Home বিনোদন অরুণার ব্যাগের পর ফারিণের মুঠোফোন, এফডিসিতে একের পর এক চুরি, কী করছে কর্তৃপক্ষ
Oktober ১২, ২০২৩

অরুণার ব্যাগের পর ফারিণের মুঠোফোন, এফডিসিতে একের পর এক চুরি, কী করছে কর্তৃপক্ষ

বাংলা সিনেমার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন(এফডিসি)। কিন্তু গত বছর ধরে নানা সমস্যায় জর্জরিত প্রতিষ্ঠানটি। এফডিসির কারিগরি সুবিধা ব্যবহারের খরচ, স্টুডিও খরচ পোষাতে না পেরে বেশির ভাগ প্রযোজক-পরিচালক শুটিং নিয়ে যাচ্ছেন এফডিসির বাইরে। ফলে শুটিং কমেছে, কমেছে এফডিসির আয়ও। অন্যদিকে কেপিআইভুক্ত সুরক্ষিত আঙিনাটির নিরাপত্তা অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, পরিসর অনুযায়ী তাদের নিরাপত্তাকর্মী কম। ফলে সব দিকে খেয়াল রাখা মুশকিল হয়ে পড়েছে।

অরুণা বিশ্বাস
অরুণা বিশ্বাসসংগৃহীত

এফডিসির নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন ওঠে, অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণের ফোন হারানোর পর। যদিও এফডিসির ভেতরে অভিনয়শিল্পীদের ফোন বা ব্যাগ হারানো নতুন কোনো ঘটনা নয়। অনেক দিন ধরেই প্রতিষ্ঠানটিতে বহিরাগতের আনাগোনা বেড়েছে। রাত-দিন মূল ফটকে নিরাপত্তাকর্মী থাকলেও প্রায়ই বহিরাগতদের ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় এফডিসির ভেতরে। শুটিং সেটে ইউনিটের লোকজনের সঙ্গে মিশে গিয়ে নানা ধরনের অঘটন ঘটাচ্ছেন তাঁরা। দীর্ঘদিন ধরে এ সব ঘটনা ঘটে এলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি এফডিসি কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য এফডিসির বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায় অনেকগুলো সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে, তারপরও বন্ধ হয়নি চুরির ঘটনা।

৪ অক্টোবর বুধবার এফডিসিতে শুটিং করতে গিয়ে চুরি হয়ে গেছে ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণের মুঠোফোন। ফোন হারানো নিয়ে জিডি হয়েছে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায়। প্রায় এক সপ্তাহ হতে চলল, এখনো উদ্ধার হয়নি ফোনটি।

তাসনিয়া ফারিণ। ফেসবুক থেকে
তাসনিয়া ফারিণ। ফেসবুক থেকে

ফারিণ জানান, প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেল, এফডিসির কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এফডিসির মতো এমন সংরক্ষিত এলাকায় দিনদুপুরে এভাবে ফোন চুরি হওয়ায় হতাশ এই অভিনেত্রী। আফসোস করে ফারিণ বলেছেন, ‘এফডিসি নিরাপত্তাঘেরা শুটিংয়ের জায়গা। অথচ এখানে তারকারা এসে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তাহলে এটি কিসের শুটিংয়ের জায়গা? আমার তো মনে হচ্ছে না। বাইরের লোকজন ঢুকে পড়ছে যখন-তখন। ফটকে এফডিসির নিরাপত্তাকর্মীরা বসা। তাহলে বাইরের লোক ঢুকছে কীভাবে? এখানে যাঁরা শুটিং করতে আসেন, তাঁদের জীবনেরও তো নিরাপত্তা নেই দেখছি।’

শুটিংয়ের কর্মী ভেবে ফোন রাখতে দিলেন ফারিণ, এরপর যা হলো

শুটিংয়ের কর্মী ভেবে ফোন রাখতে দিলেন ফারিণ, এরপর যা হলো

এর আগে চলতি বছরের আগস্ট মাসে এফডিসির ভেতরে এক অনুষ্ঠান থেকে অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাসের ব্যাগ চুরি হয়। ব্যাগে রাখা দুটি ফোনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস খোয়া যায়। এই ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরিও হয়েছে। গত শনিবার দুপুরে প্রথম আলোকে অরুণা বিশ্বাস জানিয়েছেন, প্রায় তিন মাস হয়ে যাচ্ছে, আজও উদ্ধার হয়নি তাঁর ব্যাগ।

চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলমের মতে, এখন এটি আর এফডিসি নেই, জাদুঘর হয়ে গেছে। ফটক থেকে নিরাপত্তাকর্মীরা টাকা নিয়ে বহিরাগতের প্রবেশ করাচ্ছেন ভেতরে। একধরনের ‘গেট-বাণিজ্য’ চলছে। নিরাপত্তাকর্মীরা এর সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, ‘আমিও শুনেছি ফারিণের ফোন চুরির ঘটনা। অনেক আগে থেকেই এ ধরনের সব ঘটনা ঘটে আসছে। আমরা অনেক দিন থেকে এই ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে বলে আসছি, কোনো কাজ হয় না। কোনো প্রতিকার নেই। আমরা বলেছি, সরকারের অনুমোদনপ্রাপ্ত গণমাধ্যম ঢুকতে পারবে, কিন্তু ইউটিউবারদের টাকার মাধ্যমে গেট দিয়ে ঢোকানো হচ্ছে। গেটের নিরাপত্তাকর্মীদের গেট-বাণিজ্য চলছে।’

এই প্রযোজক নেতা আরও বলেন, ‘এর আগেও অনেক শিল্পী-কলাকুশলীর জিনিসপত্র চুরি হয়েছে। তাঁরা ফেরত পাননি। বহিরাগতরা ভেতরে ঢুকে শুটিংয়ে একধরনের জটলা তৈরি করেন। তারপর জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে চলে যান। এটি পুরোপুরিই গেট-বাণিজ্যের ফসল। যখন চুরির ঘটনা ঘটে, তখন কয়েক দিন নিরাপত্তা নিয়ে তোড়জোড় দেখা যায়, কিছুদিন গেলেই আবার যেই লাউ সেই কদু।’

এফডিসির ভেতরের দৃশ্য
এফডিসির ভেতরের দৃশ্যসংগৃহীত

প্রযোজক খোরশেদ আলম জানালেন, তাঁর কাছে ২০০৬-০৭ সাল পর্যন্ত জায়গাটা এফডিসি এফডিসি মনে হতো।  শিল্পী থেকে শুরু করে সব কলাকুশলীর নামের তালিকা মূল ফটকে জমা থাকত। এখন এসব অতীত।

এই প্রযোজক নেতা বলেন, ‘এখন যেসব ঘটনা এফডিসিতে ঘটছে, এর দায়ভার এফডিসি কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। তাদের অবহেলার কারণে এফডিসির সুনাম ধ্বংস হচ্ছে, শিল্পীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। শুটিংও তেমন নেই এখানে। নানা হয়রানির কারণে পরিচালকেরা এখানে এখন আর শুটিং করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। এখন এফডিসির যা অবস্থা, তাতে এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে এর কপালে কী আছে, কে জানে।’

এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এফডিসির সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) কে এম আমিনুল করিম বলেন, ‘এফডিসিতে এত সমিতি, অনেক সময় এসব সমিতির সদস্যের সঙ্গে মেহমান আসেন, আত্মীয়স্বজন আসেন। প্রধান ফটকে নিরাপত্তাকর্মীরা সবাইকে চেক করতে পারেন না। এ ছাড়া অনেক সিনেমার অনেক এক্সট্রা শিল্পী আছেন, যাঁদের পরিচয় জানতে চাইলেও রাগারাগি করেন। সবচেয়ে বড় সমস্যা, এফডিসির পরিসর অনুযায়ী আমাদের নিরাপত্তাকর্মী কম, সব দিকে খেয়াল রাখা মুশকিল হয়ে পড়েছে।’

বহিরাগতের প্রবেশের ব্যাপারে বিভিন্ন সমিতির বিরুদ্ধে এফডিসির প্রশাসনের এমন অভিযোগের ব্যাপারে প্রযোজক সমিতির সাবেক নেতা খোরশেদ আলমের ভাষ্য, ‘সমিতির সদস্যদের সঙ্গে মেহমানদের ঢুকতে দেবেন কেন? আর মেহমানেরা কি এসব চুরি করছেন? এটি প্রশাসনের দায়সারা বক্তব্য। একসময় এফডিসিতে কাজ হলে শিল্পী-কলাকুশলীদের আগেই ফটকে একটি তালিকা দেওয়া হতো, সেই অনুযায়ী প্রবেশ করতে পারতেন তাঁরা। তাহলে সেই নিয়ম এখন নেই কেন?’

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *