Home দুর্ণীতি বাংলাদেশে খুনিদের রাজত্ব আর চলবে না: প্রধানমন্ত্রী
Ogos ২১, ২০২৩

বাংলাদেশে খুনিদের রাজত্ব আর চলবে না: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিয়া পরিবারকে ‘খুনি পরিবার’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, এ দেশে খুনিদের রাজত্ব আর চলবে না।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে যেখানে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়, সেখানেই সেদিনের স্মরণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও তাঁর শ্রবণেন্দ্রিয় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নেতা-কর্মীদের মানবঢাল প্রাণে বাঁচায় তাঁকে। কিন্তু নারীনেত্রী আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২৪ নেতা-কর্মী নিহত এবং প্রায় এক হাজারজন আহত হন। যার মধ্যে পাঁচ শতাধিক নেতা–কর্মী গুরুতর আহত হন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বারবার হয়েছে, যার মূল হোতাই হচ্ছে জিয়াউর রহমান। আর খালেদা জিয়া তারেক রহমানসহ তাদের দোসর জামায়াতে ইসলামী এবং ’৭১–এর যুদ্ধাপরাধীরা এখনো সে কাজই করে যাচ্ছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে মানবাধিকার সংরক্ষণ করেছে। মানুষ ন্যায়বিচার পায়, কেউ অপরাধ করলে তার বিচার হচ্ছে।’

আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শহীদবেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় দলীয় নেতারা তাঁর সঙ্গে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ঢাকা, ২১ আগস্ট
আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শহীদবেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় দলীয় নেতারা তাঁর সঙ্গে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ঢাকা, ২১ আগস্টছবি: পিআইডি

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই অন্যায়–অবিচার আল্লাহ তাআলাও সহ্য করবেন না। তারা চেষ্টা করেছে হত্যা করতে, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ বারবার ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছে। ওই ছোট্ট রাসেলকে পর্যন্ত হত্যা করেছিল তারা এবং তাদের চেষ্টা ছিল বঙ্গবন্ধুর রক্তের কেউ যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে।’ তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে বারবার রক্ষা করে সুযোগ দিয়েছেন এ দেশের মানুষের সেবা করার। তাই ওই তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনেও আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’

সরকারপ্রধান বলেন, জিয়াউর রহমান ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করায় জাতির পিতাকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যার পরও নিহতের স্বজনদের বিচার চাওয়ার কোনো অধিকার ছিল না, কোনো মামলা পর্যন্ত করা যায়নি। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বিচারের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল। সেদিনের ভুক্তভোগী আজকের প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, তাহলে তাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল? তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা দেখি মাঝে মাঝে বাংলাদেশে মানবাধিকারের কথা বলে, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, কাদের শেখানো বুলি তাঁরা বলেন?’

জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের বিচার পেতে তাঁদের দীর্ঘ ৩৩টি বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘২১ আগস্ট প্রকাশ্য দিবালোকে গ্রেনেড হামলা করে আইভি রহমানসহ আমাদের যেসব নেতা-কর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, তার বিচার ও বিচারের রায় হয়েছে। এই রায় দ্রুত কার্যকর করা উচিত।’

সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ সভা সঞ্চালনা করেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী ২১ আগস্ট শহীদদের স্মরণে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত শহীদবেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকেও আরেকবার সেখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এরপরই সেদিনে নিহতের স্বজন এবং আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কিছু কারাগারে থাকলেও তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, ‘এর মূল হোতা তো বাইরে (বিদেশে পলাতক)। সে তো মুচলেকা দিয়ে বাইরে চলে গেছে (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আর রাজনীতি করবে না মর্মে)।’ তিনি তারেক রহমানের সততার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘তার সাহস থাকলে আসে না কেন বাংলাদেশে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি তার সুযোগ নিয়ে (ইউটিউব/সোশ্যাল মিডিয়ায়) লম্বা লম্বা কথা বলে। আর কত হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে সেই টাকা খরচ করে। সাহস থাকে তো বাংলাদেশে আসুক, বাংলাদেশের মানুষ ওই খুনিকে ছাড়বে না, ওদেরকে ছাড়বে না।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত ব্যক্তিদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ঢাকা, ২১ আগস্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত ব্যক্তিদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ঢাকা, ২১ আগস্টছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ’৭৫–এ জাতির পিতাকে হত্যা এবং এরপর জয় বাংলা স্লোগান এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মুছে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ওরা কিছু লোক দেখে লম্ফঝম্ফ করে, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষকে চেনেনি।

ঘরে ঘরে বিদ্যুতের সেবা পৌঁছে দেওয়া, কর্মসংস্থান, গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ও ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়াসহ দেশের সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের খণ্ডচিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার জনগণের কল্যাণেই কাজ করে যাচ্ছে। কারণ, আওয়ামী লীগ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনেই কাজ করে এবং জাতির পিতা এ দেশ স্বাধীন করে গেছেন। তিনি বলেন, ‘শুধু এটুকুই চাই, এ দেশের মানুষ সজাগ থাকবে। ওই খুনিদের হাতে যেন এ দেশের মানুষকে আর নিগৃহীত হতে না হয়। আর অগ্নিসন্ত্রাস ও জুলুমবাজি করে যেন এ দেশের মানুষকে হত্যা করতে না পারে, এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেটাই আজকের দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা।’

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *