ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মুক্তিপণের জন্য শিশুকে হত্যার অভিযোগে দুই স্বজন গ্রেপ্তার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় নিখোঁজের দুদিন পর এক শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শিশুটির পরিবার দাবি করেছে, অপহরণের পর মুক্তিপণ না পেয়ে ওই শিশুটিকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেছে তার চাচাতো ও ফুফাতো ভাই। এ ঘটনায় ওই দুই তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দড়িয়াদৌলত ইউনিয়নের শুঁটকিকান্দি গ্রামে।
নিহত ফাতেমা আক্তার (৭) ওই গ্রামের বাছেদ মিয়ার মেয়ে। সে স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনে নার্সারি শ্রেণিতে পড়ত। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ইউনিয়নের চান্দলবিল (টেহারচক) থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে সন্ধ্যার দিকে গ্রেপ্তার করা হয় শিশুটির চাচাতো ভাই শুঁটকিকান্দি গ্রামের মো. আলাউদ্দিন (২১) ও ফুফাতো ভাই দড়িয়াদৌলত গ্রামের লাজিম মিয়াকে (১৮)। এ ঘটনায় শিশুটির মা রুমি আক্তার বাদী হয়ে এই দুজনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন।
ফাতেমার পরিবার, এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার সন্ধ্যার দিকে দাদির ঘর থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় ফাতেমা। স্বজনেরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও ফাতেমাকে পাননি। এরপর গতকাল সকালে বাঞ্ছারামপুর থানায় ফাতেমার বাবা বাছেদ মিয়া একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। গতকাল সকালে ‘কবিরাজ বাবা’ নামের একটি ইমো নম্বর থেকে চার লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে ফাতেমার মা রুমি আক্তারের মুঠোফোনে একটি খুদে বার্তা আসে। সেখানে রাত ১০টার মধ্যে মুক্তিপণের টাকা দিতে বলা হয়। ওই খুদে বার্তার সূত্র ধরে পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে গতকাল সন্ধ্যায় শিশুটির চাচাতো ভাই আলাউদ্দিনকে আটক করে। যাচাই করে তাঁর মুঠোফোন থেকে মুক্তিপণ চেয়ে খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। এ সময় তাঁর সঙ্গে ফাতেমার ফুফাতো ভাই লাজিমও জড়িত আছে বলে পুলিশকে জানান আলাউদ্দিন। এরপর দড়িয়াদৌলত গ্রাম থেকে লাজিমকে আটক করে পুলিশ। তাঁদের আটকের পর বিল থেকে ফাতেমার লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহত শিশুর মা রুমি আক্তার বলেন, ‘আমার শিশু মেয়ের তো কোনো অপরাধ ছিল না। তার সঙ্গে কেন এমন করল ওরা? আমার কাছ থেকে টাকা লাগলে নিত। আমার মেয়েকে হত্যা করল কেন? আমি তাদের ফাঁসি চাই।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরির ১২ ঘণ্টার মধ্যেই গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের আগেই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে দুই আসামিকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আলম প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় ফাতেমার মা রুমি আক্তার বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। দুই আসামিকে আজ মঙ্গলবার সকালে আদালতে পাঠানো হয়েছে।