বিএনপি’র সমাবেশ নয়াপল্টনে জনস্রোত
সরকারের পদত্যাগসহ নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার একদফা দাবিতে বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বড় ধরনের জনসমাবেশ করেছে বিএনপি। এতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর স্বতঃস্ফূর্ত সমাগম ঘটে। সাধারণ মানুষকেও অংশ নিতে দেখা গেছে। ছিলেন বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারাও। বিএনপির মতে, স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জনসমাবেশ এটি। আগের রাতে পুলিশের কড়াকড়ির পর সকাল ৮টা থেকেই নয়াপল্টনে আসতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরুর অনেক আগেই নয়াপল্টনসহ আশপাশের এলাকা লোকারণ্য হয়ে যায়। একদিকে মতিঝিলের শাপলা চত্বর মোড়, অন্যদিকে মৎস্যভবন, আরেকদিকে পল্টনের মোড় পর্যন্ত নেতাকর্মীদের ঢল নামে। মূল সড়কে জায়গা না পেয়ে আশপাশের অলিগলিতে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। এই কর্মসূচিতে ঢাকা মহানগরসহ আশপাশের জেলার নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
জনসমাবেশ উপলক্ষ্যে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পাঁচটি ট্রাক দিয়ে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। সেখান থেকেই কেন্দ্রীয় ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। সকাল থেকেই নয়াপল্টনে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন। অনেকের মাথায় দেখা যায় লাল-সবুজসহ বিভিন্ন রঙের ক্যাপ। দুপুর ১২টার মধ্যে নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে দুপাশের সড়ক কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। তবে সকালে আসা নেতাকর্মীদের বেশিরভাগই ছিলেন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা। নেতারা জানান, জনসমাবেশের জন্য রাজধানীতে আগে থেকেই বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মী অবস্থান করছিলেন। তারাই মূলত ভোর থেকে নয়াপল্টনমুখী হন। তবে আশপাশের জেলা থেকে আসা নেতারা জানান, তাদের অনেককে ঢাকার প্রবেশপথে বাধা দেওয়া হয়েছে। এদিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদীসহ ঢাকা বিভাগীয় জেলার বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা যায়। নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে অস্থায়ী মঞ্চ থেকে জাসাসের উদ্যোগে গান পরিবেশন করা হয়।
দুপুর দুইটার দিকে কুরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় মহাসমাবেশ। এ সময় নেতাকর্মীদের সরকারবিরোধী নানা স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে নয়াপল্টন এলাকা। এদিকে জনস্রোতের কারণে নাইটিংগেল মোড় থেকে মতিঝিল, পল্টন, দৈনিক বাংলা পর্যন্ত সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর ১২টার দিকে গাজীপুর থেকে আসা বিএনপি কর্মী করিম হাওলাদার বলেন, ‘জনসমাবেশে এত এত লোকসমাগম হবে আগে থেকে ধারণা করা যায়নি।’
নরসিংদী থেকে আসা যুবদলের আরিফুল রহমান বলেন, ‘এ আন্দোলন আমাদের জীবন-মরণ লড়াই। তাই নির্যাতন-হামলা-মামলা সত্ত্বেও রাজপথ ছেড়ে যাব না। এবার সরকারের পতন হবেই।’
নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মঞ্চে কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্যের সময় উলটোদিকে ভাসানী ভবনের সামনে রিকশায় বসে অনেকেই তা শুনছিলেন। তাদের মধ্যে রকিবুল ইসলাম নামের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি বিএনপির রাজনীতি করি না। প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম এখন আকাশছোঁয়া। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিএনপি পরিবর্তনের ডাক দিয়েছে, তাই তাদের কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি।’
জনসমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকার সড়কের মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয় বিএনপির সমাবেশ।