Home বিনোদন আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ডিম আলু পেঁয়াজ
সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৩

আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ডিম আলু পেঁয়াজ

বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েও ব্যবসায়ীরা তা আমলে নিচ্ছে না। প্রতিদিন বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযানও চালাচ্ছে। কিন্তু বাজারে তার কোন প্রতিফল নেই। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে না তিন নিত্যপণ্য ডিম, আলু ও পেঁয়াজ। খুচরা বাজারে এক কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায় এবং ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা হালি।

গতকাল রোববার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ভোক্তার অভিযোগ সরকার যদি সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারে তাহলে দাম নির্ধারণ করে কোন লাভ নেই। অতি মুনাফা লোভী এসব ব্যবসায়ী সরকারের হুশিয়ারিকে আমলে নিচ্ছে না। তারা জানেন(সিন্ডিকেট) সরকার জনগনকে দেখানোর জন্যই এ হুঁশিয়ারি দিচ্ছে। কার্যত কিছুই হবে না। আর এজন্যই বিনা কারণে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম।

ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার ১০ কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলাও করেছে কিন্তু তার পরেও বাজারে ডিমের দাম কমছে না। সরকার ডিম আমদানির কথা বললেও এখনো ডিম আমদানি করেনি। এতে করে সিন্ডিকেট বহাল তবিয়তেই তাদের কারসাজি চালিয়ে যাচ্ছে। ভোক্তা যতই ক্ষোভ প্রকাশ করুক না কেন আসলে সে অসহায়। মুখে ক্ষোভ প্রকাশ করা ছাড়া আসলে তার করার কিছুই নেই।

অথচ প্রতি পিস ডিম ১২ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা বিক্রির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। সরকারি এ আদেশ না মেনে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন ক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, বেশি দামে কিনে আনার কারণে তারা এই দামে পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে।

এদিকে প্রতিদিন বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালাচ্ছে। এদিন দুপুরে রাজধানীর ট্যানারি বাজারে অভিযান চালিয়ে দুই প্রতিষ্ঠানকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় সরকারের নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি করতে আহ্বান জানান ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এর আগে, শনিবার নিউমার্কেটের বনলতা কাঁচাবাজার ও মোহাম্মদপুরের টাউন হল কাঁচাবাজারে অভিযান চালিয়ে তিন প্রতিষ্ঠানকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে অধিদপ্তর।

ডিমের দাম বেশি রাখা, ক্রয় রসিদ না থাকা এবং মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে জরিমানা করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো বনলতা কাঁচাবাজারের জনপ্রিয় এন্টারপ্রাইজ, ফাতেমা ট্রেডার্স এবং টাউন হল কাঁচাবাজারের মিজানের ডিমের দোকান।

এর আগে, বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। একই সঙ্গে ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথমে অল্প পরিমাণে আমদানি করা হবে। এরপরও যদি দাম না নিয়ন্ত্রণে থাকে তাহলে ব্যাপক আকারে আমদানি করা হবে।

তিনি বলেন, পেঁয়াজ ও আলুর দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ভোক্তা পর্যায়ে আলুর দাম হবে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। আর পেঁয়াজের দাম ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বিকেল থেকেই অভিযানে নামবে। তারা মাঠে থেকে এটি মনিটরিং করবেন।

এডভোকেট শাহ আলম সরকার বলেন, এ সিন্ডিকেট জনগণের পকেট কেটে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করছে। অথবা এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সরকার উল্টো খুচরা বিক্রেতাকে এক দুই হাজার টাকা জরিমানা করছে। এতে আসলে তেমন কোন প্রভাব পড়বে না। এভাবে কোন দিনই বাজার মনিটরিং করা যাবে না। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে অবশ্যই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি আরও জানান,আমাদের কল্ড স্টরে লাখ লাখ টন আলু রয়েছে। প্রতি বছরই চাহিদার চেয়ে প্রায় ১০ লাখ টন বেশি আলু উৎপাদন হয়ে থাকে। তারপরেও কেন আলুর দাম বাড়ছে। আলু তো আর আমরা আমদানি করি না। এখানে তো আর ডলারের প্রভাব নেই। নেই যুদ্ধের কোন প্রভাব। তাহলে কেন দাম বাড়ছে। তার কোন উত্তর নেই। সরকার এখানেও কেন নীরব রয়েছে।

নির্ধারিত দামে বিক্রি না করা নিয়ে আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা রাসেল বলেন, আমি গতকাল (শনিবার) রাতে আলু কিনেছি। আমি তো কম দামে কিনতে পারিনি, বিক্রি করবো কীভাবে। আমার কেনা পড়েছে ৪২ টাকা, তারপর ভাড়া, নষ্ট আলু বাদ দিয়ে ৫০ টাকাতেই বিক্রি করতে হয়।

আরেক বিক্রেতা হালিম বলেন, পাইকাররা দাম না কমালে আমরা কম দামে কীভাবে বিক্রি করবো? বাজার করতে আসা সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার তো দাম নির্ধারণ করে দেয়, কিন্তু আমাদের কিনতে হয় বেশি দামেই।

ডিম বিক্রেতা আব্দুল জব্বার প্রতি ডজন ডিম ১৫০ টাকায় বিক্রি করছিলেন। কেন বেশি দামে বিক্রি করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক ডিম ভাঙা থাকে। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। আরেক ডিম বিক্রেতা সালাম নির্ধারিত দামেই ডিম বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, সরকার যেহেতু দাম নির্ধারণ করেই দিয়েছে, তাহলে এর বেশি বিক্রি করার উপায় নাই।

মায়ের দোয়া জেনারেল স্টোরের সোহান বলেন, আমার নতুন তেল উঠানো হয়নি, তাই আগের দামেই বিক্রি করছি। নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে কিনা তা তদারকি করতে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। মূল্য তালিকা না থাকায় ও বেশি দামে বিক্রি করায় পেঁয়াজের দুই পাইকারি ব্যবসায়ীকে ৫ হাজার টাকা এবং একজন ডিম ব্যবসায়ীকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার।

অভিযান শেষে আব্দুল জব্বার বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এবং ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের মহাপরিচালকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সারা দেশে ডিম, সয়াবিন তেল, আলু, পেঁয়াজের যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার, তা তদারকি করার জন্যই মূলত আজকের এই অভিযান।

তিনি বলেন, যেহেতু গতকালই এই মূল্য তালিকা নির্ধারণ করে হয়েছে তাই ব্যবসায়ী মহল এখনও এই ব্যাপারে সিনসিয়ার না, তারা আগের মূল্য তালিকাই রেখে দিয়েছে। তিনটি প্রতিষ্ঠানে আমরা অনিয়ম পেয়েছি। ডিমের একটি প্রতিষ্ঠানে আমরা অতিরিক্ত দামে বিক্রি করার অনিয়ম পেয়ে তাকে আইনের আওতায় এনেছি। আর অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ধারিত দামেই বিক্রি করছে।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *