Home বানিজ্য সব সূচক নেতিবাচক
Oktober ২১, ২০২৩

সব সূচক নেতিবাচক

ব্যাংক খাতে আমানত প্রবাহ বৃদ্ধি ছাড়া অন্য সব সূচকে নেতিবাচক অবস্থা বিরাজ করছে। এতে সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলোর দুর্বলতা প্রকট হচ্ছে। আয় কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে ঋণ আদায় কমে যাওয়ায় বেড়ে যাচ্ছে খেলাপি। সঙ্গে বাড়ছে প্রভিশন ঘাটতি। ফলে ব্যাংকগুলোর মূলধন সংরক্ষণের হার কমে যাচ্ছে। সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহেও লাগাম পড়েছে। ডলার সংকটে ব্যাংকগুলো দেড় বছর ধরে হাবুডুবু খাচ্ছে। এ সংকট আরও প্রকট হয়েছে। আমানত প্রবাহ বাড়লেও সেই তুলনায় ঋণ প্রবাহ বেশি বেড়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোতে তারল্য ব্যবস্থাপনায় সংকট তৈরি করেছে। ব্যাংক খাতের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, কয়েকটি ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ সহায়তার আওতায় বাড়তি তারল্যের জোগান দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে ব্যাংকগুলোতে তারল্য প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া ব্যাংক গ্রাহকদের আমানত প্রবাহও বেড়েছে। এতে সার্বিকভাবে তারল্য প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। গত অর্থবছরে আমানত বেড়েছিল ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ। এর বিপরীতে ঋণ বেড়েছিল ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। আমানতের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে ঋণ প্রবাহ। চলতি অর্থবছরের গত জুলাই-আগস্টে আমানত বেড়েছে ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ। এর বিপরীতে ঋণ বেড়েছে ১৪ শতাংশ। অর্থাৎ এবারও আমানতের চেয়ে ঋণ প্রবাহ বেশি হচ্ছে।

প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী আমানতের চেয়ে ঋণ প্রবাহ কম থাকতে হয়। আমানতের ৫ থেকে ১৩ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হয় আমানতকারীদের নিরাপত্তার জন্য। বাকি অর্থের মধ্যে কমপক্ষে ৩ শতাংশ নিজেদের কাছে রাখতে হয় চলতি লেনদেন নিষ্পত্তি করতে। ফলে ব্যাংকগুলো ৮৬ থেকে ৯২ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারে। কিন্তু প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, কিছু ব্যাংক আমানতের চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। ফলে তারা ঘাটতিতে রয়েছে। এতে ব্যাংক খাতে তারল্য ব্যবস্থাপনায় বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে।

তারল্য ব্যবস্থাপনায় চাপ, সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি ও বাজারের চাহিদা কমায় চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় নিট ঋণ বিতরণ কমেছে ৪ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে ঋণ বেড়েছিল প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর আয় কমে গেছে। অন্যদিকে ব্যয় বেড়েছে। ব্যাংকগুলোর প্রধান আয় হয় সম্পদ বা ঋণ থেকে। সুদ বা মুনাফা বাবদ আয়ই প্রধান। কিন্তু এ খাত থেকে আয় কমছে। মূলত ঋণ আদায় কম হওয়ায় এ খাত থেকে আয় কমেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর সম্পদ বা ঋণ থেকে সুদ বাবদ আয় ছিল ১০০ টাকায় ৬২ পয়সা। গত মার্চে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১০০ টাকায় ৩৯ পয়সা। ব্যাংকগুলোর মূলধন থেকে আয় গত ডিসেম্বরে ১০০ টাকায় ছিল ১০ টাকা ৬৭ পয়সা। মার্চে তা কমে ১০০ টাকায় আয় দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৮২ পয়সা। সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলোর আয় কমায় নিট মুনাফা কমে গেছে। ফলে মুনাফা থেকে সংরক্ষিত তহবিলে অর্থ স্থানান্তর বাড়ানো যাচ্ছে না। এতে মূলধন বাড়ানোর হার কমে গেছে। এদিকে ঋণ আদায় কম হওয়ায় বা ঋণের বিপরীতে সুদ আদায় কম হওয়ায় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের হারও বেড়ে গেছে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণের হার কমে গেছে। গত ডিসেম্বরে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে মূলধন পর্যাপ্ততা ছিল ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। মার্চে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ। যদিও ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে কমপক্ষে ১০ শতাংশ মূলধন রাখতে হয়। এ হিসাবে বেশি থাকলেও সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলো বর্তমানে ঝুঁকিতে। এ কারণে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে মূলধন ১২ শতাংশ রাখা প্রয়োজন।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ২০২২ সালের একই সময়ে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। গত জুনে তা আরও বেড়ে ১০ দশমিক ১১ শতাংশ হয়েছে। গত বছরের জুনে ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। গত জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। প্রভিশন ঘাটতি গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৩ হাজার ২২০ কোটি টাকা। গত জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ৮২ শতাংশ। এ ঘাটতি বাড়ায় ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ বাড়ছে।

সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতে মিশ্র প্রবণতা দেখা দিয়েছে। খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। এর বিপরীতে প্রভিশন ঘাটতিও বেড়েছে। এতে বাড়ছে মূলধন ঘাটতি। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মূলধন নেই। তারা ৪০ শতাংশ নেতিবাচক মূলধনে রয়েছে। সরকারি ব্যাংকগুলোও ৬ শতাংশ ঘাটতিতে রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি, সাম্প্রতিক সময়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মন্দা, আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার জন্য অতিরিক্ত হুমকির সৃষ্টি করেছে। সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলোতে মিশ্র প্রবণতা রয়েছে। এ সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার বেশ কিছু প্রণোদনামূলক কর্মসূচি নিয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশ্যোধন করে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। উচ্চ খেলাপি ঋণ রয়েছে ওইসব ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে খেলাপি ঋণ কমাতে বলা হয়েছে। দুর্বল ব্যাংকগুলোর সার্বিক অবস্থা নিবিড়ভাবে তদারকি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণ আদায়, ঋণ বিতরণের ও সুপারভিশন ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীণ অডিট ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা ও বৈশ্বিক মন্দার কারণে দেওয়া ঋণ পরিশোধে শিথিলতা তুলে নেওয়া ও দুর্বল ব্যবসায়িক কার্যক্রমের কারণে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ব্যাংকগুলোর মূলধন পর্যাপ্ততা স্থিতিশীল থাকলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কমেছে। ব্যাংক খাতে বেসরকারি ব্যাংকের মার্কেট শেয়ার সবচেয়ে বেশি। ফলে এ খাতে মূলধন পর্যাপ্ততা কমায় সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতের নেতিবাচক অবস্তা প্রতিফলিত হচ্ছে বলে অনেকেই মনে করেন।

এদিকে চড়া মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। একই সঙ্গে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর খাতে টাকার প্রবাহ বাড়াচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ তহবিলের টাকা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিচ্ছে কম। ফলে এর প্রভাবও কম। এছাড়া ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো বৈদেশিক বাণিজ্য কমিয়ে দিয়েছে। রেমিট্যান্স কমায় ব্যাংকে তারল্য প্রবাহ কমছে। সরকারের রাজস্ব আয় আগের তুলনায় কমায় সরকারি খাতের তারল্যও কমেছে। অন্যদিকে সরকারি ব্যয় বেড়েছে। এতে সরকারি আমানত কমেছে।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *