Home অপরাধ মাদক ব্যবসায়ীদের অভয়ারণ্য রূপগঞ্জ
Oktober ১৭, ২০২৩

মাদক ব্যবসায়ীদের অভয়ারণ্য রূপগঞ্জ

মাদকের কালো ছায়ায় অন্ধকার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ। এখানে মাদকের স্পট রয়েছে ৩০০-র ওপরে। আর মাদক ব্যবসায়ী আছে প্রায় ৪০০। খুচরা ব্যবসায়ীর সংখ্যা আরও তিনগুণ বেশি। শর্টকাট ফর্মুলায় ধনী হওয়ার আশায় অনেক তরুণ ও নারীও এ পেশায় ঝুঁকছেন। মরণ নেশা গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল, আইসপিল, টিডিজেসিক ও লুপিজেসিক ইঞ্জেকশনসহ নানা ধরনের মাদকদ্রব্যে সয়লাব হয়ে গেছে রূপগঞ্জ। বিভিন্ন সমীক্ষালব্ধ তথ্য থেকে জানা যায়, উপজেলায় প্রায় ১ লাখ মাদকসেবী রয়েছে। বছরে তারা প্রায় ১৫০ কোটি টাকার মাদক গ্রহণ করেন।

মাদকের বিষাক্ত ছোবলে হাজার হাজার তরুণের জীবন বিপন্ন। মাদকের টাকা জোগাড় করতে তারা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও খুনসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। মাদকসংক্রান্ত দ্বন্দ্বে খুনের ঘটনা তো রয়েছেই। এ ছাড়া সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে প্রায় হাজার খানেক। মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত চুনোপুঁটিরা ধরা পড়লেও রাঘব-বোয়ালরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরেই।

মাদকের রুট

সড়ক ও নৌপথে এ এলাকায় অবাধে মাদকদ্রব্য আসে বলে জানিয়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন কর্মকর্তা। মাদক প্রবেশের সবচেয়ে নিরাপদ রুট হচ্ছে বালু নদ। এ নদে পুলিশ টহলের ব্যবস্থা না থাকায় মাদকব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারযোগে মাদক আনা-নেয়া করেন। এ ছাড়া শীতলক্ষ্যা নদ দিয়েও পণ্যবাহী জাহাজে করে মাদক ঢোকে রূপগঞ্জে। সেইসঙ্গে এশিয়ান হাইওয়ে দিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে কুমিল্লা থেকে মাদক ঢোকে রূপগঞ্জে।

আশুগঞ্জ-ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকেও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক হয়ে মাদক ঢোকে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা হচ্ছে মাদকের ট্রানজিট পয়েন্ট।

আখাউড়া, সিলেট ও ব্রাক্ষণবাড়িয়া থেকে মাদক বাস, নাইট কোচ, সংবাদপত্র বহনকারী মোটরসাইকেল কিংবা ট্রাকযোগে ওই এলাকায় আসে।

পাচারের নানা কৌশল

পুলিশ ও মাদক ব্যবসায়ীদের ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্র জানায়, মাদক ব্যবসায়ীরা নানা কৌশলে মাদক বহন করে থাকেন। ইয়াবা ও ফেনসিডিল বহন করা হয় লাউ, নারিকেল আর ম্যাচের বাক্সের ভেতরে করে। হেরোইন বহন করা হয় মিষ্টির প্যাকেটের ভেতরে। আর গাঁজা বহন করা হয় ছালার চটের ভেতরে করে।

মাদক বহনের কাজে ব্যবহার করা হয় শিশু-কিশোরদের। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মহিলাদের দিয়ে মাদক বহন করা হয়। মহিলাদের স্পর্শকাতর জায়গায় ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন ও গাঁজা রেখে বহন করা হয়। মাদক ব্যবসায় রূপগঞ্জে ৭০০-র বেশি শিশু-কিশোর সেলসম্যান রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে।

মাদকের আখড়া

রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার গোলাকান্দাইল এলাকার ৫ নম্বর ক্যানেল এলাকা, ভুলতা এলাকা, তারাব পৌরসভার হাটিপাড়া, নোয়াপাড়া, বরাব এলাকা মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নগরপাড়া, বাগবাড়ী, দেলপাড়া, নয়ামাটি, কামশাইর, বরুনা এলাকা রীতিমতো মাদকের ডিপো। এ ছাড়া কাঞ্চন, রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া, পূর্বাচল উপশহর, ভোলাব ইউনিয়ন, দাউদপুর ইউনিয়নসহ সমগ্র রূপগঞ্জ মাদকে সয়লাব।

মাদককে ঘিরে খুন

থানা পুলিশ ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, গত একযুগে নেশার কাজে বাধা দেয়া ও প্রতিবাদ করায় ২৫ জন খুন হয়েছেন। ২০২০ সালে কায়েতপাড়া এলাকায় মাদকের দ্বন্দ্বে খুন হন আনোয়ার হোসেন। একই বছর শিংলাবো এলাকায় মাদক সেবনে বাধা দেয়ায় ছেলে সাইফুল ইসলামের হাতে মা দেলোয়ারা বেগম নিহত হন। রূপসী কাজীপাড়া এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে খুন হন রাজন মিয়া। মাদক সেবন করে গত কয়েক বছরে মারা গেছেন পাঁচজন।

মাদকে আসক্ত ১৫ হাজার শ্রমিক

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে আধুরিয়া পর্যন্ত ছোট-বড় প্রায় ৫ শতাধিক শিল্পকারখানা রয়েছে। এ সব শিল্পকারখানায় রয়েছে কয়েক লাখ শ্রমিক। এ সব শ্রমিকের মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক নেশায় জড়িয়ে পড়েছে। এ সব শ্রমিক সবাই বহিরাগত। এরা ছোট ছোট খুপরি ঘরে কিংবা মেস ভাড়া করে ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করছে। এ সব খুপরি ঘরে মাদক ব্যবসায়ীরা ফেরি করে নেশা বিক্রি করে বলে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক জানান।

সন্ধ্যার পরপরই মাদক ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। বহিরাগত ও ঘনবসতি থাকায় গার্মেন্টস এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান মুখ থুবড়ে পড়েছে।

মামলা ও গ্রেপ্তার

রূপগঞ্জ থানা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে র‌্যাব, ডিবি ও থানা পুলিশ ২৫টি মামলা করেছে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। আর এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫ হাজার ২৩৮ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে।

প্রশাসনের বক্তব্য

রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ বলেন, মাদকবিরোধী অভিযান নিয়মিত চলে। রূপগঞ্জের অনেক এলাকা দুর্গম। এ সব এলাকায় যেতে অনেক সময় লাগে। এ সুযোগে মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। তা ছাড়া মাদক নিয়ে অভিযান চালাতে গেলে নানা দুর্ঘটনা ঘটে।

মাদকের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণাকারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল হক দৈনিক বাংলাকে বলেন, রূপগঞ্জে মাদক মাকড়সার মতো ছড়িয়ে গেছে। অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *