Home রাজনীতি অবরোধের দিনে এক চক্কর
নভেম্বর ১২, ২০২৩

অবরোধের দিনে এক চক্কর

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে রাজধানীসহ সারাদেশে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা চতুর্থ দফায় ৪৮ ঘণ্টার দেশব্যাপী অবরোধ প্রথম দিন ছিল আজ। তবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে অবরোধের তেমন প্রভাব দেখা যায়নি খুব একটা।

রোববার (১২ অক্টোবর) বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী-ডেমরা রোড, রামপুরা-ডেমরা রোড, রামপুরা ইউলোপ থেকে কাওরান বাজার এলাকায় গণপরিবহন, লেগুনা, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, রিকশা ও অটোরিকশার ব্যাপক উপস্থিত থাকলেও ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার তেমন একটা চোখে পড়েনি। এছাড়া এসব এলাকায় মানুষের ভিড় বা যানজট দেখা যায়নি।

367983658_1365224227446825_2936268084226530807_n

যানবাহন থাকলে তেমন যাত্রী দেখা যায়নি।

রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে উদ্বেগ থাকলেও রুটি-রুজির তাগিদে মানুষকে ঠিকই রাস্তায় বের হতে হয়েছে। তাদের একজন সামি খন্দকার বলেন, ‘দেশে টানা অবরোধ চলছে। আর প্রতিদিন ৪-৫টা করে বাসে আগুন লাগছে। আমাদের মতো অনেক মানুষ হতাহত হচ্ছেন। কিন্তু আমরা তো ঘরে বসে থাকতে পারি না। কারণ আমাদের জীবিকার তাগিদে বের হতে হচ্ছে।’

ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় যাত্রীর জন্য প্রায় ২০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছিলেন এক সিএনজি চালক। তিনি জানান, ‘সকালে অফিস টাইমে দম ফেলার অবস্থা থাকে না। আজ যাত্রীই পাচ্ছি না। রিকশা, সিএনজি সবই তো খালি। মানুষের খুব বেশি প্রয়োজন না থাকলে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।’

368792789_845201200416808_5620396510883682467_n

এদিকে, সকাল ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে ঢাকার গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন, কমলাপুর, খিলগাঁও, মৌচাক, মালিবাগ, বাড্ডা, গুলশান, মহাখালী এলাকা ঘুরে অবরোধের প্রভাব দেখা যায়নি খুব একটা। অন্যদিকে মিরপুর ১০, মিরপুর ২, মিরপুর ১, টেকনিক্যাল, কল্যাণপুর ও শ্যামলী এলাকায় যাত্রী ছিল কম। এসব রাস্তায় যেসব বাস রাস্তায় চলছিল, তার অনেক আসনই ছিল ফাঁকা।

বাস চালক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অবরোধ কেউই মানছে না, তাই আমরাও মানি না। গাড়ি নিয়ে বের না হলে পেটে ভাত জুটবে না। হয়তো গাড়ি পোড়ানোর ভয়ে যাত্রী বাসে উঠছে না। সবারইতো জীবনের মায়া আছে।’

সরেজমিনে দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে টহল দিচ্ছে পুলিশ। যেকোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রয়েছে বাড়তি নজরদারি। সার্বিক নিরাপত্তা জোরদারে ঢাকার আশপাশের জেলায়ও মোতায়েন করা রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য।

370124620_24383456297935134_8713713920994365709_n

অনেকে হেঁটে তাদের গন্তব্যে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে আওয়ামী লীগ ও দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে অবস্থান নিয়ে আছেন।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহাম্মদ মন্নাফি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়েতের চোরাগোপ্তা হামলা ঠেকানোর বিষয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে আছে। সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে দুষ্কৃতকারীদের ধরা হচ্ছে। বিএনপি বেশিদিন এভাবে চালাতে পারবে না। সন্ধ্যার পরেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাহারায় থাকার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।’

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (১১ নভেম্বর) রাত ৮টা থেকে ১২ নভেম্বর সকাল ৬টা (অবরোধের আগের রাত) পর্যন্ত মোট ৯টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা সিটিতে ৭টি, ঢাকা বিভাগে (গাজীপুর) ১টি, বরিশাল বিভাগে (বরিশাল সদর) ১টি যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৮টি বাস, ১টি পিকআপ পুড়ে যায়। এ আগুন নির্বাপণে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ১৯টি ইউনিট ও ১৯৩ জন জনবল কাজ করেছে।

396846217_713192397401840_4057101849045497065_n

অবরোধ শুরুর আগে গতকাল রাজধানীতে বাসে আগুন দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে পুলিশ হামলার অভিযোগ করে ২৯ অক্টোবর সারা দেশে হরতাল ডাকে দলটি। পরে সেই হরতালে সমর্থন জানায় জামায়াতে ইসলামী। একদিন বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত টানা তিনদিন সর্বাত্মক অবরোধ ডাকে দল দু’টি। পরে দ্বিতীয় দফায় ৫ থেকে ৬ নভেম্বর এবং তৃতীয় দফায় ৮ থেকে ৯ নভেম্বর অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি-জামায়াত। তৃতীয় দফা অবরোধের শেষদিন বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) বিকালে ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন করে রোববার (১২ নভেম্বর) ও সোমবার (১৩ নভেম্বর) টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *