বর্ণিল আয়োজনে জবিতে জন্মাষ্টমী উৎসব পালন
তৌকির আহমেদ, জবি প্রতিনিধি: শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও নাম কীর্তনসহ নানা আয়োজনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) জন্মাষ্টমী উৎসব পালন করা হয়েছে। বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।
এদিন সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে একটি শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে শান্ত চত্বর এসে শেষ হয়।
বেলা ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভার পূর্বে হরিনাম কীর্তন ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়। সভার শুরুতে গীতাপাঠ করেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সৌরভ ঘোষ এবং স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী জয় শর্মা। এসময় জয় শর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসে উপাসনালয় স্থাপন ও সম্মিলিতভাবে শারদীয় দুর্গোৎসব পালনের উদ্যোগ নেওয়া সহ কয়েকটি দাবি জানান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশনের (পেট্রোবাংলা) ব্যবস্থাপক সাত্ত্বিক দাস বলেন, ভগবান এই জড় জগৎ সৃষ্টি করেছেন এবং তার মাধ্যমেই এই জড় জগৎ প্রকাশিত হয়েছে। ভগবানকে বোঝার জন্য যে বিষয়টি অবশ্যই প্রয়োজন সেটি হচ্ছে অসাম্প্রদায়িকতা। ভগবানকে পাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের ভোগের লালসাটি বাধাস্বরূপ। ভগবান চাইলে সব কিছুই করতে পারেন এই জগৎ-সংসারে কোনো কিছুই তার জন্য অসম্ভব নয়। আমাদের সবার উচিত সম্প্রীতি বজায় রেখে চলা।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, শ্রীকৃষ্ণের যেসব বাণীগুলো আছে সেগুলো আমার কছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। কোনো ধর্মকেই ঘৃণা করা যাবে না। ঘৃণা নিয়ে কেউ বড় হতে পারে না। পুরান ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অসাম্প্রদায়িক চেতনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবেই আছে ও থাকবে। ধর্ম পালনে কোনো হীনতা থাকা উচিত নয়।
তিনি বলেন, মন্দির নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে উপাচার্য মহোদয়ের পরামর্শে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি যাচাই বাছাই করে রিপোর্ট দিলে আমরা সে বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. পরিমল বালা। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আজকের উৎসব যথাযথভাবে পালন সম্ভব হচ্ছে। এটিই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত। আমরা সহানুভূতিশীল মনোভাব ধারণ করে এগিয়ে যাব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শুভ সাহা’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা প্রদান করেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সুরঞ্জন কুমার দাস,মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. অশোক কুমার সাহা, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বিভাস কুমার সরকার,বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল, অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. কাজী মো. নাসির উদ্দীন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহীম ফরাজী ও সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইন।
আলোচনা সভা শেষে সবার মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ,শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।