Home দুর্ণীতি রবিউল আউয়াল মাস এমন এক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যার কোনো তুলনা নেই
সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩

রবিউল আউয়াল মাস এমন এক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যার কোনো তুলনা নেই

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ রবিবার থেকে ১৪৪৫ হিজরি সনের পবিত্র রবিউল আউয়াল মাস গণনা শুরু হয়েছে। আর আরবী বছরের তৃতীয় মাস ‘রবিউল আউয়াল’ এ মাস খুবই ফজিলত ও বরকতের মাস। অধিকাংশ আলেমগণের মতে রমযানের পরই রবিউল আউয়ালের মর্যাদা। রমযান মাসের মর্যাদা অধিক হওয়ার কারণ এ মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে। আর রবিউল আউয়াল মাসের মর্যাদা অধিক হওয়ার কারণ, এ মাসে নবী করিম (সাঃ) পবিত্র মক্কা শরীফে ভূমিষ্ঠ হয়েছেন এবং এ মাসেই মদীনা শরীফে নবী করিম (সা.) ইন্তেকাল করেছেন। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। যিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ্ নেই।নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশে অসংখ্য দরূদ, যার পরে আর কোনো নবী নেই।

রাহমাতুললিল আলামিন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি প্রিয় নাম যা প্রত্যেক মুসলিম তার অন্তরে মহব্বতের সঙ্গে স্মরণ করে থাকে।আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘হে রাসুল আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমাকে অনুসরণ করো, যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালোবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১)আর মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালবাসা ও তাঁর প্রদর্শিত পথ অনুযায়ী জীবন-যাপন করা ঈমানের অংশ। এ প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী (রহ.) তার কিতাবে স্বতন্ত্র একটি শিরোনাম এনেছেন, যার অর্থ ‘নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভালবাসা ঈমানের অঙ্গ’। বিশিষ্ট সাহাবী আনাস (রা.) ও আবূহুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ওই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ আমি তার নিকট নিজ পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সকল মানুষ হতে প্রিয় না হবো’। (বুখারী শরীফ : হা: ১৫, মুসলিম শরিফ: হা: ৪৫, মুসনাদে আহমদ: ১২৪৩)।

আর আমলের দিক দিয়ে কারো মধ্যে যত কমতিই থাকুক, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মহব্বত তার অন্তরে ততই গভীর। এ মহব্বতের কোন তুলনা নেই। মুমিনের দিলে যে কারণে আল্লাহতাআলার মহব্বত গভীর, সে কারণেই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মহব্বত গভীর হওয়া স্বাভাবিক। আল্লাহপাক বলেন, ‘যারা ঈমানদার তাদের মহব্বত গভীর হওয়া স্বাভাবিক’ (সূরা বাকারা: ১৬৫)। আল্লাহপাক আবার বলেন, ‘হে রাসুল! আপনি বলে দিন যে যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবেসে থাক, তা হলে আমার অনুকরণ করো, তা হলে আল্লাহই তোমাদের ভালোবাসবেন। এ দু’টি আয়াত থেকে বোঝা গেল যে মুমিন আল্লাহকেই বেশি ভালোবাসেন এবং এ ভালোবাসা প্রকাশের একমাত্র পথ হলো রাসুলের অনুসরণ, অনুকরণ ও আনুগত্য।

কিন্তু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসা ছাড়া কি তাঁর আনুগত্য সম্ভব? তাই আল্লাহকে ভালোবাসার স্বাভাবিক পরিণতিই হলো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালোবাসা কি পরিমাণ থাকা উচিত সে কথা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন- ‘তোমাদের কেউ সত্যিকারের মু’মিন হবে না, যে পর্যন্ত আমি তার নিকট তার পিতা, পুত্র ও সকল মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় বলে গণ্য না হবো।’ আল্লাহপাক পিতা-মাতা, স্ত্রী-পুত্র, ভাই-বোন আত্মীয়স্বজনকে ভালোবাসা কর্তব্য বলে জানিয়েছেন। কিন্তু কারো প্রতি ভালোবাসা যেন রাসূলের চেয়ে বেশি না হয়, বরং সবার চাইতে যেন রাসূলের প্রতি ভালোবাসা অধিকতর গভীর ও তীব্র হয়, সে কথাই এ হাদিসে বলা হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হলো যে, আমাদের ভালোবাসা রাসূলের জন্য সবচেয়ে বেশি কি না তা যাচাই করার উপায় কি? এর হিসাব নেয়া কঠিন নয়। অন্য কোনো মানুষের প্রতি ভালোবাসার দাবি পূরণ করতে গিয়ে যদি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাফরমানি করা হয় তাহলে বোঝা গেল যে রাসুলের প্রতি ভালোবাসা অন্যের তুলনায় কম। বাস্তবে এটাই দেখা যায় যে মানুষ প্রিয়জনের প্রতি স্নেহ-ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে তাদের মঙ্গলের নিয়তেই এমন কিছু করে, যা করতে গিয়ে আল্লাহ ও রাসুলের হুকুম অমান্য করে। রাসুলের প্রতি গভীর ভালোবাসা থাকলে সে এমনটা করবে না। যারা এমন বোকামি করে তাদের সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘যে অন্য লোকের দুনিয়া বানানোর জন্য নিজের অখিরাত নষ্ট করে, কিয়ামতের দিন সে সবচেয়ে বেশি নিকৃষ্ট বলে গণ্য হবে।

বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই রাষ্ট্রীয়ভাবে সপ্তাহ, পক্ষ ও মাসব্যাপী রবিউল আউয়াল উপলক্ষ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম উৎসব হিসেবে ১২ রবিউল আউয়াল বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। আবার রাষ্ট্রীয়ভাবে সবার জন্য থাকে সাধারণ ছুটি। মাসটিতে ইসলামি বইমেলাসহ নানা কর্মসূচিও গ্রহণ করে অনেক দেশ। কেউ কেউ মাসব্যাপী প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম, বেড়ে ওঠা, নবুয়ত, হিজরত, রাষ্ট্রগঠন, ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন, আন্তর্জাতিক জীবন, সমাজ সংস্কারসহ জন্ম থেকে ইন্তেকাল পর্যন্ত জীবনের বিভিন্ন দিক ও বিষয় নিয়ে সীরাতুন্নবি শিরোনামে অনুষ্ঠান উদযাপন করে থাকেন। পরিশেষে বলতে চাই, মানবজাতির সচেতন প্রত্যেক ব্যক্তিই তাকে জীবনের সেবক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ বলে মনে করেন। আমরাও মনে করি, শান্তি-সম্প্রীতিতে ভরা সমৃদ্ধ দেশ গড়তে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই।

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে সুরা আহজাবের ২১ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘তোমাদের জন্য রাসুল (সা.)-এর জীবনে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ, তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।’ হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনকে আদর্শরূপে গ্রহণ করলে সুফল তারাই পাবেন, যারা আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করেন এবং আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখেন। উল্লেখিত গুণ অর্জন না করে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা করলে শতভাগ সুফল লাভ করার সম্ভাবনা নেই। মানবজাতির জন্য মুক্তি ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব দিয়ে আল্লাহতায়ালা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছিলেন। একটি নির্দিষ্ট সময় দুনিয়ার জীবনে দায়িত্ব পালনের পর মহান আল্লাহ তার প্রিয় হাবিবকে তার কাছে নিয়ে গেছেন। কিন্তু আল্লাহর নাজিল করা পবিত্র কোরআন ও তার হাবিবের আদর্শ আমাদের মাঝে আজও আছে। কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, তার উম্মত বলে পরিচয়দানকারী মুসলিম উম্মাহর একটি বিশাল অংশ আজ দিকভ্রান্ত। তারা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ ছেড়ে মনগড়া বিভিন্ন মতবাদের মধ্যে মুক্তি অন্বেষণ করছে। আল্লাহ প্রদত্ত জীবনবিধান ছেড়ে মিথ্যা মরীচিকার পিছনে ছুটে দুনিয়া ও আখেরাত ধ্বংস করছে। গোটা মানবজাতিকে দাঁড় করিয়েছে ধ্বংসের মুখোমুখি। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে আমাদের আরও বেশি বেশি রাসুল (সা.)-এর সিরাত অধ্যয়ন করতে হবে। তার প্রদর্শিত নীতি ও পদ্ধতি অনুসরণ করে ইসলামের বিজয়ের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আর বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অতুলনীয় সুমহান আদর্শ নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন এবং অন্যদের জীবনেও বাস্তবায়নের আহ্বান ও প্রচেষ্টাই মুসলিম উম্মাহর রবিউল আউয়ালে মাসের অঙ্গীকার। এটাই হোক, এবারের এই রবিউল আউয়াল মাসের শপথ।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *