Home অপরাধ ‘বুকের মানিকরে এত কষ্ট দিল কেন, তাকে ছাড়া বাঁচব কীভাবে’
সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩

‘বুকের মানিকরে এত কষ্ট দিল কেন, তাকে ছাড়া বাঁচব কীভাবে’

সারাক্ষণ পুরো বাসা মাতিয়ে রাখত সাত বছরের কন্যা শিশুটি। কর্মজীবী মা-বাবা আদরের সন্তানের সঙ্গে সময় কাটাতে প্রতিদিন বাসায় ফেরার অপেক্ষায় থাকতেন। কিন্তু আজ রোববার দুপুরে প্রতিবেশীর কাছ থেকে খবর পেয়ে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বাসায় ফিরে আসেন মা-বাবা। এসে দেখেন, তাঁদের বুকের ধন আর কথা বলে না। বাসায় পড়ে আছে হাত–পা বাঁধা তার নিথর দেহ। গলায় আঘাতের চিহ্ন।

একমাত্র সন্তান মারিয়া আক্তারকে (৭) এই অবস্থায় দেখে বিলাপ করতে থাকেন মা নাজিয়া আক্তার। আর বলতে থাকেন, ‘বুকের মানিকরে এত কষ্ট দিল কেন, তাকে ছাড়া বাঁচব কীভাবে!’

শিশু মারিয়ার বাবা মো. বাকের রিকশাচালক। মা নাজিয়া পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে। চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানার মৌলভী পুকুরপাড় এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন তাঁরা। মা-বাবা কাজে চলে গেলে বাসায় একা থাকে মারিয়া। মাঝেমধ্যে সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়তে যায়।

আজ দুপুরে নগরের চান্দগাঁও মৌলভী পুকুরপাড় এলাকার ভাড়া বাসা থেকে মারিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে শিশুটির লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে লাশ দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়িতে। এই ঘটনায় হওয়া মামলায় পুলিশ রাকিবুল ইসলাম (২২) নামের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে।

শিশুটির চাচা মো. জুয়েল প্রথম আলোকে বলেন, মা-বাবা কাজে চলে গেলে শিশুটি বাসার দরজা খোলা রেখে খেলাধুলা করে। আশপাশের প্রতিবেশীরা তার খোঁজ নেয়। আজ বেলা ১১টার দিকে এক প্রতিবেশী ভেতর থেকে দরজা বন্ধ দেখে শিশু মারিয়াকে ডাকাডাকি করতে থাকেন। কিন্তু কোনো সাড়া না পাওয়ায় তিনি আশপাশের অন্য লোকজনকেও ডেকে আনেন। এরপরও দরজা না খোলায় তাঁরা জোরে ধাক্কা দিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে দরজা খুলে দৌড়ে এক তরুণ পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন তাঁর পিছু নেন, কিন্তু ধরতে পারেননি।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ স্থানীয় লোকজনদের নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ওই তরুণকে ধরার চেষ্টা করে। স্থানীয় ব্যক্তিরা যতটুকু পর্যন্ত তাঁকে ধাওয়া করেছিলেন, সেই স্থানে পুলিশ তল্লাশি শুরু করে। একপর্যায়ে একটি ডোবার মধ্যে ওই তরুণকে লুকিয়ে থাকতে দেখা যায়। তাঁকে সেখান থেকে তুলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তাঁর নাম রাকিবুল হাসান বলে জানান তিনি। শিশুটিকে গলা টিপে খুন করার কথা স্বীকার করেন রাকিবুল।

ওসি খাইরুল ইসলাম আরও বলেন, গ্রেপ্তার রাকিবুল পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, চুরি করতে ওই বাসায় ঢুকেছিলেন। শিশু মারিয়া চিৎকার করায় তাকে গলা টিপে হত্যা করেছেন। পুলিশের ধারণা, শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এরপর হত্যা করা হয়। তবে ধর্ষণের বিষয়টি অস্বীকার করেন রাকিবুল। ওসি আরও বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিষয়টি স্পষ্ট হবে। শিশুটির পরিবারের করা মামলায় গ্রেপ্তার রাকিবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।

এদিকে আজ বিকেলে শিশুটিকে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে আনা হয়। সেখানে আসেন মা-বাবা ও স্বজনেরা। মর্গের সামনে মা নাজিয়া আক্তার আহাজারি করতে থাকেন। তিনি বলতে থাকেন, ‘বুকের মানিকরে এত কষ্ট দিল কেন? সে মরতে পারে না। আমার বুকে কাকে নিয়ে ঘুমাব! দুধের শিশুটারে এত কষ্ট দিয়ে মারল কেন?’ তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন শিশুটির ফুফাতো ভাই মো. রিদুয়ান।

একই অবস্থা বাবা মো. বাকেরের। মর্গের সামনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মেয়েটাকে মানুষ করার জন্য স্বামী-স্ত্রী দুজন এত কষ্ট করছেন। বিবাহিত আট বছরের জীবনে তাঁর একমাত্র সন্তান মারিয়া। দিন শেষে সব কষ্ট ভুলে থাকতেন বাসায় ফিরে মেয়ের মুখটা দেখে। তাঁর মেয়েকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। তিনি গ্রেপ্তার রাকিবুলের ফাঁসি চান।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *