৮ মাসে ধর্ষণের শিকার ৪৯৩ কন্যাশিশু
এ বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ৮ মাসে ৪৯৩ কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া ১০১ কন্যাশিশু ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে। আজ বুধবার জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘কন্যাশিশুর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন’ শিরোনামে এ সংবাদ সম্মেলনে ‘কন্যাশিশুদের সার্বিক অবস্থা: বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট ২০২১-২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন এবং ‘কন্যাশিশুর প্রতি নির্যাতন ও সহিংসতার চিত্র পর্যবেক্ষণ-২০২৩’ উপস্থাপন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি। তিনি বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির জন্য নির্যাতন ও সহিংসতা দিন দিন ভয়ংকর হচ্ছে। অপরাধীরা ক্রমাগত উৎসাহিত হচ্ছে অপরাধমূলক কার্যক্রম করতে।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ৮ মাসে ১৩৬ কন্যাশিশু হত্যা, ১৮১টি আত্মহত্যা, ৩২৯ কন্যাশিশু যৌন হয়রানি ও নির্যাতন, ৩০টি পর্নোগ্রাফি, ২টি অ্যাসিড সহিংসতা, ১০৪টি অপহরণ ও পাচার, ২৬ গৃহকর্মী নির্যাতন এবং ৩৬ কন্যাশিশু নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এ সময় দেশের ২৩টি জেলার ৫২টি উপজেলার ১৩৬টি ইউনিয়নে বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে ২৬০ কন্যাশিশু। এ ছাড়া ১১ কন্যাশিশুকে বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা হয়েছে, ৩০৭ শিশু পানিতে পড়ে মারা গেছে, সাপের কামড়ে মারা গেছে ২৭ শিশু।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিগত সময়ে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার নানামুখী উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশে নারী ও কন্যাশিশুরা অনেক দূর এগিয়েছে। কিন্তু তারা এখনো নানা ধরনের নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। কন্যাশিশুদের যথাযথ বিকাশ ও সুযোগ নিশ্চিত করা না হলে জাতির সমৃদ্ধি নিশ্চিত হবে না। কন্যাশিশুদের বিকাশের জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন গুড নেইবারস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাঈনুদ্দিন মাইনুল; সেভ দ্য চিলড্রেনের পরিচালক লিমা রহমান; শিশু অধিকার বিশেষজ্ঞ ও অধিকারকর্মী টনি মাইকেল গোমেজ; এডুকো বাংলাদেশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার সব ঘটনাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারিক কার্যক্রম শেষ করা, উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন রোধে সর্বস্তরের জন্য ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ নামে একটি আইন প্রণয়ন; কারা হেফাজতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে ভুক্তভোগীর পরিবর্তে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে প্রমাণ করতে হবে তিনি এ ঘটনা ঘটাননি—এমন বিষয় যুক্ত করে প্রচলিত আইনের বিধান সংশোধন করা; শিশু সুরক্ষায় পৃথক অধিদপ্তর গঠন; কন্যাশিশুদের প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা; প্রযুক্তির নেতিবাচক দিক থেকে তাদের রক্ষা করাসহ ১০টি সুপারিশ করা হয়।