Home জীবনযাপন দ্রব্যমূল্যের চাপে সাধারণ মানুষ
নভেম্বর ১, ২০২৩

দ্রব্যমূল্যের চাপে সাধারণ মানুষ

গৃহিণী রোকেয়া আক্তারের বসবাস রাজধানীর মধুবাগ এলাকায়। পাঁচজনের সংসারে স্বামী একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। মাসিক আয় ৩৫ হাজার টাকার মতো। বাসাভাড়া-খাওয়াসহ দুই সন্তানের লেখাপড়ার খরচও চালাতে হয় এই আয়ের মধ্যে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মধুবাগে ভ্রাম্যমাণ সবজির দোকানে কেনাকাটা করার সময় রোকেয়া আক্তার প্রথম আলোকে জানালেন, বছরখানেক আগেও তাঁর পরিবার প্রতি সপ্তাহে মাংস খেত। এখন মাসে এক থেকে দুইবারের বেশি মাংস খান না। তাঁর কথায়, ‘মাছ-মাংসের কথা বাদ দিলাম, এক কেজি আলু আর এক কেজি বেগুন কিনতে গেলেই ২০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। মুলার কেজি ৮০ টাকা। বাজারের অবস্থা বোঝানোর জন্য আর বেশি কিছু বলার নেই।’

এক বছর আগে মেসের ১৪ জনের জন্য আমাদের মাসিক খরচ হতো ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। এখন এই খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ থেকে ২৭ হাজার টাকা। কিন্তু আমরা যে আগের মতো মাছ-মাংস খেতে পারছি, তা নয়। আগে সপ্তাহে অন্তত ৩ বেলা মাংস খেলেও এখন মাঝেমধ্যে মাংস কেনা হয়।

জিয়াউল ইসলাম, বাংলামোটর এলাকায় মেসের বাসিন্দা

বছরের শেষ দিকে এসে রাজধানীতে বাস করা বেশির ভাগ সাধারণ মানুষের চিন্তা থাকে বাসাভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে। কিন্তু এবার সেই চিন্তার আগে বড় দুশ্চিন্তা হয়ে দেখা দিয়েছে বাজার খরচের চাপ। গত বছর থেকে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে। স্বল্প ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ বাজার খরচের চাপে নাকাল।

গতকাল রাজধানীতে বসবাসরত সাতটি পরিবার ও একটি মেসের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খাবার খরচ চালাতে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন। নানাভাবে কাটছাঁট করেও এখন আর সামলাতে পারছেন না। ধারদেনা করতে হচ্ছে। পরিস্থিতি অনেকের জন্য এতটাই খারাপ যে ইতিমধ্যে পরিবারের সদস্যদের গ্রামে পাঠিয়ে ঢাকায় একা থাকছেন।

তেজগাঁওয়ের ফল ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে আয়, তাতে দুই সন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকলে হাতে কিছু থাকে না। বাড়িতেও বাবা-মায়ের জন্য টাকা পাঠাতে পারি না। তাই এখন স্ত্রী-সন্তানদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। একা থাকার কারণে এখন নিজের খরচ বাদ দিয়ে ১৫ হাজার টাকার মতো বাড়িতে পাঠাতে পারি। ওই টাকা দিয়েই টানাটানি করে চলছে।’

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষ মাছ-মাংস কম খাচ্ছেন। ভাত ও আটার মতো খাবার খেয়ে পেট ভরাচ্ছেন। তাতে পেট ভরে বটে, কিন্তু পুষ্টির ঘাটতি থেকে যায়। ফলে তাঁদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যাধির বিরুদ্ধে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসছে।

ফারজানা আনজিন, উপপ্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা, ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতাল

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৬৩। কিন্তু খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আগস্ট মাসে এই হার ছিল আরও বেশি—১২ দশমিক ৫৪। খাদ্য মূল্যস্ফীতির এই হার সাড়ে ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশে উঠেছিল।

বাংলামোটর এলাকায় মেসের বাসিন্দা জিয়াউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক বছর আগে মেসের ১৪ জনের জন্য আমাদের মাসিক খরচ হতো ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। এখন এই খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ থেকে ২৭ হাজার টাকা। কিন্তু আমরা যে আগের মতো মাছ-মাংস খেতে পারছি, তা নয়। আগে সপ্তাহে অন্তত ৩ বেলা মাংস খেলেও এখন মাঝেমধ্যে মাংস কেনা হয়।’

নিত্যপণ্যের বাঁধা দর এক মাসেও কার্যকর হয়নি

বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে অনেকেই এখন বাড়তি আয়ের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। যেমন মগবাজারের হকার মো. মোস্তফা বাড়তি আয়ের জন্য স্ত্রীকে স্থানীয় বুটিকসে সেলাইয়ের কাজে দিয়েছেন।

ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতালের উপপ্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা ফারজানা আনজিন প্রথম আলোকে বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষ মাছ-মাংস কম খাচ্ছেন। ভাত ও আটার মতো খাবার খেয়ে পেট ভরাচ্ছেন। তাতে পেট ভরে বটে, কিন্তু পুষ্টির ঘাটতি থেকে যায়। ফলে তাঁদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যাধির বিরুদ্ধে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসছে।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *