Home বানিজ্য আবারও সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে ডিমের বাজার
Ogos ১৩, ২০২৩

আবারও সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে ডিমের বাজার

ডিমের বাজারে সিন্ডিকেট কোনভাবে সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। গত বছরও ডিমের দাম রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। তখন বাজারে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার অধিদফতর। কিন্তু তাতে ফল হয়েছে উল্টো। এখন আবার কোন কারণ ছাড়াই ডিমের হালি ৬০ টাকা। এতে করে নিম্ন আয়ের মানুষ পুষ্টি হারাচ্ছে। এ সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে ডিমের দাম আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন। দাম নির্ধারণ নিয়ে আজ প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে মিটিং।

আসলে ডিমের বাজার খামারিদের নিয়ন্ত্রণে নেই। এটা নিয়ন্ত্রণ করে কিছু কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। দুই সপ্তাহ আগে মুরগির একটি ডিমের দাম ছিল ১০ টাকা ৫০ পায়সা। এখন তা ১৫ টাকা। দাম বাড়ার কেনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা ব্যবসায়ীদের কাছে নেই। তারপরও দাম বাড়ছে। ১৫ দিন আগের দামের সঙ্গে তুলনা করলে প্রতিদিন সারা দেশের ক্রেতাদের কাছ থেকে সব মিলিয়ে বাড়তি নেয়া হচ্ছে ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

জানা গেছে,একজন মানুষকে কমপক্ষে প্রতিদিন একটি ডিম খেতে হয়। কিন্তু ডিমের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে নি¤œ আয়ের মানুষ কোনভাবেই একটি ডিম ১৫ টাকা দিয়ে কিনে খেতে পারবে না। এতে করে তারা গরুর গোস্ত এবং মাছের মত ডিম খাওয়াও ছেড়ে দিচ্ছে। যার ফলে তারা প্রয়োজনীয় পুষ্টি হারাচ্ছে। এতে করে আগামীর প্রজম্ম পুষ্টিহীন হয়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার জানান, বাংলাদেশে প্রতিদিন সব ধরনের ডিমের মোট চাহিদা চার কোটি ৫০ লাখ পিস। আর উৎপাদন আছে পাঁচ কোটির মতো। সে হিসেবে ডিমের উৎপাদন বেশি হচ্ছে। তাহলে কেন ডিমের দাম বাড়ছে এমন প্রশ্ন করেন তিনি।

তিনি বলেন, দেশে ডিমের উৎপাদন হঠাৎ করে কমে যায়নি। তবে পোল্ট্রি ফিডের দাম বেড়েছে। তারপরও খুচরা পর্যায়ে একটি ডিম এখন কোনোভাবেই ১৩ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। আসলে ডিমের বাজার খামারিদের নিয়ন্ত্রণে নেই। এটা নিয়ন্ত্রণ করে কিছু কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। তারাই ঠিক করে দেয় ডিমের দাম।

তিনি জানান, প্রতিদিন সকালে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকজন ডিমের দাম ঠিক করে দেয়। আর সেই দামেই সারা দেশে ডিম বিক্রি হয়। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তারা তাদের নির্দিষ্ট এজেন্টদের মাধ্যমে সকাল ১০টার মধ্যে মোবাইল ফোনের এসএমএস, ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সরা দেশে ডিমের দাম জানিয়ে দেয়।  সেই দামেই বিক্রি হয়। এর সঙ্গে উৎপাদন বা চাহিদার তেমন সম্পর্ক থাকে না।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, গত বছর একই ভাবে ডিমের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়েছিল। তারপরও ঢাকা ও ঢাকার বাইরে দামে কিছুটা পার্থক্য ছিল। কিন্তু এবার এমনভাবে সিন্ডিকেট করা হয়েছে যে গ্রাম পর্যন্ত খুচরা দাম একই। গত বছরের আগস্টে একইভাবে ডিমের বাজারে কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয়। তখন ভোক্তা অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ও তদন্ত করে কাজী ফার্সসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ডিমের বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর প্রমাণ পায়। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। ওই পর্যন্তই। এসএম নাজের হোসেন বলেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও সেই মামলায় কোনো ফল হয়নি। তাদের শাস্তির আওতায় আনা যায়নি। তাই তারা মজা পেয়ে গেছে। আবারো সিন্ডিকেট করে মুনাফা লুটছে। বাংলাদেশে এখন পোল্ট্রি খামারি আছে ৬০ হাজার। তাদের মধ্যে ২০ হাজার খামারি ডিম উৎপাদন করেন। আর ৪০ হাজার খামারি মুরগি উৎপাদন করেন। এই ৬০ হাজার খামারের মধ্যে ১৯ হাজার খামারিকে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং-এর আওতায় নিয়ে গেছে কয়েকটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। এটা দাদন ব্যবসার মতো। তাদের আগাম টাকা দিয়ে ডিম ও মুরগির দাম বেঁধে দেয়া হয়। সারা বছর সেই একই দামে ডিম ও মুরগি কেনে কয়েকটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান।

দেশে মোট খামারের তিন ভাগের একভাগ তারা এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। বাকিরা বিচ্ছিন্ন। তাই কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সহজেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাদের আবার নিজস্ব ফার্মও আছে।

সাভারের খামারি দেলোয়ার হোসেন বলেন, এই সময়ে ডিমের চাহিদা একটু বেশি থাকে। কিন্তু ডিম উৎপাদন কমেনি। পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। আসলে এখন দাম আমাদের হাতে নেই। আর বাজারে যে ডিমের এত দাম তা কিন্তু খামারিরা পায় না। আমাদের একটি ডিম উৎপাদনে খরচ হয় ১০ টাকা। ৪০-৫০ পয়সা বেশি দামে আমরা বিক্রি করতে পারি। লাভের টাকা চলে যায় কর্পোরেটদের হাতে।

সুমন হাওলাদার অভিযোগ করেন, কাজী ফার্মস ও প্যারাগন গ্রুপ এখন ডিমের বাজারে মূল খেলোয়াড়। দেশে পোল্ট্রি শিল্প নিয়ে তিনটি সমিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে।

 

তারাই এগুলো গঠন করেছেন বাজার তাদের দখলে রাখার জন্য। ভোক্তা অধিদপ্তর ছাড়াও গত বছর আগস্টে কাজী ফার্মস, প্যারাগন, সিপি, ডায়মন্ড এগ, পিপলস ফিডসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করে প্রতিযোগিতা কমিশন। কমিশন ওই মামলার শুনানিতে প্রতিদিন সকালে কাজী ফার্মস যেভাবে ডিমের দাম ঠিক করে দেয় তাতে বিস্ময় প্রকাশ করে।

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আমরা গত বছরের আগস্টে ডিমের বাজার অস্থির হওয়ার পর পুরো বিষয়টি তদন্ত করেছি। আমরা দেখেছি বাজারে সিন্ডিকেট করে ডিমের দাম বাড়ানো হয়েছে। আমরা অভিযান চালিয়ে মামলা করেছি, জরিমানা করেছি। আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। আমাদের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে প্রতিযোগিতা কমিশন কাজী ফার্মসহ আটটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে। কিন্তু তারপরও আবার সিন্ডিকেট সক্রিয়।

তার কথা, আমরা আবার অভিযান শুরু করেছি। কিন্তু সমস্যা হলো, একটি ডিমের উৎপাদন খরচ কত তা তো আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানা নেই। এটা বলতে পারবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। তারা যদি আমাদের জানায় একটি ডিমের উৎপাদন খরচ কত, তাহলে আমরা বাজারে কত বিক্রি হচ্ছে তা দেখে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারি। তা না হলে অভিযান চালিয়ে লাভ হয় না বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কারওয়ান বাজারের অভিযান চালিয়ে এক ব্যবসায়ীকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। ফল হয়েছে – অন্যান্য ডিমের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। তারাও তো কিনে আনে। আমার জানা দরকার উৎপাদন খরচ কত। তাহলে খুচরা বিক্রয়মূল্য কত হওয়া যৌক্তিক তা আমরা বুঝতে পারবো।

সুমন হাওলাদার বলেন, এই ক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটা বড় দায়িত্ব আছে। তারা ডিম, মুরগির উৎপাদন খরচ কত সে ব্যাপারে যদি তথ্য প্রকাশ করে, তাহলে অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে যেতো। আর পোল্ট্রি ফিডের দাম কমিয়েও ডিম ও মুরগির দাম কমানো সম্ভব। জানা গেছে, এ নিয়ে আজ রোববার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। ডিম সিন্ডিকেটের অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে, সেই কাজী ফার্মস-এর কোনো বক্তব্য চেষ্টা করেও জানা যায়নি।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *