আজ সাকিবের জ্বলে ওঠার দিন!
বাংলাদেশ দলের সেরা তো বটেই; সাকিব আল হাসান বিশ্বেরই অন্যতম সেরা তারকা। ভারতের মাটির ২০২৩ বিশ্বকাপটাও খেলতে নেমেছেন ওয়ানডের এক নম্বর অলরাউন্ডার হিসেবেই। ব্যাটে-বলে বড় ভরসার পাশাপাশি বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্বও তার কাঁধেই। তবে এবারের বিশ্বকাপে এখনো পর্যন্ত নিজের সেরা-রূপটা দেখাতে পারেননি সাকিব। বল হাতে ৩ ম্যাচে ৫ উইকেট নিলেও ব্যাট হাতে খেলেছেন ১৪, ১ ও ৪০ রানের ইনিংস। ব্যাটিং পরিসংখ্যানটা সাকিবের নামের সঙ্গে ঠিক মানানসই নয়।
এরপরও আজকের ম্যাচ সামনে রেখে মনের কোণে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—আজ কি সাকিবের জ্বলে উঠার দিন! আজ যে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত। হ্যাঁ, প্রতিপক্ষ ভারত বলেই সাকিবকে নিয়ে আশাটা বেশি। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার মুখোমুখি সাক্ষাতের পরিসংখ্যানই সাকিবকে নিয়ে আশার ছবি আঁকতে উদ্বুদ্ধ করছে।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচটি খেলার পর সাকিবকে চোট শঙ্কা পেয়ে বসেছিল। তবে আশার কথা, পরশু দলের হয়ে অনুশীলন করেছেন অধিনায়ক সাকিব। দলের পক্ষ থেকে কোনো কিছু নিশ্চিত না করা হলেও আশা করা যায়, সাকিব আজ অবশ্যই খেলবেন। আর খেললে ব্যাট কিংবা বল বা দুটোতেই তাকে স্বরূপে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ভারতের বিপক্ষে সাকিব মানেই যে আশার প্রদীপ। বড় তারকা হিসেবে সাকিব এমনিতেই ‘বড় ম্যাচের’ খেলোয়াড়। প্রতিপক্ষ ভারত হলে তাকে নিয়ে আশাটা আরও বড় হয়ে উঠে। অতীত পরিসংখ্যানে অবশ্য সেটারই প্রতিফলন। ওয়ানডে ক্রিকেটে ভারতের বিপক্ষে মোট ৪০ বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। তার মধ্যে ৩১টিতে জিতেছে ভারত, বাংলাদেশ জিতেছে ৮ ম্যাচে। অন্য ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়েছে। তো ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৮ জয়ের ৭টিরই অংশীদার সাকিব।
শুধু ২০০৪ সালে জেতা প্রথম জয়টিতেই সাকিব ছিলেন না। পরের ৭ জয়েই মাঠে ছিলেন সাকিব। শুধু অংশীদার নয়, ভারতের বিপক্ষে ঐ ৭ জয়েই বড় অবদান রেখেছেন সাকিব। কোনোটিতে ব্যাট হাতে বড় ভূমিকা রেখেছেন তো, কোনোটিতে বল হাতে। কোনোটিতে ব্যাট-বল দুভাবেই নিজের ছোঁয়া লাগিয়েছেন সাকিব। বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ৪ সাক্ষাতের যে একটিতে জিতেছে বাংলাদেশ, ২০০৭ বিশ্বকাপের সেই জয়েও বড় অবদান ছিল সাকিবের। ৫ উইকেটের জয়ের পথে ব্যাট হাতে খেলেছিলেন ৫৩ রানের কার্যকরী এক ইনিংস।
ত্রিনিদাদের পোর্ট অব স্পেনের কুইন্স পার্ক ওভালের সেই জয়টি ছিল ওয়ানডেতে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় জয়। সাকিবের ৭ জয়ের প্রথম। এর পরের ৬টি জয়েও সামনে সাকিব কোনো না কোনোভাবে অবদান রেখেছেন। ভারতের বিপক্ষে নিজের ৭ জয়ে সাকিব ব্যাট হাতে খেলেছেন যথাক্রমে ৫৩, ৪৯, ৫২, ৫১, ২৯, ৮ ও ৮০ রানের ইনিংস। মোট করেছেন ৩২২ রান। সঙ্গে উইকেট নিয়েছেন ১০টি। দুই বার পেয়েছেন ম্যাচ-সেরার পুরস্কার। একবার দেখিয়েছেন ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্বও। যে ম্যাচে তিনিই ছিলেন ‘জনতা’র ম্যাচসেরা।
আশার কথা হলো, ভারতের বিপক্ষে সাকিব ছোঁয়ার ৭ জয়ের সর্বশেষ জয়টা দুই দলের সর্বশেষ সাক্ষাতে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর, এশিয়া কাপে। মজার ব্যাপার হলো, কলম্বোতে ভারতের বিপক্ষে জয়ের ঘোষণা দিয়েই নেমেছিলেন সাকিব! সুপার ফোর পর্বে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে ফাইনালের দৌড় থেকে ছিটকে পড়া বাংলাদেশের জন্য কলম্বোর সেই ম্যাচটি ছিল আনুষ্ঠানিকতার। এমন গুরুত্বহীন ম্যাচে কী চাওয়ার থাকতে পারে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অধিনায়ক সাকিব বেশ দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেছিলেন, চাওয়ার আছে—জয়। তিনি সরাসরিই বলেছিলেন, ‘ভারতের বিপক্ষে জিতেই দেশে ফিরতে চাই।’ নিজের সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে সাকিব নিজেই ব্যাটে-বলে জ্বলে উঠে দলকে পাইয়ে দেন ৬ রানের জয়। ব্যাট হাতে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮০ রানের ইনিংস খেলার পর বল হাতে নেন ১ টি উইকেট।
ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে সাকিবের সামগ্রিক পরিসংখ্যানও তার হয়েই কথা বলে। ভারতের বিপক্ষে মোট ২২টি ওয়ানডের ২১ ইনিংসে ব্যাট করে সাকিব করেছেন ৭৫১ রান, উইকেট নিয়েছেন ২৯টি। কাজেই পরিসংখ্যানের আলোকে আশার ছবি আঁকাই যায়—পুনেতে আজকের দিনটি হতে পারে সাকিবের!