Home রাজনীতি আওয়ামী লীগের সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা শুনলে ঘোড়াও হাসে: ফখরুল
Oktober ৭, ২০২৩

আওয়ামী লীগের সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা শুনলে ঘোড়াও হাসে: ফখরুল

আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু নির্বাচন করে, এটা শুনলে ঘোড়াও হাসবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে প্রশ্ন তুলেছেন—নির্বাচন নিয়ে এত কথা কেন? তারা নাকি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করে। তাদের এই কথা শুনলে ঘোড়াও হাসে।’

আজ শনিবার রাজধানীর রমনায় দ্য ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে আয়োজিত শিক্ষক কর্মচারী সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। চাকরি জাতীয়করণ, শিক্ষক-কর্মচারী নির্যাতন বন্ধ ও চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। আয়োজক ছিল বিএনপি সমর্থক শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট৷

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর এত মাথাব্যথা কেন? কারণ, ওরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, সেখানেই ওরা কাজ করতে চায়, সহযোগী হতে চায়, যেখানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ রয়েছে।’  বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন,  প্রধানমন্ত্রী আনন্দের সঙ্গে বলেছেন, বিদেশিরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কিছু বলেনি। বলতে হয় না, এগুলো বোঝা যায়। আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তা প্রমাণিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে ঢাকার ফেরার পর গত শুক্রবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাকে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন শেখাতে হবে না। কারণ, বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রাম—এটা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই আমরা করেছি। বারবার সুষ্ঠু ভোটের কথা কেন আসছে, এই প্রশ্নও তোলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর এসব বক্তব্যের সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব। আজ বিএনপি সমর্থক শিক্ষকদের সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যে মূলত ছিল প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের সমালোচনা।

যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা বিধিনিষেধ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা দুর্নীতি, অন্যায় করেছে, বিচারক হয়ে দলীয়ভাবে বিচার করছে, ব্যবসায়ী যারা চুরি করেছে, তারা এখন আতঙ্কিত। সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের ছাপ প্রধানমন্ত্রীর মুখে।’  একই সঙ্গে তিনি বলেন, চলমান দুঃশাসন থেকে মুক্তির জন্য বিধিনিষেধ, ভিসা নীতির ওপর নির্ভর করলে হবে না। অন্য কেউ করে দিয়ে যাবে না। আমাদেরই করতে হবে।

‘আহা বেশ বেশ’

সংসদ এখন তোষামোদ করার কারখানায় পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান সরকারের জবাবদিহি নেই। সংসদ এখন তোষামোদ করার কারখানায় পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতা করবেন আর সংসদ সদস্যরা বলেন, আহা বেশ বেশ।’

শান্তিপূর্ণ কথা সরকার শুনছে না দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সাধারণ মানুষের মতামত দেওয়ার একটাই সুযোগ ছিল ভোটের দিন। সেই অধিকার এই সরকার কেড়ে নিয়েছে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা সরকার শুনছে না। চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনি। এখন শোনাতে হবে। শোনানোর জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন করা হবে। সময় আছে সসম্মানে চলে যান।

দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার পরিবেশ নেই। দলকানা অযোগ্য ব্যক্তিদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী জমি অধিগ্রহণের টাকা ও নদীর বালু খেয়ে ফেলছেন। সমাজের সবচেয়ে খারাপ লোকটাকে স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, গত ১৫ বছরে সরকার উন্নয়নের কথা বললেও শিক্ষকদের অবস্থা বদলায়নি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য আবদুল মঈন খান অভিযোগ করেন, সরকার বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে উসকানি দিচ্ছে। তিনি বলেন, লগি-বইঠার শিক্ষা বিএনপির রাজনীতিতে নেই। শিক্ষকদের এখানে দাবি জানাতে হচ্ছে, এই ব্যর্থতা রাষ্ট্রের।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিদেশি রাষ্ট্রগুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বললেই প্রধানমন্ত্রীর মাথাব্যথা করে। পশ্চিমা বিশ্বে উন্নয়ন ও গণতন্ত্র একই সঙ্গে চলেছে। তারা উন্নয়নের নাম দিয়ে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা নষ্ট করেনি।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সেলিম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, আগে স্কুলগুলোর কমিটিতে নির্বাচন হতো। এখন খারাপ লোকজনকে স্কুলের সভাপতির পদে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা আবার আগের ভোটের রীতিতে ফিরে যেতে চাই।

সমাবেশে শিক্ষক নেতারা বলেন, শিক্ষকেরা প্রতি মাসে হাজার টাকা বাসা ভাড়া পান, যা দিয়ে এখন মুরগির খোপও ভাড়া পাওয়া যায় না। ঈদে বেতনের ২৫ শতাংশ বোনাস দেওয়া হয়। যা দিয়ে বাচ্চাদের পোশাকও কিনে দেওয়া যায় না৷ শিক্ষকেরা দীর্ঘ দিন ধরে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করলেও কোনো ফল মেলেনি।

সমাবেশ সঞ্চালনা করেন শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক মুগিস উদ্দিন মাহমুদ। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, কারিগরি শিক্ষক সমিতির মহাসচিব হারুনুর রশীদ, মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি ছফা চৌধুরী প্রমুখ।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *