Home বিনোদন রাহুল, অঞ্জলি, টিনাদের ভোলেননি দর্শক
Oktober ১৬, ২০২৩

রাহুল, অঞ্জলি, টিনাদের ভোলেননি দর্শক

রোমান্টিক সিনেমা তৈরিতে আদিত্য চোপড়ার জাদু করণ জোহর খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তিনি নব্বই দশকের অন্যতম জনপ্রিয় হিন্দি সিনেমা ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’র সহকারী পরিচালক ছিলেন কিনা। নিজের পরিচালনায় প্রথম সিনেমা করলেও সেই ঘরানারই, শাহরুখ খান আর কাজল—পাত্রপাত্রীও এক। আর সেই সিনেমা ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ মুক্তির পরও ইতিহাস গড়ল। হলো ১৯৯৮ সালের সবচেয়ে ব্যবসাসফল হিন্দি সিনেমা। আলোচিত এই সিনেমা মুক্তির ২৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ।

পরিচালনার সঙ্গে সিনেমাটির গল্প লিখেছেনও করণ নিজেই। শুরুতে ত্রিভুজ প্রেমের গল্প লিখেছিলেন, পরে আইডিয়া নিজেরই পছন্দ হয় না। আরেকটি গল্প লেখেন বাবাহারা এক সন্তান ও মাকে নিয়ে। সেটিও বাতিল করে দেন। পরে বাতিল করে দেওয়া দুই গল্প থেকে একটি চিত্রনাট্য দাঁড় করান। এ প্রসঙ্গে ভারতীয় গণমাধ্যম রেডিফডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে করণ জোহর বলেছিলেন, ‘গল্প লিখতে গিয়ে একধরনের ট্রমার মধ্যে চলে যাই। কারণ, সিঙ্গেল মাদার ও তাঁর সন্তানকে নিয়ে কীভাবে গল্পটি এগিয়ে নেব কূলকিনারা পাচ্ছিলাম না। পরে মনে হলো, চিত্রনাট্যে ফ্ল্যাশব্যাক যুক্ত করলে কেমন হয়? তাদের পেছনের গল্প তুলে আনা গেলে ব্যাপারটা দারুণ হবে। এটা মূলত ব্যক্তিগত বাসনা আর অভিভাবকের দায়িত্বের মধ্যে বিরোধের গল্প। যেখানে আমি পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের ধারণার সংমিশ্রণ ঘটাতে চেয়েছিলাম।’

‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-এ প্রথমবার মিনি স্কার্ট পরেই যেভাবে বাজিমাত করেছিলেন রানী

করণ জোহর। এএনআই
করণ জোহর।

চিত্রনাট্য চূড়ান্ত হওয়ার পর পাত্র–পাত্রী নির্বাচন নিয়েও কম ঝামেলা হয়নি। রাহুল চরিত্রে শাহরুখ, অঞ্জলি চরিত্রে কাজল—এটা আগেই ঠিক ছিল। শুরুতে টিনা চরিত্র করণ নিতে চেয়েছিলেন টুইংকেল খান্নাকে।

তাঁর নামের ইংরেজি বানানের আদ্যক্ষর দিয়েই চরিত্রটির নাম রাখা হয় টিনা। কিন্তু অভিনেত্রী পত্রপাঠ না বলে দেন। এরপর ঊর্মিলা মার্তণ্ডকর, টাবু, শিল্পা শেঠি, রাভিনা ট্যান্ডন, এমনকি কারিশমা কাপুরকেও প্রস্তাব দেন পরিচালক। সবাই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।

এমন অবস্থায় ত্রাতা হয়ে হাজির হন শাহরুখ ও আদিত্য। ‘রাজা কি আয়েগি বরাত’ সিনেমায় রানী মুখার্জির অভিনয় তাঁদের বেশ পছন্দ হয়েছিল। তাঁরাই করণকে পরামর্শ দেন ছবিতে রানীকে নেওয়ার জন্য। পরে এই সিনেমা অভিনেত্রীর ক্যারিয়ারের গতিপথই বদলে দেয়। শুরুতে চিন্তা ছিল, ছবিতে রানীর কণ্ঠ অন্য কেউ ডাব করবেন। কিন্তু করণ ঠিক করেন, তাঁর ‘ফ্যাস ফ্যাসে’ কণ্ঠও ব্যবহার করবেন। কে জানত পরে এই কণ্ঠস্বরই হয়ে উঠবে রানী মুখার্জির অন্যতম পরিচিতি।

টিনা চরিত্রটির মতো আমান চরিত্রটি নিয়েও কম ঝামেলা হয়নি। এই অতিথি চরিত্রটিতে পর্দায় সালমান খানকে দেখা গেলেও শুরুতে এই চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল সাইফ আলী খান ও চন্দ্রচূড় সিংকে।

‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-এর দৃশ্য। আইএমডিবি
‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-এর দৃশ্য।

সিনেমাটির শুটিং শুরু হয় ১৯৯৭ সালের ২১ আগস্ট। পরের সাড়ে ৯ মাস ধরে চলে শুটিং। ভারত ছাড়াও সিনেমাটির শুটিং হয় স্কটল্যান্ড ও মরিশাসে। শুটিং ঘটে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনাও।

‘ইয়ে লাড়কা হ্যায় দিওয়ানা’ গানের শুটিংয়ের সময় বাইক থেকে পড়ে গিয়ে চোট পান কাজল। দুর্ঘটনার পর তাঁর চেতনাও ছিল না। পরে ওই ঘটনা নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে কাজল মজা করে বলেন, ‘শুটিংয়ে এটি তাঁর সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা। কারণ, ওই ঘটনার কিছুই তাঁর স্মরণে নেই।’

একনজরে কুছ কুছ হোতা হ্যায়
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: করণ জোহরপ্রযোজনা: ধর্মা প্রোডাকশনঅভিনয়: শাহরুখ খান, কাজল, রানী মুখার্জিসংগীত: যতিন-লতিলদৈর্ঘ্য: ১৮৫ মিনিটমুক্তি: ১৬ অক্টোবর, ১৯৯৮বাজেট: প্রায় ৯ কোটি রুপিআয়: ১০৩ কোটি রুপি

‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-এর দৃশ্য। আইএমডিবি
‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-এর দৃশ্য।

১৯৯৮ সালের ১৬ অক্টোবর মুক্তির পর দেশে-বিদেশে সাড়া ফেলে ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’। গান, পরিচালনা, সিনেমাটোগ্রাফি, চিত্রনাট্য থেকে অভিনয়ের প্রশংসা করেন দর্শক–সমালোচকেরা। দ্রুতই এটি পরিণত হয়েছে বছরের সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমায়। ‘হাম আপকে হ্যায় কৌন…!’ ও ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’র পর তৃতীয় হিন্দি সিনেমা হিসেবে ১০০ কোটি রুপি আয়ের রেকর্ড গড়ে।

সামিরের লেখা ও যতিন-ললিতের সুর করা সিনেমার গানগুলো নিয়ে না বললেই নয়। ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’, ‘কোই মিল গায়া’, ‘লাড়কি বড়ি আনজানি হ্যায়’সহ সিনেমার সব কটি গানই মানুষের মুখে মুখে ফেরে। যদিও এ সিনেমার গান লেখার কথা ছিল জাভেদ আখতারের। কিন্তু সিনেমার নাম তাঁর কাছে অশ্লীল মনে হওয়ায় সরে দাঁড়ান।

মুক্তির পর পুরস্কার অনুষ্ঠানগুলোতে অনুমিতভাবে দাপট দেখায় সিনেমাটি। ৪৪তম ফিল্মফেয়ারে পায় ১৮টি মনোনয়ন। জেতে আটটিতে। সেরা ছবি, সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা ও সেরা অভিনেত্রী—গুরুত্বপূর্ণ চার ক্যাটাগরিতেই পুরস্কার পায় ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’। যে রেকর্ড আছে কেবল ‘দেবদাস’, ‘ব্ল্যাক’ ও ‘গালি বয়’ সিনেমার ঝুলিতে। ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে মুম্বাইয়ের একটি প্রেক্ষাগৃহে গতকাল আবার মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে টিকিটের দামও রাখা হয়েছিল ২৫ রুপি। সেই টিকিট ছাড়ার পরপরই বিক্রি হয়ে যায়। ২৫ বছর পরেও যে রাহুল, অঞ্জলি আর টিনকে ভোলেননি দশর্ক।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *