আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সব স্পষ্ট হয়ে যাবে: মির্জা ফখরুল
বাংলাদেশ এক ‘ভয়াবহ’ অবস্থার মধ্যে আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব থাকবে কি না, গণতান্ত্রিক অধিকার থাকবে কি না, জনগণ তার প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবে কি না—সবকিছু নির্ভর করছে আগামী কয়েকটা দিনের ওপর।
আজ বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে সাবেক বিএনপি নেতা আ স ম হান্নান শাহর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
এই অবস্থা থেকে বেরোতে না পারলে গোটা জাতির অস্তিত্ব বিপন্ন হবে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
সাধারণ মানুষকে রাজপথে নামিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমার একটাই কথা, যাঁরা সংগ্রাম করছেন, তাঁদের আরও বেশি করে শক্তিশালী হয়ে এই সংগ্রামকে রাজপথে বিস্তৃত করে দিয়ে সাধারণ মানুষকে নামিয়ে আনতে হবে। সাধারণ মানুষকে যখন রাজপথে নামিয়ে আনতে পুরোপুরিভাবে সক্ষম হব, সেদিনই আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত হবে।’
বিএনপির মহাসচিব আবারও বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে এ দেশের মানুষ কোনো নির্বাচন করবে না। অন্য সব রাজনৈতিক দলও একই কথা বলছে।
দেউলিয়া হয়ে দল ভাঙার চেষ্টা
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে এখন বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। নতুন দল তৃণমূল বিএনপিতে সাবেক দুই নেতার যোগদানের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘ওরা কতটা রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে…এখন দল ভাঙার চেষ্টা করে। দল কখন ভাঙতে যায়, যখন সে বোঝে দুর্বল। আজকে তারা আমাদের দলছুট, বহিষ্কৃত লোকজনকে নিয়ে আবার দল তৈরি করে ঝামেলা করতে চায়। আমরা খুব পরিষ্কারভাবে বলছি, এগুলো করে কোনো লাভ হবে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। মানুষ একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন চায় সব দলের অংশগ্রহণে। এর বিকল্প তারা কিছু চায় না, মেনেও নেবে না।
‘দমিয়ে রাখতে পারবে না’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব পালন করছি। আমরা প্রায় এক বছর ধরে রাস্তায় নেমেছি, এর মধ্যে আমাদের ২২ জন তরুণ-যুবক নেতার প্রাণ গেছে রাস্তায় পুলিশের গুলিতে, অসংখ্য নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, অসংখ্য জেলে গেছে। তারপর আমাদের কখনো দমিয়ে রাখতে পারছে না, পারবে না।’
চলমান রোডমার্চ কর্মসূচির উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, রোডমার্চগুলোতে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করছে। তারা এই রোডমার্চকে স্বাগত জানাচ্ছে এবং এই সরকারের পতন চাচ্ছে।
‘ওরা দেশকে নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র বানিয়েছে’
ক্ষমতাসীনেরা দেশকে ‘ভয়াবহ’ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে বলে অভিযোগ করে এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকের সঙ্গে নিজের কথোপকথনের উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আল-জাজিরার করেসপনডেন্টের সঙ্গে আমার কথা হচ্ছিল। তিনি বলছেন যে, “এ কোন সমাজ, আমি একটা রেস্টুরেন্টে কথা বলতে পারব না, বিয়েবাড়িতে কিংবা উৎসবে গিয়ে সেখানে আমি আমার মনের কথা বলতে পারব না?”’
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের বহু বুদ্ধিজীবী এখন টেলিভিশনের টক শোতে আসেন না। কারণ কী?, তাঁদের ভয় দেখানো হয় যে আপনারা যদি সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাহলে আপনাদের বিপদ হবে। বিপদের মধ্যে সবচেয়ে স্পর্শকাতর জায়গায় আঘাত করত তারা। ছেলেমেয়েরা যদি স্কুল-কলেজে পড়ে, তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, হুমকি দেওয়া হয় অদৃশ্য জায়গা থেকে…এই রাষ্ট্রে আমরা বাস করছি।’
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ স ম হান্নান শাহ স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে এই আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ, প্রয়াত হান্নান শাহর ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান প্রমুখ। শাহ স্মৃতি সংসদের সভাপতি ফজলুল হকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মজিবুর রহমান।