Home বিশ্ব বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের ঝড়
Oktober ১৯, ২০২৩

বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের ঝড়

অভিশপ্ত ইহুদিদের হাতে অবরুদ্ধ গাজার আল-আহলি আরব হাসপাতালে ইসরাইলি বিমান হামলায় প্রায় ৫শ’ মানুষ নিহতের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে বিশ্বের মানবতাবাদী মানুষ। আমেরিকা থেকে জাপান এবং বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে বর্বর ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে। লাগাতার হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন দেশটির বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে এসে প্রাণ হারিয়েছেন। ৩২৪ জন আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহতের সংখ্যা অনেক হওয়ায় চিকিৎসা সরঞ্জামাদির ঘাটতিতে নিহত বাড়তে পারে। যদিও এই ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততা নেই অস্বীকার করে ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদী গোষ্ঠীর ব্যর্থ রকেট উৎক্ষেপণকে দায়ী করছে ইসরাইলি বাহিনী। মঙ্গলবার রাতে গাজায় হামলা হওয়ার সময় হাসপাতালে অনেক রোগী ভর্তি ছিলেন। ইসরাইলি বিমান হামলা থেকে বাঁচতে নিরাপদ ভেবে হাসপাতালে আশ্রয়ও নিয়েছিলেন অনেক নারী ও শিশু। কিন্তু প্রাণে বাঁচতে পারেননি তারা। বিবিসি জানিয়েছে, জায়গায় জায়গায় মানুষের লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। উদ্ধার করার মতো লোকের সঙ্কট দেখা দেয়।
এদিকে গত অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলায় এযাবৎ ৩০২ জন সেনা সদস্যসহ ১৪০৩ ইসরাইলি প্রাণ হারিয়েছে। এদিকে বর্বর ইহুদিদের পাল্টা হামলায় এ যাবৎ ৩ হাজার ৪৭৮ জন ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তারা জানায়, নিহতদের ৭০ ভাগ শিশু, নারী ও প্রবীণ নাগরিক। ১২ হাজার আহত হয়েছেন এবং এখনও ৬শ’ শিশুসহ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন ১৩ হাজার ফিলিস্তিনি। গতকালও গাজার উত্তরে ইসরাইলের বিমান হামলায় ৩৭ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। ইসরাইল সূত্রে জানা গেছে, হামাসের হাতে যুদ্ধবন্দি হিসেবে আটক রয়েছে বিদেশিসহ ২৫০ জন ইহুদি।
ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি সঙ্গীন হওয়ার প্রেক্ষিতে মিসরের সীমান্ত পথে গাজায় ত্রাণসামগ্রী প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরাইল। তবে তারা বলেছে, ইসরাইলের পথে কোনো ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে না। এছাড়া মিসর জানিয়েছে, তাদের দেশের মধ্যদিয়ে গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করলেও তারা কোনো শরণার্থী গ্রহণ করবে না। ওদিকে গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতি মূল্যায়ন ও যুদ্ধবিরতির ব্যবস্থা করার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া ও আরব আমিরাত।
হাসপাতালে ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরোচিত বিমান হামলায় নিহতদের জন্য ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস মঙ্গলবার তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছেন। তিনি দেশের নিহত সকল শহীদদের জন্য জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে নির্ধারিত বৈঠকও বাতিল করে দিয়েছেন।
ইতিহাসের চরম ন্যাক্কারজনক এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। তবে ফিলিস্তিনিদের ওপর নিপীড়ন, নির্যাতন, গণহত্যায় নিজেদের জারজ রাষ্ট্রকে সমর্থন দিতে গতকাল ইসরাইলে উড়ে এসে নৃশংসতার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি দাবি করলেন, গাজার আল-আহলি হাসপাতালে ইসরাইল নয়, বরং হামলা চালিয়েছে অন্য কেউ। তার সফরে আম্মানে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ-২ ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাত্তাহ আল-সিসির সাথে বৈঠকের কথা থাকলেও হাসপাতালের ওপর বর্বর আক্রমণের প্রতিবাদে এসব বৈঠক বাতিল করা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘গাজার আল আহলি আরব হাসপাতালে বিস্ফোরণ ও এতে ব্যাপক প্রাণহানিতে আমি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও গভীরভাবে দুঃখিত। এ খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আমি জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ ও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছি আর প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছে সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে আমরা জাতীয় নিরাপত্তা দলকে নির্দেশ দিয়েছি’। ‘যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ চলাকালে বেসামরিক জীবনের সুরক্ষার পক্ষে দ্ব্যর্থহীনভাবে দাঁড়িয়েছে। এ শোচনীয় ঘটনায় নিহত রোগী, চিকিৎসা কর্মী ও অন্য নিরপরাধ লোকজনের জন্য শোক জানাই।’
হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিভিন্ন দেশ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে যার শীর্ষে রয়েছে সউদী আরব। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, সউদী আরব তীব্রভাবে এ নৃশংস হামলা প্রত্যাখ্যান করে, যা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনসহ সমস্ত আইন ও নিয়মের স্পষ্ট লঙ্ঘন। মন্ত্রণালয়টি বিবিধ আন্তর্জাতিক আবেদন সত্ত্বেও বেসামরিকদের ওপর চলমান আক্রমণ বন্ধ না করায় ইসরাইলের প্রতি নিন্দা জানায়। গাজায় অবরুদ্ধ বেসামরিক নাগরিকদের খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহের জন্য অবিলম্বে ‘সেইফ করিডোর’ খোলার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে দেশটি আরো বলেছে যে, আন্তর্জাতিক নিয়ম ও আইনের ক্রমাগত লঙ্ঘনের জন্য ইসরাইলি বাহিনীর ওপর সম্পূর্ণ দায় বর্তায়। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান গাজার হাসপাতালে মঙ্গলবারের হামলার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘ইসরাইলি হামলা যে ন্যূনতম মানবিক মূল্যবোধের তোয়াক্কা করে না এটি তার সর্বশেষ নজির। আমি গাজার এ নজিরবিহীন বর্বরতা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে সব মানবতার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি’। গাজার হাসপাতালে ইসরাইলের বিমান হামলায় কয়েকশ বেসামরিক মানুষ নিহত হওয়ার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কাতার। সিরিয়া বলেছে, এই বর্বর হত্যাকা-ের জন্য তারা ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরাইলের পশ্চিমা অংশীদার বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী বলে মনে করে। কারণ তারা ফিলিস্তিনিদের হত্যা করার ইসরাইলের সব ধরনের পরিকল্পিত আক্রমণকে সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে। বিশ্বব্যাপী এসব রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, লেবাননের রাজনৈতিক ও সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহসহ বহু সংস্থা ও সংগঠ গাজার হাসপাতালে হওয়া হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। এছাড়াও গাজায় হাসপাতালে হামলার সমালোচনায় মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি মঙ্গলবার বিবৃতি জারি করে বলেন, আমি তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি এবং এটিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের চরম লঙ্ঘন বলে অভিহিত করছি।
এই প্রাণঘাতী হামলার পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ বলেন, ‘বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্যবস্তু করা কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না’। তিনি অবিলম্বে গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা প্রেরণের আহ্বান জানান। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) তিনি লেখেন, কোনো কিছুই হাসপাতালের ওপর হামলাকে সমর্থন করতে পারে না। বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করাকে সমর্থন করতে পারে না। ফ্রান্স গাজার আল-আহলি আরাবি হাসপাতালে হামলার নিন্দা জানায় যেখানে শত শত ফিলিস্তিনির প্রাণহানি হয়েছে। আমরা তাদের স্মরণ করছি। অবিলম্বে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের পথ উন্মুক্ত করে দিতে হবে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গাজার হাসপাতালে প্রাণঘাতী হামলার ঘটনায় শিউরে উঠেছেন বলে সামাজিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এক পোস্টে জানিয়েছেন। এক্স অ্যাকাউন্টে নিজের অনুভূতি বর্ণনায় তিনি লেখেন, আমার হৃদয় হতাহতদের পরিবারের পাশে রয়েছে। হাসপাতাল এবং চিকিৎসা কর্মীরা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে সুরক্ষিত।
চীন : বুধবার বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘চীন গাজা হাসপাতালের হামলায় ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় মর্মাহত এবং দৃঢ়ভাবে নিন্দা জানায়’। দেশটি ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং যুদ্ধের অবসানের আহ্বান জানায়’।
রাশিয়া : রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার বলেছে যে, আল-আহলি আরব হাসপাতালের হামলা একটি জঘন্য অমানবিক অপরাধ ছিল এবং বলেছে যে ইসরাইল যদি এতে জড়িত না থাকে তবে স্যাটেলাইট চিত্র সরবরাহ করা উচিত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা রেডিও স্পুটনিককে বলেছেন, ‘এ ধরনের জঘন্য কাজকে অপরাধ হিসেবে যোগ্য কেউ কেউ নিজেদেরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য একটি স্পষ্ট প্রচেষ্টা চালিয়েছিল এবং কেবল মিডিয়াতে মন্তব্য করাই যথেষ্ট নয়। অনুগ্রহ করে স্যাটেলাইট ইমেজ প্রদান করার জন্য সদয় হোন, এবং আমেরিকান অংশীদাররা যদি এটি করে তবে এটি ভাল হবে না’।
আরব লীগ : আরব লিগের প্রধান আহমেদ আবুল গাইস বলেছেন যে, ‘আন্তর্জাতিক নেতাদের এ হামলা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। কোনো শয়তানী মন ইচ্ছাকৃতভাবে একটি হাসপাতাল এবং এর অরক্ষিত বাসিন্দাদের ওপর বোমাবর্ষণ করে?’ তিনি একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লিখেছেন, ‘আরব দেশগুলো এ যুদ্ধাপরাধের নথিভুক্ত করবে এবং অপরাধীরা তাদের কর্ম থেকে রেহাই পাবে না’।
সংযুক্ত আরব আমিরাত : ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত গাজা উপত্যকায় আল-আহলি ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতালকে লক্ষ্য করে ইসরাইলি হামলার তীব্র নিন্দা জানায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত এক বিবৃতিতে অবিলম্বে শত্রুতা বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুসারে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার গুরুত্বকে তুলে ধরেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা : জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসুস সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ বলেছেন, ‘ডব্লিউএইচও আল আহলি আরব হাসপাতালে হামলার তীব্র নিন্দা করে। প্রাথমিক প্রতিবেদনগুলি শত শত মৃত্যু এবং আহতের ইঙ্গিত দেয়। আমরা অবিলম্বে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং সরিয়ে নেওয়ার আদেশগুলোকে প্রত্যাহার করার জন্য আহ্বান জানাই’।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন : ইইউ-এর পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতির উচ্চ প্রতিনিধি জোসেপ বোরেল হাসপাতালে বোমা হামলার পর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বোরেল এক্স-এ লিখেছেন। ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল বলেছেন, ‘আবারও, নিরীহ বেসামরিক নাগরিকরা সর্বোচ্চ মূল্য দিতে হয়েছে। এ অপরাধের দায় অবশ্যই স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে এবং অপরাধীদের জবাবদিহি করতে হবে। বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর হামলা আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়’।
আফ্রিকান ইউনিয়ন : আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রধান মুসা ফাকি মাহামত মারাত্মক হামলার পর ইসরাইলকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে অভিযুক্ত করেছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ফাকি বলেছেন, ‘আজকে #গাজা হাসপাতালে ইসরাইলের বোমাবর্ষণে আমাদের নিন্দা সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করার কোন শব্দ নেই, শত শত লোক মারা গেছে’।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডার (এমএসএফ) : মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স হাসপাতালের ধর্মঘটের নিন্দা করেছে, তারা হাসপাতালের সাম্প্রতিক বোমা হামলায় আতঙ্কিত। গাজার এমএসএফ ডাক্তার গাসান আবু সিত্তাহ বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এটি একটি গণহত্যা’।
হিজবুল্লাহ : লেবাননের ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ আন্দোলন হাসপাতালে হামলার নিন্দায় একটি ‘ক্রোধ দিবস’ পালনের আহ্বান জানিয়ে এটিকে গণহত্যা এবং নৃশংস অপরাধ বলে অভিহিত করার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছে।
ফিনল্যান্ড : ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তো বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘লঙ্ঘনের তদন্তের আহ্বান জানিয়ে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনকে অবশ্যই সম্মান করা উচিত। আল-আহলি আরব হাসপাতালে হামলার ভয়াবহ খবর। বেসামরিক মানুষের ওপর হামলা নিন্দনীয়। আন্তর্জাতিক মানবিক আইনকে সব পরিস্থিতিতে সম্মান করতে হবে এবং এর লঙ্ঘনের তদন্ত করতে হবে’।
জার্মানি : জার্মান চ্যানেল ওলাফ শূলজ বলেছেন যে, তিনি হাসপাতালের বিস্ফোরণের ছবি দেখে আতঙ্কিত হয়েছেন। তিনি এক্স-এ একটি পোস্টে বলেছেন, ‘নিরপরাধ বেসামরিক মানুষ আহত এবং নিহত হয়েছে, পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত অত্যাবশ্যক।’
ইন্দোনেশিয়া : ইন্দোনেশিয়া হাসপাতালে হামলার নিন্দা করেছে বলেছে, ‘স্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন’। সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিশেষ করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে গাজায় হামলা ও সহিংসতা বন্ধে অবিলম্বে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে বলেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ দ্য রেড ক্রস (ওসিআরসি) : আইসিআরসিও ধর্মঘটের নিন্দা করে বলেছে, ‘মৃত্যু ও ধ্বংসের দৃশ্য নয়, মানুষের জীবন রক্ষার জন্য হাসপাতালগুলোকে অভয়ারণ্য হওয়া উচিত’।
ইরান : ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিমান হামলাকে ‘নিরস্ত্র ও অরক্ষিত মানুষদের’ ওপর হামলা বলে নিন্দা করেছে। প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি গতকাল একটি জনসাধারণের শোক ঘোষণা করেছেন এবং বলেছেন, হাসপাতালের ধর্মঘট ইসরাইল এবং তার মার্কিন মিত্রের বিরুদ্ধে পরিণত হবে। গাজার হাসপাতালে আহত ফিলিস্তিনিদের ওপর ফেলা মার্কিন-ইসরাইল বোমার শিখা শিগগিরই ইহুদিবাদীদের গ্রাস করবে’।
ইরাক : ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানী আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ থেকে একটি অবিলম্বে জরুরি প্রস্তাব আহ্বান করেছেন। হাসপাতালে নিহতদের স্মরণে সরকার তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছে।
ভারত : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্স-এ একটি বিবৃতি পোস্ট করেছেন যে, মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালের আঘাতে প্রাণহানির কারণে তিনি গভীরভাবে মর্মাহত। ‘চলমান সংঘাতে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা একটি গুরুতর এবং ক্রমাগত উদ্বেগের বিষয়’ তিনি বলেন।
কাতার : কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিমান হামলাকে একটি নৃশংস গণহত্যা এবং অরক্ষিত বেসামরিকদের বিরুদ্ধে একটি জঘন্য অপরাধ বলে অভিহিত করেছে। এক বিবৃতিতে উপসাগরীয় রাষ্ট্রটি বলেছে, হামলাটি ছিল আন্তর্জাতিক আইনের বিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন। বিবৃতিতে যোগ করা হয়েছে, ‘হাসপাতাল, স্কুল এবং অন্যান্য জনসংখ্যা কেন্দ্রগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলার সম্প্রসারণ একটি বিপজ্জনক বৃদ্ধি’।
হামলার দায় অস্বীকার ইসরাইলের : এদিকে আল আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে বিমান হামলার দায় অস্বীকার করেছে ইসরাইল। ইসরাইল বলছে, হাসপাতালের হামলাটি ইসরাইলের দ্বারা নয়, বরং ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠীর দ্বারা ভুল লক্ষ্যবস্তুতে রকেট ছোঁড়ার কারণে ঘটেছে। উভয়পক্ষই হামলার ঘটনায় দোষ অস্বীকার করছে।
জেনেভা কনভেনশন অনুসারে, যুদ্ধের সময় অসুস্থ এবং আহতদের পাশাপাশি চিকিৎসাকর্মী, হাসপাতাল এবং অস্থায়ী চিকিৎসা সুবিধাগুলো সুরক্ষিত রাখতে হয়। কোনো অবস্থাতেই তাদেরকে আক্রমণ করা যাবে না এবং তাদেরকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হলে তা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এছাড়া, হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি আহত সামরিক কর্মী বা যোদ্ধাদেরকেও সুরক্ষিত রাখতে হবে। সেইসাথে, তাদের সেবায় নিয়োজিত সশস্ত্র চিকিৎসা কর্মীরাও থাকবেন সুরক্ষিত। নিজেদের ও রোগীদের জীবন রক্ষার্থে সশস্ত্র থাকবেন তারা।
বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক বাতিল আব্বাসের : হাসপাতালে ইসরাইলি বাহিনীর ভয়াবহ বোমা হামলার পর- যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, গতকাল জর্ডানে বাইডেন ও আব্বাসের বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আল-আহলি নামক হাসপাতালে ইসরাইলি বাহিনীর বোমা হামলার পর বৈঠকটি বাতিল করে দিয়েছেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট। এ বৈঠকে জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ-২ এবং মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ এল-সিসিরও যোগ দেওয়ার কথা ছিল। বৈঠকটিতে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যকার যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করতেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফিলিস্তিনির দুই কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, গাজার হাসপাতালে ইসরাইল গণহত্যা চালানোর পর খুব ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রেসিডেন্ট (আব্বাস) এবং তিনি (জর্ডান থেকে) তাৎক্ষণিকভাবে রামাল্লায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তবে পশ্চিমাদের সঙ্গে সখ্যতা থাকায় মাহমুদ আব্বাসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন সাধারণ ফিলিস্তিনিরাই। বিশেষ করে রামাল্লাহ শহরে মঙ্গলবার রাতেই বড় আকারের বিক্ষোভ হয়েছে। যেটি দমনে কাঁদানে গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করেছে ফিলিস্তিনি পুলিশ। হাসপাতালে হামলার পর মাহমুদ আব্বাসের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়েছেন ইসরাইলি দখলদারিত্বের অধীনে থাকা পশ্চিম তীর ও অন্যান্য শহরের বাসিন্দারা। তারা মনে করছেন, গাজার বিরুদ্ধে ইসরাইল যে আগ্রাসন দেখাচ্ছে সেটি বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেননি মাহমুদ আব্বাস। সূত্র : আল-জাজিরা, এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *