Home ভাইরাল নিউজ ‘ওরে ডাক্তার বানাইতে আমি যে কী কষ্ট করেছি, আর ও হইল জঙ্গি’
Ogos ১৩, ২০২৩

‘ওরে ডাক্তার বানাইতে আমি যে কী কষ্ট করেছি, আর ও হইল জঙ্গি’

‘আমি কৃষিকাজ করে পরিবার নিয়ে কোনো রকমে চলি। ছেলের মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ হওয়ার পর গোটা গায়ের মানুষ গর্ব করে বলত গবরে যেন পদ্ম ফুল ফুটেছে। ওরে ডাক্তার বানাইতে আমি যে কী কষ্ট করেছি। আর ও হইল জঙ্গি। ও আমার সম্মানহানি করছে।’

চিকিৎসক ছেলে সোহেল তানজিমকে নিয়ে এই আক্ষেপ করছিলেন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পোড়াবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন। তানজিম ও তাঁর স্ত্রী মাইশা ইসলাম ওরফে হাফসা গত ২৬ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন হেলাল উদ্দিন। পরে তাঁরা জানতে পারেন জঙ্গিবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন মাইশা। সোহেল তানজিমও সেখানে ছিলেন, তবে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

দুই মাস আগে আস্তানা, গ্রেপ্তার ১০ জনের মধ্যে আছেন চিকিৎসকের স্ত্রী

ঘিরে রাখা বাড়ি থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে সিটিটিসি। আজ শনিবার সকালে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী পূর্ব টাট্রিউলি গ্রামে

সয়দাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য হেলাল উদ্দিন। তাঁর দুই মেয়ে এক ছেলের মধ্যে তানজিম সবার বড়। পরিবারের সদস্যরা জানান, উগ্রবাদে জড়িত থাকার সন্দেহে ২০২২ সালে র‌্যাব-১ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল। তখনো বাবা হেলাল উদ্দিনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছিল। তবে জামিনে বেরিয়ে ছেলে চাকরি শুরু করেন, বিয়েও করেন। তখন আশায় ছিলেন ছেলে সব ছেড়ে দেবেন। ছেলের গতিবিধির ওপর বিশেষ নজর রাখতে শুরু করেছিলেন হেলাল উদ্দিন। খারাপ পথে গেলে নানা ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন তিনি। তবে এতে কোনো লাভ হয়নি।

‘জঙ্গি আস্তানা’ থেকে গ্রেপ্তার চিকিৎসকের স্ত্রী ২৬ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিলেন

ঘিরে রাখা বাড়ি থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে সিটিটিসি। শনিবার সকালে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী পূর্ব টাট্রিউলি গ্রামে

তানজিম ছোটবেলা থেকেই অনেক ভালো ছাত্র ছিল উল্লেখ করে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রাজশাহী মেডিকেলে যেদিন ভর্তি হইল (তানজিম) সেদিন ভাবলাম আল্লায় মুখ তুইলা চাইছে। সবাই কয় ডাক্তারের বাপ হইছি। আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানসহ পরিবারের পাঁচ সদস্য সবাই বন্ধুর মতো। এরপরও এমনটি কেমনে হলো!’

খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকরি করতেন। হেলাল উদ্দিন বলেন, হঠাৎ গত জুলাই মাসের শেষে হাসপাতাল থেকে ফোন দিয়ে জানানো হয় তানজিম চার দিন ধরে হাসপাতালে আসেন না। তাঁর বন্ধু ও সহকর্মীরা ফোন দিয়ে পাচ্ছেন না। তাঁর স্ত্রীর মুঠোফোনও বন্ধ। দু-তিন দিন এখানে-ওখানে খুঁজে না পেয়ে তিনি জিডি করেন।

‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র সদস্যরা কুলাউড়ায় স্থায়ী আস্তানা গেড়ে ছিলেন: সিটিটিসি

ঘিরে রাখা বাড়ি থেকে ১০ জনকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছেন সিটিটিসির সদস্যরা। আজ শনিবার সকালে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী পূর্ব টাট্রিউলি গ্রামে

হেলাল উদ্দিন বলেন, তানজিম যে বাসায় ভাড়া থাকতেন, তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। সামনের বাসার লোকজন ২৬ জুলাই দুজনকে কাপড়চোপড়, হাঁড়িপাতিল-চুলা, কাঁথা-বালিশ নিয়ে বাসা থেকে বের হতে দেখেছেন।

খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক কৌশিক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৫ জুলাই কর্মস্থলে অনুপস্থিত দেখে তাঁরা তানজিম ও তাঁর স্ত্রীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে তাঁর বাবার মুঠোফোনে বিষয়টি জানানো হয়। এরপর তাঁর বাবাকে সঙ্গে নিয়ে ৩১ জুলাই এনায়েতপুর থানায় জিডি করেন।

হেলাল উদ্দিন আক্ষেপ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক আশা ছিল ছেলে অনেক বড় চিকিত্সক হবে। তাকে ঘটা করে বিয়ে করাব। হেলিকপ্টারে করে ছেলে–বউকে বাড়িতে নিয়ে আসব। আমার সে আসা পূরণ হয়নি। আমার ছেলে আমার মানসম্মান ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে।’

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *