মেয়ের মোবাইলে ফোন দিলাম, পুলিশ বলল থানায় আসেন
‘আমার সঙ্গে সাড়ে ১০টার দিকে কথা হয় মেয়ের। তখন তারা অক্সিজেন মোড়ে। এরপর অপেক্ষায় ছিলাম। সাড়ে ১১টার দিকে আবার ফোন করি। তখন পুলিশ ফোন ধরে বলে থানায় আসেন, গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করেছে।’
বলতে বলতে সবিতা দাশ কান্নায় ভেঙে পড়েন। হাটহাজারী থানার সামনে মোহাম্মদ হোসেন বীর প্রতীক মিলনায়তনের বারান্দায় বসে তিনি বিলাপ করছিলেন। পাশে সাদা জিপব্যাগে লাশের সারি।
দুর্ঘটনায় সবিতার মেয়ে রীতা দাশ (৩৫) ও তাঁর (রীতার) দুই ছেলে দীপ, দিগন্ত, দুই মেয়ে শ্রাবন্তী ও বর্ষা, রীতার ননাস চিনু দাশ (৪৫) ও ভাশুরের ছেলে বিপ্লব দাশ নিহত হয়েছে।
দাদির শ্রাদ্ধে যোগ দিতে সবাইকে নিয়ে চন্দনাইশ থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে ফটিকছড়ির মাইজভান্ডারের শাহনগরে বাপের বাড়ি যাচ্ছিলেন রীতা। পথে হাটহাজারীর চারিয়া এলাকায় বাসের সঙ্গে অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে রীতাসহ সাতজন মারা যান। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আহত হয় অটোরিকশার চালক বিপ্লব ও রীতাদের আরেক স্বজন বাপ্পা দাশ। দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহত রীতার দাদির শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন তাঁরা। শ্রাদ্ধ চলাকালে এই দুর্ঘটনার খবর পান মা সবিতা ও অন্যরা। পরে তাঁরা দ্রুত হাটহাজারী থানায় ছুটে যান।
সবিতা বলেন, ‘আমরা মেয়ের প্রতীক্ষায় ছিলাম। অন্য দুই মেয়ে আগেই বাড়িতে আসে। তারা বড় বোনের জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু সবাইকে একসঙ্গে হারালাম।’
রীতারা তিন বোন–দুই ভাই। ভাইয়েরা বিদেশে থাকেন। হাসপাতালে কথা হয় রীতার এক বোন রুনুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বড়দির ছেলে দুটি যমজ। বড় মেয়ে এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী। তাঁরা চারজনই সিএনজির পেছনে বসেছিলেন। আমার সঙ্গে ফোনে কথা হয় কয়েকবার। কিন্তু এক ধাক্কায় সব শেষ হয়ে গেল।’
রীতার শ্বশুরবাড়ি চন্দনাইশের কাঞ্চননগর বাদামতল এলাকায়। স্বামী নারায়ণ দাশ ওমানপ্রবাসী। একসঙ্গে পুরো পরিবারের মৃত্যুসংবাদ শুনে নারায়ণও বাড়ি আসার চেষ্টা করছেন বলে জানান শ্যালিকা দিয়া দাশ।
চন্দনাইশ থেকে নারায়ণের বড় ভাই বাবুল দাশও ঘটনাস্থলে আসেন। ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। চারদিকে স্বজনদের আহাজারি। কেবল আসতে পারেননি রীতার বাবা বাদল দাশ। তিনি যে বাড়িতে তখনো তাঁর মৃত মায়ের শ্রাদ্ধ করছিলেন।