‘তুই ক্যানে আইচিস’ বলে স্ত্রীর মাথায় রড দিয়ে আঘাত, মৃত্যুর পর স্বামী পলাতক
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকায় এক গৃহবধূকে মাথায় রড দিয়ে আঘাত করে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে। এ সময় মাকে বাঁচাতে গেলে ওই দম্পতির কিশোরী মেয়ের মাথায়ও আঘাত করা হয়। গতকাল সোমবার রাত নয়টার দিকে পৌর এলাকার সুমিরদিয়া ডাঙ্গাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত নারীর নাম সাদিয়া খাতুন ওরফে নয়নতারা (৩৫)। ঘটনার পর থেকে তাঁর স্বামী আনোয়ার হোসেন পলাতক।
গুরুতর আহত অবস্থায় ওই দম্পতির মেয়েকে গতকাল রাতেই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সোহরাব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কিশোরীর মাথায় রড দিয়ে পরপর দুটি আঘাত করা হয়েছে। আঘাতের কারণে বড় ধরনের ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন সুমিরদিয়া ডাঙ্গাপাড়ার আনসার আলীর ছেলে। ১৮ বছর আগে মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের আনসার আলীর মেয়ে সাদিয়া খাতুনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। আনোয়ার চুয়াডাঙ্গার কোর্টপাড়ায় ‘ক্যালকাটা লন্ড্রি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। আনোয়ার-সাদিয়া দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়েটি (১৭) চুয়াডাঙ্গা শহরের একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ে এবং ছেলে (৯) মেহেরপুর সদর উপজেলার একটি মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান লালন এবং সদর থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ভবতোষ রায় লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর রাত ১১টার দিকে সদর হাসপাতালের মর্গে নেন। তিনি বলেন, নিহত নারীর মাথার গভীর ক্ষত আছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাব্বুর রহমান বলেন, হত্যার ঘটনায় মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
নিহত সাদিয়া খাতুনের শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলেন, দোতলা বাড়ির উপরতলায় আনোয়ার হোসেন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন। সেখানেই ঘটনা ঘটেছে।
অভিযুক্ত আনোয়ারের বড় ভাবি আসমা খাতুনের অভিযোগ, তাঁর দেবর আনোয়ার হোসেন কয়েক বছর ধরে সংসারের কোনো খরচ দেন না, মেয়ের পড়াশোনার খরচ দেন না, স্ত্রীকে অহেতুক সন্দেহ করেন। সাদিয়া বাবার বাড়ি থেকে টাকাপয়সা ও খাবার এনে সংসার চালান।
আহত জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, তার বাবা আনোয়ার হোসেন দীর্ঘদিন ধরে তাদের খোঁজখবর নিতেন না। সংসারের খরচ নিয়ে প্রায়ই মা–বাবার ঝগড়াঝাঁটি হতো। রাগে-ক্ষোভে ২২ থেকে ২৩ দিন আগে মা তাকে নিয়ে বাবার বাড়িতে যান। এরপর ব্যাগভর্তি বাজার নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় বাড়িতে ফেরেন। রাতে খাওয়া শেষে তাঁরা মা-মেয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেওয়ার সময় বাবা এসে ‘তুই ক্যানে আইচিস’ বলে মাকে গালাগালি করেন এবং লোহার রড দিয়ে আঘাত করেন। ঠেকাতে গেলে সে মাথায় রডের আঘাত পায়।
নিহত সাদিয়া খাতুনের মা মাছুরা খাতুন অভিযোগ করেন, ‘যদি জানতাম মেয়েডার এই আসাই শেষ, থালি আর পাটাতাম না।’