শরীরের অবহেলিত এই জায়গাগুলোর ত্বকের যত্ন নেবেন যেভাবে
মুখমণ্ডলের পাশাপাশি খুব বড়জোর হাত আর পা। শরীরের বাকি অংশের যত্ন খুব একটা নেওয়া হয় না। ফলাফল, রোদে পুড়ে বা দীর্ঘদিন অযত্নে ঘাড়, পিঠ বা বাহুমূলে কালো দাগ পড়ে যায়। অবহেলার কারণে শুধু সৌন্দর্যই নয়, ত্বকেরও ক্ষতি হতে থাকে।
শরীরের বিভিন্ন অংশে দাগ পড়ার নানা কারণ থাকতে পারে। বংশগত, অতিরিক্ত ডিওডোরেন্ট ও বডি স্প্রে ব্যবহার, হরমোন সমস্যা, বহুমূত্র রোগ কিংবা হঠাৎ ওজন বেড়ে বা কমে যাওয়া। নিয়মিত ওয়াক্সিং, শেভিং বা হেয়ার রিমুভিং ক্রিম ব্যবহারের ফলে বাহুমূলে কালো ছোপ পড়ার সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। কালো ছোপের কারণে অনেকেই ছোট হাতা বা বড় গলার পোশাক পরতে চাইলেও পারেন না। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সঠিক যত্নই এই দাগ দূর করতে বা প্রতিরোধ করতে পারবে, জানালেন হার্বস আয়ুর্বেদিক ক্লিনিকের রূপবিশেষজ্ঞ আফরীন মৌসুমি। অবহেলিত এই জায়গাগুলোর ত্বকের যত্নে কিছু পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
ঘাড়
চোখে দেখা যায় না বলে ঘাড়ের অনেক কিছুই আমাদের অলক্ষ্যে থেকে যায়। এ থেকেই হতে পারে ত্বকের ক্ষতি। সাধারণত ঘাড়ের ত্বক একটু নরম হয়। এ জন্য ত্বকের এই অংশের যত্ন নিতে একটু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বেসন ও লেবুর রস মিশিয়ে ঘাড়ে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এই প্যাক নিয়মিত লাগালে ঘাড় পরিষ্কার থাকবে, দাগও হবে না। লেবুর রসের সঙ্গে টক দই মিশিয়েও নিয়মিত ঘাড়ে মালিশ করতে পারেন। এতে ধীরে ধীরে কালো দাগ দূর হয়ে যাবে।
পিঠ
পিঠকে বলা যায় শরীরের সবচেয়ে অবহেলিত অংশ। ত্বকের এই অংশ যেমন দেখা যায় না, তেমনি সহজে নাগাল পাওয়াও ভার। এ কারণে পিঠের যত্ন নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এ জন্য পিঠে কালো দাগ ও ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। এখন বাজারে লম্বা হাতলওয়ালা স্ক্রাবার পাওয়া যায়। এই হাতল দিয়ে সহজেই পিঠের বিভিন্ন অংশ পরিষ্কার করা যায়। যদি মাথায় খুশকি থাকে, তবে পিঠে ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। চুল ধোয়ার সময় যেন কন্ডিশনার পিঠে লেগে না থাকে, খেয়াল রাখুন। তারপরও পিঠে যদি ব্রণ হয়েই যায়, তবে গোলাপজলের সঙ্গে আধা চা-চামচ মুলতানি মাটি, ১ চা-চামচ লবঙ্গগুঁড়া ও ১ চা-চামচ দারুচিনিগুঁড়া মিশিয়ে নিন। প্যাকটি সপ্তাহে ৩ দিন পিঠে লাগালে ব্রণ দূর হবে।
বাহুমূলের ত্বক পাতলা ও সংবেদনশীল। এই জায়গার কালো দাগ অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এই কালো দাগ দূর করতে আধা কাপ আলুর রস ও আধা কাপ গাজরের রসে ১ কাপ মসুরির ডাল ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ব্লেন্ড করে বাহুমূলে লাগিয়ে রাখতে হবে। নিয়মিত এই প্যাক ব্যবহারে কালো দাগ দূর হয়ে যাবে। বাহুমূলে শেভ করা থেকে ওয়াক্সিং করা ভালো।
কনুই ও হাঁটু
১ চা-চামচ চিনি সামান্য পানিতে গুলে ঘন রস বানিয়ে নিন। এতে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে কনুই বা হাঁটুতে লাগিয়ে নিন। ৫ থেকে ৭ মিনিট পর তা ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন করলেই ভালো ফল পাবেন।
ত্বকের কালো ছোপ তুলতে টমেটো দিয়ে বানানো প্যাক কাজে দিতে পারে। কনুই ও হাঁটুর কালো অংশে ঘষে নিন টমেটো। ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন। এর বাইরে ১ চা-চামচ কফি দিয়ে তার সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার এই মিশ্রণ হাঁটু ও কনুইয়ে ঘষে নিন। টানা কয়েক মিনিট ঘষার পর বদলে যাবে কফির রং। তখন তা জল দিয়ে ধুয়ে নিন। এ ছাড়া প্রতিদিন গোসলের সময় ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাঁটু ও কনুই ঘষে পরিষ্কার করতে হবে। সম্ভব হলে নরম কাপড় বা লোফা দিয়ে কনুই ও হাঁটু ঘষতে হবে। গোসলের পর ভারী ময়েশ্চারাইজার লাগান।
পায়ের গোড়ালি
মধু ত্বককে নরম করে। হালকা উষ্ণ জলে পা ধুয়ে গোড়ালিতে মধু লাগিয়ে রাখুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পায়ে মধু লাগিয়ে রাখার পর ধুয়ে ফেলুন। এ ছাড়া পায়ের যত্ন নিতে ১টি কলাকে ভালোভাবে চটকে নিন। কলার এই মিশ্রণটি দুই পা ও গোড়ালিতে ভালোভাবে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। একটু শুকিয়ে গেলে নরম তোয়ালে দিয়ে মুছে ফেলুন। গোড়ালির যত্নে ব্যবহার করতে পারেন কফির স্ক্রাব। এই স্ক্রাব তৈরি করতে লাগবে ১ কাপ কফির গুঁড়া, ১ টেবিল চামচ নারকেল তেল আর ২ টেবিল চামচ মোটা দানার চিনি। কফি আর চিনি একসঙ্গে মিশিয়ে তাতে ১ টেবিল চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। গোড়ালিতে লাগিয়ে কিছুক্ষণ মালিশ করুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন।