লিবিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় ২ হাজার মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা
গত সপ্তাহে গ্রিসে আঘাত হানার পর, ঝড় ড্যানিয়েল রবিবার ভূমধ্যসাগরের ওপর দিয়ে চলে যায়। অতি শক্তিশালী নিম্নচাপের ফলে ভারি বর্ষণে গেল সপ্তাহে গ্রিসেও ভয়াবহ বন্যা হয়। এ ধরনের আবহাওয়া গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়, আটলান্টিকের হারিকেন এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় টাইফুনের মতো।
পূর্ব লিবিয়ার নিয়ন্ত্রণকারী লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির (এলএনএ) মুখপাত্র আহমেদ মিসমারি একটি টেলিভিশন সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, দেরনায় ভারি বর্ষণের তীব্র চাপে বাঁধ ভেঙে গেছে। এর ফলে সৃষ্ট বন্যায় বাড়িঘর ও রাস্তা ধ্বংস হয়েছে। শহরের দক্ষিণে দুটি বাঁধ ধসে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।
মিসমারি আরো বলেন, ‘স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আশপাশের সব এলাকা থেকে ধ্বংসাবশেষ সাগর টেনে নিয়ে গেছে।’ তিনি উল্লেখ করেছেন, নিখোঁজের সংখ্যা ৫ থেকে ৬ হাজার। এর আগে এই অঞ্চলের রেড ক্রিসেন্ট সহায়তা গোষ্ঠীর প্রধান বলেছিলেন, দেরনার মৃতের সংখ্যা ১৫০ এবং তা বেড়ে ২৫০ হতে পারে।
লিবিয়ার পশ্চিমা-সমর্থক সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওথম্যান আব্দুল জলিল সোমবার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহর দেরনা সফর করেছেন। তিনি এর কিছু অংশকে ‘ভূতের শহর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
আব্দুল জলিল লিবিয়ার আলমাসার টিভিকে বলেন, (দেরনায়) পরিস্থিতি ভয়াবহ…। অনেক জায়গায় এখনো মরদেহ ভাসছে। সেখানে পরিবারগুলো বাড়ির ভেতর আটকা পড়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে ভুক্তভোগীরা রয়েছেন। মনে হয়, লোকেরা সমুদ্রে ভেসে গেছে এবং আগামীকাল (মঙ্গলবার) সকালে আমরা তাদের অনেককে খুঁজে পাব।
আব্দুল জলিল আরো বলেন, দেরনায় ছয় হাজারের মতো লোক নিখোঁজ। ভূমধ্যসাগরের সীমান্তবর্তী দেশটির উত্তর-পূর্বের বেশ কয়েকটি শহরজুড়ে বন্যা হলেও আক্রান্ত হয়েছে শহরটির একটি অঞ্চল।
লিবিয়ার ইমার্জেন্সি অ্যান্ড অ্যাম্বুল্যান্স কর্তৃপক্ষের প্রধান ওসামা আলি সিএনএনকে বলেন, বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর সব পানি দেরনার কাছের একটি এলাকায় চলে যায়, যেটি একটি পাহাড়ি উপকূলীয় এলাকা। তিনি বলেন, গাড়ি-ধ্বংসাবশেষ বহনকারী শক্তিশালী কর্দমাক্ত স্রোতে উপত্যকার বাড়িগুলো ভেসে গেছে। নগরীতে ফোনের লাইনও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, যা উদ্ধার অভিযানকে জটিল করে তুলছে। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণে শ্রমিকরা দেরনায় প্রবেশ করতে পারেনি।
লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির মুখপাত্র মিসমারি বলেন, আল-বায়দা, আল-মার্জ, তব্রুক, তাকেনিস, আল-বায়াদা ও বাত্তাহসহ বেশ কয়েকটি শহর বন্যার কবলে পড়েছে।
লিবিয়া রাজনৈতিকভাবে পূর্ব এবং পশ্চিম দুই ভাগে বিভক্ত। ২০১১ সালের বিদ্রোহে দীর্ঘ সময়ের শাসক গাদ্দাফির পতন এবং পরে নিহত হওয়ার পর থেকে লিবিয়ায় একটি কেন্দ্রীয় সরকারের অভাব রয়েছে। এর ফলে দেশটিতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। বিভক্তির কারণে বিপর্যস্ত অঞ্চলগুলোতে উদ্ধার অভিযান অনেক কঠিন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সহায়তা ও অন্য দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আবেদন জানিয়েছে দেশটি।
সূত্র : আলজাজিরা, সিএনএন, রয়টার্স