল কারও কাছে মানবাধিকার কর্মী, আবার কারও কাছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট কর্মকর্তা। এই পরিচয়ে চক্রটি ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন বস্তি ও নিম্ন আয়ের মানুষকে নানান আর্থিক সুবিধা দেওয়ার কথা বলে কৌশলে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও ছবি হাতিয়ে নিত। পরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে খোলা হতো অ্যাকাউন্ট। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কর্মকর্তা সেজে সেই অ্যাকাউন্টেই প্রতারণার টাকা সরিয়ে নিত এ চক্রের সদস্যরা।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য মাসে বা কয়েকমাস পর বাসা থেকে বের হয় চক্রটি। প্রতারণা করে এনআইডির হাতিয়ে নেওয়ার পরে সেবা চালুর নামে বিকাশের অ্যাপসে তাদের ছবিও তুলে নিত চক্রের সদস্যরা।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন— রূমকুমার বৈরাগী (২১) ও রিগ্যান মণ্ডল (২৩)। তারা ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন এলাকার দিলিপ কুমার বৈরাগী ও আনন্দ মণ্ডলের ছেলে। মিরপুরের মনিপুরে ৬১১/১ নম্বর বাসায় থাকতেন তারা। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৭টি সিম কার্ড ও ১২টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। যার অধিকাংশই অন্য মানুষের নামে নিবন্ধিত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শহিদুল ইসলাম বলেন, মানবাধিকার কর্মী পরিচয়ে ২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালীর পশ্চিম শাকপুরা এলাকার সীমা বড়ুয়ার (৪৪) এনআইডি কার্ড ও ছবি কৌশলে হাতিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য অ্যাকাউন্ট খোলে চক্রটি। পরে ওই শিক্ষিকার সঙ্গে প্রতারণার কাজে নম্বরটি ব্যবহার করে তারা। এ বিষয়ে প্রথমে সীমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। কিন্তু তার সংশ্লিষ্টতা না থাকায় তদন্ত নতুন করে শুরু করা হয়। পরে চক্রের মুল হোতাদের আটক করে পুলিশ।
প্রতারণার শিকার গৃহিনী সীমা বড়ুয়া বলেন, ২০২২ সালে অপরিচিত দুই ছেলে ও দুই মেয়ে বাসায় আসে। তারা জানান, সবাই মানবাধিকার সংস্থা থেকে এসেছেন। তারা মানুষের আর্থিক সহায়তার জন্য কাজ করেন। আমাদেরও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এর জন্য এনআইডি কার্ড এবং একটি ছবি উঠাতে হবে। এ সব নিয়ে তারা চলে যান এবং যাওয়ার সময় বলেন, কোনো প্রকার আর্থিক সাহায্য আসলে কল দিয়ে জানানো হবে। তিনি আরও বলেন, ‘এর কিছু দিন পর ওই নম্বরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্ট খুলতে গিয়ে বিপাকে পড়ি। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অফিস থেকে জানানো হয়, এই এনআইডি কার্ড দিয়ে আগেই অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এখন আর খোলা যাবে না। তবে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বাসায় পুলিশ আসে। এ সময় তারা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে বুঝতে পারি, প্রতারণার শিকার হয়েছি।’
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষিকা বলেন, গত ৩১ আগস্ট দুপুরে অজ্ঞাতপরিচয়ে এক ব্যক্তি ফোন করে নিজেকে মোবাইল ব্যাংকিং অফিসের কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেন। ওই ব্যক্তি বলেন, দোকানদারের অভিযোগের ভিত্তিতে আপনার ব্যবহৃত মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং এর অ্যাকাউন্ট চালু করতে চাইলে আপনার মোবাইলে ওটিপি কোড যাবে। সেটি জানালে চালু হয়ে যাবে। ওটিপি দেওয়ার পর অ্যাকাউন্টের সব তথ্য বলতে থাকে। এতে বিশ্বাস আরও বেড়ে যায়।
শিক্ষিকা শামীমা আক্তার আরও বলেন, ‘ওই প্রতারক বলেন, অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় আপনার হিসাব চালু করা সম্ভব না। এখনই চালু করতে হলে ১৫ হাজার ৩০০ টাকা থাকা লাগবে। তখন মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করতে অ্যাকাউন্টে টাকা রিচার্জ করি, সঙ্গে সঙ্গে কল কেটে দেয়। পরে অ্যাকাউন্টে ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। মোবাইল ব্যাংকিং এর কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া ব্যক্তির নম্বরও বন্ধ পাই। মোবাইল ব্যাংকিং এর কাস্টমর কেয়ারে কল দিয়ে জানতে পারি, অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। জানতে পারি অন্য একটি নম্বরে ১৫ হাজার ২৯৭ টাকা ক্যাশ আউট করা হয়েছে। তখন বুঝিতে পারি প্রতারণার স্বীকার হয়েছি।’
প্রতারণার বিষয়ে মিরপুর থানার ওসি মুহাম্মদ মহসীন সমকালকে বলেন, মামলার তদন্তে নেমে এ চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। তারা ফরিদপুর এলাকা থেকে প্রতারণা শিখেছে। পরে ঢাকায় এসে চক্রের সদস্যরা প্রতারণা শুরু করে বলে জানায়। তাদের চক্রের আর কোনো সদস্য আছে কী না সেটা খোঁজ করা হচ্ছে।