৬০০ টাকা নিয়ে ঢাকায় আসা আইয়ুব বাচ্চু হয়ে ওঠেন ব্যান্ড সংগীতের দিকপাল
ব্যান্ড ও গিটার লিজেন্ড আইয়ুব বাচ্চুর চলে যাওয়ার দিন আজ। ২০১৮ সালের এদিনটিতেই অসংখ্য ভক্ত-শুভাকাঙ্খীদের কাঁদিয়ে পরপারে পাড়ি জমান তিনি। আজ তার পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার খরনা ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন এই কিংবদন্তি। তার বাবার নাম ইশহাক চৌধুরী, মা নুরজাহান বেগম। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা চট্টগ্রাম কলেজ থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি বিভিন্ন রক ব্যান্ডের গান শুনতেন। সেখান থেকেই ব্যান্ড ও গিটার বাজানোর প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তার বাবা তাকে ১১তম জন্মদিনে একটি গিটার উপহার দেন।
সেই থেকেই গিটার বাজানোর প্রতি তার আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। তাকে গিটার শেখাতেন জেকব ডায়াজ নামের একজন বার্মিজ গিটার বাদক, যিনি তখন চট্টগ্রামে থাকতেন।
১৯৭৮ সালে তিনি ফিলিংস ব্যান্ডের মাধ্যমে পথচলা শুরু করেন। এরপর ১০ বছর সোলস ব্যান্ডের লিড গিটারিস্ট হিসেবে কাজ করেন। নব্বইয়ের দশকে তার হাত ধরে যাত্রা শুরু হয় ব্যান্ড ‘এলআরবি’র। আইয়ুব বাচ্চু মৃত্যুর আগে সুদীর্ঘ ২৫ বছর কাটিয়েছেন নিজ হাতে গড়া এলআরবির সঙ্গে। এই সময়ে তিনি ব্যান্ডের হয়ে অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন। একক ক্যারিয়ারেও একের পর এক হিট গান দিয়ে গেছেন আইয়ুব বাচ্চু। তবে তার সংগীতের পথটা এত সহজ ছিল না।
১৯৮৩ সালে মাত্র ৬০০ টাকা পকেটে নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। কিন্তু অদম্য স্পৃহা, কঠোর পরিশ্রম ও সাধনায় তিনি অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীর আইয়ুব বাচ্চু হয়ে ওঠেন। এককথায় দীর্ঘদিন তিনিই ছিলেন দেশীয় ব্যান্ড সংগীতের অপ্রতিদ্বন্দ্বী তারকা। কণ্ঠ-সুর আর গিটারের মন্ত্রণায় মাতোয়ারা করে রেখেছেন গানপ্রেমীদের। ভূষিত হয়েছিলেন গানের ‘বস’ খেতাবে। ব্যান্ড সংগীতের এই দিকপাল অন্যান্য ঘরানার গানেও পারঙ্গমতার পরিচয় দিয়েছেন। বিশেষ করে আধুনিক এবং লোকগানে তিনি দক্ষতার প্রমাণ রেখে গেছেন। নিজের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় অন্যান্য শিল্পীর জন্য আধুনিক, লোক এবং ক্লাসিক্যাল ঘরানার গানও তৈরি করেছেন তিনি।
আইয়ুব বাচ্চুর জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ‘চলো বদলে যাই’, ‘হাসতে দেখো’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘রুপালি গিটার’, ‘মেয়ে’, ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘সুখের এ পৃথিবী’, ‘ফেরারী মন’, ‘উড়াল দেবো আকাশে’, ‘বাংলাদেশ’, ‘আমি বারো মাস তোমায় ভালোবাসি’, ‘এক আকাশের তারা’, ‘সেই তারা ভরা রাতে’, ‘কবিতা’, ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি’, ‘তিন পুরুষ’, ‘যেও না চলে বন্ধু’, ‘বেলা শেষে ফিরে এসে’, ‘তিন পুরুষ’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গান।