জবি শিক্ষার্থীকে মারধর ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ
জবি প্রতিনিধি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রসায়ন বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী মো. ইব্রাহিম জনিকে মারধর ও ছিনতাইয়ের পাশাপাশি শিবির ট্যাগ দিয়ে ক্যাম্পাসের গেইটে ঝুলিয়ে রাখার হুমকি প্রদানের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়েরই দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্তরা হলেন দর্শন বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের মো. মেহেদি ও ২০১৯-২০ সেশনের ইকবাল মাহমুদ রানা। তারা দুইজনই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইনের অনুসারী।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামালের কাছে অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ইব্রাহিম জনি ।
অভিযোগ পত্রে ওই শিক্ষার্থী উল্লেখ করেন, “গত ২ সেপ্টেম্বর দুপুর আড়াইটার দিকে ১৮তম ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন উপলক্ষে আমাদের বিভাগের সাজসজ্জার কাজ শেষ করে ক্যাম্পাস থেকে বের হচ্ছিলাম। সেসময় অর্থনীতি বিভাগের ১৫ব্যাচের ইকবাল মাহমুদ রানা এবং দর্শন বিভাগের ১২ ব্যাচের মো. মেহেদি আমার পথ রোধ করেন এবং জিজ্ঞাসা করেন, আমি কেন সৌরভ ভাইয়ের পোস্ট শেয়ার করেছিলাম? (সৌরভ দাস রসায়ন বিভাগ ১৬ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী। যাকে গত ৩১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে দফায় দফায় হামলা করে মারাত্মক আহত করা হয়)। তারা বলেন, তুই ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে পোস্ট শেয়ার দিয়েছিস কেনো? আমি বলেছিলাম ভাই এটা আমাদের ডিপার্টমেন্টের সিনিয়রকে তুচ্ছ ঘটনায় মারধর করা হয়ছিল। সেজন্য সবাই শেয়ার করেছিলাম। পরে তারা বলেন যে তোদের ব্যাচের সব পোলাপান দেয় নাই। শুধু তুই শেয়ার দিয়েছিস কেন। কারণ নিশ্চয়ই তুই শিবির করস। এমন নানা ধরনের প্রশ্নের পর তারা আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে চেক করে। মোবাইল ফোনে কিছু না পেয়ে আমাকে বার বার মেরে ফেলার ও জেলে পাঠানোর হুমকি দেয়।”
“পরবর্তীতে তারা আমাকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে নিয়ে মারধর করে।”
“এরপর তারা আমার কাছে নগদ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা না দিতে পারলে জবি ছাত্রলীগের সেক্রেটারিকে দিয়ে তকে জেলে ঢুকায় দিব। আর এখন শিবির ট্যাগ নিয়ে একবার জেলে ঢুকলে নির্বাচনের আগে আর বের হতে পারবি না সেটা তুই ভালো করেই জানস। এরপরে তারা আমাকে মারধর করে বাধ্য করেন আমার বাবা-মা ও টিউশনগুলোর গার্জিয়ানদের বাসায় ফোন দিয়ে বিকাশের মাধ্যমে টাকা আনার জন্য।”
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, “আমার বাবা-মা ও টিউশনের অভিভাবকদের থেকে ১৩ হাজার টাকা আনতে সক্ষম হই। এরপরও আমাকে চড়-থাপ্পর দিয়ে জোরপূর্বক আমার বিকাশ এবং নগদের পাসওয়ার্ড জেনে নেয়। এরপর মেহেদি আমাকে ইকবাল মাহমুদ রানার সাথে বসিয়ে রেখে আমার মোবাইল নিয়ে বিকাশের মাধ্যমে (০১৯৭৭৭০০৬৯৮ নাম্বারে) ১২ হাজার ৮০০টাকা ক্যাশ আউট করে। আবার (০১৭৫৫১৬৮২৮৮ ও ০১৯৯৫৯২৮১০৩) নাম্বারে যথাক্রমে ১৯ টাকা ও ৪০ টাকা রিচার্জ করে। অন্যদিকে নগদ একাউন্টের মাধ্যমে (০১৯৯৫৯২৮১০৩) নাম্বারে ৬০ টাকা রিচার্জ করে। এরপর তারা সেই টাকা নিয়ে আমাকে বলেছে, তুই যদি এই বিষয়গুলো কারো সাথে শেয়ার করিস তাহলে তোরে শিবির ট্যাগ দিয়ে মেরে ক্যাম্পাসের মেইন গেইটে ঝুলায় রাখব। তারা আরও বলেন,আমাদের ছাত্রত্ব নিয়ে কোন সমস্যা নাই। ৭দিনের বেশি বহিষ্কার করে রাখতে পারবে না। পরবর্তীতে রানা ও মেহেদি আমাকে আবারও মারধর করে জোরপূর্বক ভিডিও ধারণ করে এবং আমাকে বাধ্য করেন স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিতে যে, আমি আগে শিবির করতাম আর এখন থেকে ছাত্রলীগ করব।”
পরিশেষে তারা বলে যে, “তুই তো এটা শেয়ার করবি সবার সাথে, তাই আমরা প্রমাণ রাখলাম যে তুই শিবির। জানসই তো, শিবির মারলে সব মাফ। উক্ত ঘটনায় আমি শঙ্কিত, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি এই অন্যায়, জুলুম ও ছিনতাইয়ের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার আশা করছি।”
অভিযোগের বিষয়ে ইকবাল মাহমুদ রানার বলেন, এমন কিছুই ঘটেনি। অভিযোগের বিষয়েও আমি জানিনা।
অপর অভিযুক্ত মো. মেহেদি বলেন, এটি ভুল তথ্য। বিষয়টি সত্য না।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সংগঠনের নাম ব্যবহার করে কেউ কোন অপকর্ম করলে তার দায়ভার ছাত্রলীগ নিবেনা। যেহেতু এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তাই প্রশাসন সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, একটি অভিযোগ পেয়েছি৷ তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।