মধ্যরাতে ঢাবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১৩
ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) সামনে এক পক্ষের বসানো ডাবের দোকানে অন্য পক্ষের চাঁদা দাবি ও দোকান কর্মচারীকে মারধর করার জেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় কয়েকজন নেতাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং তাঁদের স্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত শুক্রবার রাতে ঢামেক ২নং গেটের সামনে দোকানে চাঁদাবাজি নিয়ে এ ঘটনা ঘটে। দোকানের কর্মচারীকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তুলে নিয়ে হুমকি ও মুক্তিপণ দাবি করার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলের সহসভাপতি শিকদার সাজ্জাদ হোসেন তুষার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল আলম নয়ন ও সাংগাঠনিক সম্পাদক বুলবুল আহমেদকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে৷
একই সঙ্গে তাঁদের স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে সুপারিশ করার কথাও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
চাঁদা দাবি ও কর্মচারীকে মারধরের জেরে গত শুক্রবার রাত ১টার দিকে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
গতকাল শনিবার (৫ আগস্ট) সরেজমিনে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,এক মাস আগে ঢামেকের ২নং গেটের সামনে ডাবের দোকান দেন ঢাকা কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমন। দোকান পরিচালনার জন্য পারভেজ নামের এক কর্মচারী রাখেন।
ইমন শহীদুল্লাহ হলের সহসভাপতি শিকদার সাজ্জাদ তুষারের আশ্রয়ে এ দোকান বসিয়েছেন। তুষার ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দামের অনুসারী।
ইমনের বড় ভাই মো. জীবন শহীদুল্লাহ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। পড়েন ফলিত গণিত বিভাগে স্নাতকোত্তর কোর্সে।
দোকানের কর্মচারী পারভেজ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন,’গত বুধবার রাতে দোকানে গিয়ে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে বিষয়টি আমি তুষার (সাজ্জাদ তুষার) ভাইকে জানাই। পরের দিন আবার এসে হুমকি দেয়। আমার দা নিয়ে অনেকগুলো ডাব খেয়ে ফেলে এবং বিভিন্ন জনকে খাওয়ায়। পরেরদিন (শুক্রবার) এসে আমাকে দোকান থেকে তুলে নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়ে চড়, লাথি, কিল-ঘুষি দেয়। পরে মেডিকেলের সামনে এনে তুষার ভাইকে ফোন দেয়। তুষার ভাই এলে ওনাকে মারধর করে। এ নিয়ে পরে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।’
একাধিক প্রত্যক্ষদর্য়ীর সঙ্গে কথা বলে হুমকি দেওয়া ছাত্রলীগ নেতাদের নাম জানা যায়। তাঁরা হলেন- ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি বেলায়েত হোসেন রকি, মাস্টারদা সূর্যসেন হলের উপ-প্রচার সম্পাদক নাহিদ হাসানের নেতৃত্ব একদল ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী।
প্রত্যক্ষর্শীরা জানায়, তুষারকে মারধর করায় শহীদুল্লাহ হলে কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দামের অনুসারীরা এসে রকি, নাহিদসহ ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর করে। এরপর সাদ্দামের অনুসারীদের মারধর করতে শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান সোহেল ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম আকাশের নেতৃত্বে সৈকতের অনুসারীরা সংগঠিত হয়। পরে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাজ্জাদ তুষার আজকের পত্রিকাকে বলেন,’গ্রামের একজন ছেলে অসহায়, সে দোকান বসিয়ে পরিবারের হাল ধরছে। আমি সেখানে কোনো চাঁদা নিই না। বরং তাকে বিভিন্ন সময় টাকা পয়সা ধার দিয়ে সহযোগিতা করি। কিন্তু গতকাল চাঁদা চাওয়ার বিষয়ে কথা বলায় তাদের মারধরের শিকার হয়েছি।’
বেলায়েত হোসন রকি বলেন,’আমরা ওইদিকে দুই বন্ধু ও জুনিয়র মিলে খেতে গেছি। তখন দেখি এক দোকানির কাছে চাঁদা চেয়ে জিনিসপত্র তারা ফেলে দিচ্ছে। বাধা দেওয়ায় আমার শার্টের কলার ধরে তুই তোকারি করে, মারধর করে। আমরা নিজ থেকে মারধর করিনি।’
মাজহারুল ইসলাম আকাশ ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত নন বলে দাবি করেন।
মেহেদী হাসান সোহেল বলেন,’কোন ধরনের মারধরের ঘটনায় জড়িত নই, হলের আশপাশের ঘটনা হিসেবে, রাজনীতি করি বলেই বন্ধুবান্ধব ফোন দিয়েছিল। সেখানে গিয়েছি। কিন্তু সংঘর্ষে জড়াইনি।’
এ বিষয়ে তানভীর হাসান সৈকত আজকের পত্রিকাকে বলেন,’বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক শৃঙ্খলা ও ছাত্রলীগের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে তিন জন ছাত্রলীগ নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছি এবং স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে সুপারিশ করেছি।’
শুধু এক পক্ষের নেতাকর্মীদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে কেন— এমন প্রশ্নের উত্তরে সৈকত বলেন,’স্টেপ বাই স্টেপ আমাদের কার্যক্রম চলমান। ঘটনাটা পর্যবেক্ষণে রাখছি। প্রাথমিকভাবে যতটুকু পেয়েছি ততটুকু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
ঘটনার সার্বিক বিষয়ে খতিয়ে দেখবেন বলে জানান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।