ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ছাড়াল
স্টাফ রিপোর্টার : দেশে এডিস মশাবাহী রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপে বেড়েই চলেছে মৃত্যুর সংখ্যা। গত একদিনে নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৪৬ জন। এতে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ছাড়িয়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৭৪ জনে। একই সময়ে মশাবাহিত এই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৯ জন। ফলে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭৩ জনে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৪৬৯ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮৫৩ জন ও ঢাকার বাইরের এক হাজার ১৯৩ জন। ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৯ জনের ৬ জন রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা, বাকি ৩ জন ঢাকার বাহিরের। ডেঙ্গুতে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৯ হাজার ৬৭৫ জন। তাদের মধ্যে ঢাকা সিটিতে ৪ হাজার ৪২১ জন ও ঢাকার বাইরে ৫ হাজার ২৫৪ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৮০ হাজার ৭৪ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৪০ হাজার ৭৬৪ জন। পাশাপাশি ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৩৯ হাজার ৩১০ জন। একই সময়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৭০ হাজার ২৬ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৩৬ হাজার ৫৪ জন এবং ঢাকার বাইরের ৩৩ হাজার ৯৭২ জন।
প্রতিবছর বর্ষাকালে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ওই সময়ে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া ২০২২ সালে ডেঙ্গু নিয়ে মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এর মধ্যে গত বছর মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে ২৮১ জন মারা গেছেন।
এদিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় আরও এক চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া চিকিৎসকের নাম শরিফা বিনতে আজিজ। শরিফা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। শুক্রবার ভোরে তিনি মারা যান।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন শরিফা। অবস্থার অবনতি হলে গতকালই তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। আজ ভোর পাঁচটার তার মৃত্যু হয়। শরিফার মামা রাকিবুল ইসলাম জানান, শরিফা রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস করেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে এফসিপিএস পার্ট টু করছিলেন। তিনি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে দায়িত্ব (ডিউটি) পালন করতেন। পারিবারিক সূত্র জানায়, শরিফার বাড়ি ঢাকার দোহার উপজেলার জয়পাড়া চৌধুরীপাড়া গ্রামে। বাবার নাম আবদুল আজিজ। দুই ভাই-বোনের মধ্যে বড় ছিলেন শরিফা। তার লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানান স্বজনেরা। গত সোমবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরেক চিকিৎসক দেওয়ান আলমিনা (মিশু)। ৩৯তম বিসিএসে নিয়োগ পাওয়া এই চিকিৎসক রাজধানীর মাতুয়াইলে শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তিনি বিভাগটির আবাসিক শিক্ষার্থী (এমএম কোর্স) ছিলেন।