Home জেলা রাজনীতি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট আসছেন আজ, যা নিয়ে আলোচনা হতে পারে
সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট আসছেন আজ, যা নিয়ে আলোচনা হতে পারে

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ দিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পর আজ রোববার সন্ধ্যায় ঢাকায় আসছেন। ২৪ ঘণ্টার কম সময়ের এই সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এই সফরের মধ্য দিয়ে ইউরোপের শক্তিশালী একটি দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক জোরদারের প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ।

ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, সাধারণত কোনো দেশের সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানেরা এমন দেশে সফরে যান না। তাই মাখোঁর হঠাৎ ঢাকা সফর কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। ১৯৯০ সালে ফ্রান্সের তখনকার প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁ বাংলাদেশে এসেছিলেন।

ঢাকায় আসছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ

এমানুয়েল মাখোঁ

অবশ্য ৩৩ বছর আগের তুলনায় এখনকার প্রেক্ষাপট একেবারে ভিন্ন। বৈশ্বিক পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে ঘিরে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং অর্থনীতি মিলিয়ে বাংলাদেশের গুরুত্ব বেড়েছে। আবার আফ্রিকা মহাদেশের দেশ নাইজার, বুরকিনা ফাসো, মালি, গ্যাবনসহ বেশি কিছু দেশে সামরিক অভ্যুত্থানের পর ওই অঞ্চলের সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্সের প্রভাব ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়েছে। ফলে বন্ধুত্ব জোরদারের মধ্য দিয়ে এশিয়ায় নতুন করে অবস্থান তৈরির বিষয়ে মনোযোগ দিচ্ছে ফ্রান্স।

প্রায় তিন দশক পর ফ্রান্সের কোনো প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই সফরের দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি স্যাটেলাইট এবং উড়োজাহাজের বিষয়ে এয়ারবাসের সঙ্গে দুটি এবং স্থানীয় সরকার প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য একটি সম্মতিপত্র সই হবে।

পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন

দুই সমঝোতা স্মারক

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখো
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখো

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামীকাল সোমবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় তিন দশক পর ফ্রান্সের কোনো প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই সফরের দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি স্যাটেলাইট এবং উড়োজাহাজের বিষয়ে এয়ারবাসের সঙ্গে দুটি এবং স্থানীয় সরকার প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য একটি সম্মতিপত্র সই হবে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সফরের সময় এবার নতুন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ নামের স্যাটেলাইটটি একটি আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট বা ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র, যার মাধ্যমে মূলত বাংলাদেশের স্থলভাগ ও জলভাগ পর্যবেক্ষণ করা হবে। এই স্যাটেলাইটের জন্য একটি রাডার এবং দুটি অপটিক্যাল রাডার তৈরি করে দেবে ফ্রান্স। আর ফ্রান্সের সহায়তায় স্যাটেলাইটের জন্য বাংলাদেশে কয়েকটি অপটিক্যাল রাডার তৈরি করা হবে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২–এর মাধ্যমে ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রটি পৃথিবীর ছবি তুলে বাংলাদেশে পাঠাবে। পুরো বাংলাদেশের স্থলভাগ এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের সামগ্রিক চিত্র পাওয়া যাবে। ফলে এর মাধ্যমে নজরদারি জোরদারসহ বাংলাদেশের কোথায়, কখন কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তার পথ সুগম হবে।

বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশের এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক প্রথম আলোকে বলেন, এয়ারবাস ও স্যাটেলাইট বিক্রির প্রস্তাব দেওয়ার পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রযুক্তি হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছিল। পরে এয়ারবাসের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, স্যাটেলাইটের জন্য একটি রাডার তারা তৈরি করে দেবে। বাকি অপটিক্যাল রাডার তৈরির জন্য বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন করা হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২–এর মাধ্যমে ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রটি পৃথিবীর ছবি তুলে বাংলাদেশে পাঠাবে। পুরো বাংলাদেশের স্থলভাগ এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের সামগ্রিক চিত্র পাওয়া যাবে। ফলে এর মাধ্যমে নজরদারি জোরদারসহ বাংলাদেশের কোথায়, কখন কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তার পথ সুগম হবে।

যে কারণে মাখোঁর ঢাকা সফর গুরুত্বপূর্ণ

যে কারণে মাখোঁর ঢাকা সফর গুরুত্বপূর্ণ

বাংলাদেশে স্যাটেলাইটের পাশাপাশি উড়োজাহাজ বিক্রির জন্য এয়ারবাস বেশ কয়েক বছর ধরে নানা স্তরে যোগাযোগ করে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত মে মাসে লন্ডনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে এয়ারবাসের ১০টি উড়োজাহাজ কেনার বিষয়ে যৌথ ঘোষণা সই হয়। এবার মাখোঁর ঢাকা সফরের সময় এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হবে।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় বাণিজ্য, প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক বিষয় প্রাধান্য পেলেও বাংলাদেশের নির্বাচন ও ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার কারণে এ সফর ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’। কারণ, এই সফরের মধ্য দিয়ে ইউরোপের একটি শক্তিশালী দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ বাড়ছে।

আলোচনায় যা আসতে পারে

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, মাখোঁর সফরে ফ্রান্সের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও অস্ত্র বিক্রির প্রসঙ্গগুলো আসতে পারে। বিশেষ করে ২০২১ সালে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে সম্মতিপত্র সই করেছিল। তাতে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আধুনিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রযুক্তি বিনিময়ের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় বাণিজ্য, প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক বিষয় প্রাধান্য পেলেও বাংলাদেশের নির্বাচন ও ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার কারণে এ সফর ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’। কারণ, এই সফরের মধ্য দিয়ে ইউরোপের একটি শক্তিশালী দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ বাড়ছে। আবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য সুবিধা আদায়ের সুযোগও তৈরি হতে পারে।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *