Home সম্পাদকীয় পুলিশ হত্যার দায় কার? সমাবেশের অনুমতি ও দেহ তল্লাশির আইনী ভিত্তি
Oktober ২৯, ২০২৩

পুলিশ হত্যার দায় কার? সমাবেশের অনুমতি ও দেহ তল্লাশির আইনী ভিত্তি

ডিএমপির যুগ্ন কমিশনার বিপ্লব কুমার বললেন, জামাতের নিবন্ধন নাই তাদের সমাবেশ করার অনুমতির প্রশ্নই আসে না। জামাতের বিষয়ে জিরো টলারেন্স দেখাবেন তাঁর ডিএমপি ইত্যাদি ইত্যাদি। তিনি আরও বললেন, আল্লাহ আকবার স্লোগান জামাত দেয়, এটা নিষিদ্ধ স্লোগান ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমার মতে, তাঁর এসব কথা ডিএমপির গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে বলা সমীচীন হয়নি। তাঁর কথা থেকেই জামাত পুলিশের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বলে মনে হয়।
অপরদিকে ডিবি প্রধান জনাব হারুন অর রশিদের বক্তব্য যথেষ্ট কৌশলগত ও পরিপক্বতার লক্ষ্মণ দেখা যায়। যা জনাব বিপ্লব কুমারের বক্তব্যে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। জনাব বিপ্লব কুমারের বক্তব্য অনেকটাই অপেশাদার, শিশুসুলভ ও রাজনৈতিক।
পুলিশের বক্তব্য যেন রাজনৈতিক ভাষায় না হয় সেজন্য পুলিশকে আরও পেশাদারী হতে হবে, নইলে জনগনের ক্ষোপ ও জনরোষের কবলে এমন আরও দূর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশংকা থেকে যাবে।

সমাবেশের অনুমতি প্রসঙ্গে, সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’
সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ‘জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে :
তবে শর্ত থাকে যে, কোনো ব্যক্তির উক্তরূপ সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার কিংবা উহার সদস্য হইবার অধিকার থাকিবে না, যদি
(ক) উহা নাগরিকের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়;
(খ) উহা ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ, জন্মস্থান বা ভাষার ক্ষেত্রে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়;
(গ) উহা রাষ্ট্র বা নাগরিকদের বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বা জঙ্গি কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; বা
(ঘ) উহার গঠন ও উদ্দেশ্য এই সংবিধানের পরিপন্থী হয়।
সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ‘চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।’
(১) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে
(ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের এবং
(খ) সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।’

মোবাইল চেক ও দেহ তল্লাশি নিয়ে আইনের ভাষায় বলা হয়েছে, ’গোপনীয়তা একজন ব্যক্তির সংবিধান স্বীকৃত অন্যতম একটি মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৩ এ এই অধিকারটি নিশ্চিত করা হয়েছে।‘’

‘’মুঠোফোনে মানুষের ব্যক্তিগত ও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা, তথ্য বা ছবি থাকতে পারে, যা ঘাঁটাঘাঁটি করা একজন ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকারের চরম লঙ্ঘন। এছাড়াও একজন ব্যক্তির গোপনীয়তার সাথে তার মর্যাদার সম্পর্ক জড়িত,‘’

‘’মোবাইল ফোন পুরোপুরি একজনের ব্যক্তিগত একটি যন্ত্র। আদালতের আদেশ ছাড়া কোনভাবেই সেটা সার্চ করার এখতিয়ার কারও নেই। কারণ এই ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার তাকে বাংলাদেশের সংবিধানে দেয়া হয়েছে।‘’

তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে বহুদিন যাবৎ ব্রিটিশ আমলের আইন অনুসরণ করে করা হলেও ২০০৩ সালে হাইকোর্ট বিনা পরোয়ানায় (৫৪ ও ১৬৭ ধারায়) গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের ক্ষেত্রে ১৫টি নির্দেশনা জারি করেন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের এপ্রিলে কিছু সংশোধন সাপেক্ষে সুপ্রিম কোর্ট সেই আদেশ বহাল রাখেন।

সেখানে বলা হয়েছে, কোন পুলিশ কর্মকর্তা সন্দেহের বশে কাউকে তল্লাশি করা দরকার মনে করলে সেটা ডায়রিতে লিপিবদ্ধ করে সাক্ষীর উপস্থিতিতে করবেন। কিন্তু সেটা শুধুমাত্র দেহ তল্লাশির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মোবাইলের ভিতরে কার কার ছবি আছে তা দেখার অনুমতি পুলিশের নেই।

‘’মোবাইল হচ্ছে খুব পার্সোনাল একটি গ্যাজেট, যেটা মালিকের পারমিশন ছাড়া ধরার কারও আইনগত এখতিয়ার নেই। যদি কোন মামলার অংশ হিসাবে মোবাইল ফোন আদালতে উপস্থাপন করা হয়, তখন আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তকারী ব্যক্তিরা সেটা দেখতে পারবে। এছাড়া আর কোন সুযোগ নেই। ‘’

‘’আমাদের সংবিধানে নাগরিকদের ব্যক্তিগত যোগাযোগের গোপনীয়তার যে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে, সেটার গুরুতর লঙ্ঘন। একপ্রকার ফৌজদারি অপরাধের মধ্যেও পড়ে,’’
পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোবাইল ফোন দেখতে চাইলে যেকোনো নাগরিক তাতে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন। কারণ আইন অনুযায়ী, আদালতের নির্দেশ ছাড়া তারা সেটা করতে পারেন না।

সমাবেশের অনুমতি নিতে পুলিশের কাছে আবেদন করতে হবে এমন কোন আইন এদেশে নেই, যেটা করা হয় সেটার আইনী কোনো ভিত্তি নেই। কোনো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন থাকুক বা নাই থাকুক জম্ম সুত্রে বাংলাদেশী নাগরিক হলেই সে সমাবেশ করার অনুমতির সাংবিধানিক অধিকার নিয়েই জম্ম নিয়েছি আমরা। নতুন করে সমাবেশের অনুমতি নেওয়া ও অনুমতি চাওয়াটা আইনে বাধ্যবাধকতা নেই।

জামাতকে অনুমতি দিবেই না ডিএমপি, জামাতকে অনুমতির প্রশ্নই ওঠে না, জামাত নিয়ে ডিএমপি জিরো টলারেন্স থাকবে, জামাত মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি” এসকল অপেশাদার বক্তব্য থেকে ক্ষোভ তৈরী হয়েছে, সেই ক্ষোভের লাভায় জীবন গেলো একজন পুলিশের, এটা অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত।

নিহত ঐ পুলিশ সদস্যের উপরে হামলার ভিডিও দেখে বুঝা গেলো, ২০০৬ সালে একইভাবে মুজাহিদ নামক শিবির কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করেছিলো আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। সেই হত্যা যেমন অনাকাঙ্ক্ষিত ছিলো, গতকালের ঘটনাও অনাকাঙ্ক্ষিত ছিলো। হত্যার রাজনীতি থেকে শান্তি সুবাতাস কখনই আসে না। যেকোনো হত্যাকান্ডই অনভিপ্রেত।

রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশকে আরও দায়িত্বশীল ও পেশাদার মনোভাব বজায় রাখতে হবে। তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাণহানী থেকে রক্ষা পাবে এদেশ। কাউকে উস্কে দেবার মত বক্তব্য না দেওয়াই পেশাদারীত্ব।

আব্দুল কাদের
সম্পাদক, ভয়েস অফ বাংলাদেশ।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *