রাজধানীতে ধরপাকড়, বিএনপির কয়েক শ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার
বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল বুধবার রাতেও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ধরপাকড় চালিয়ে কয়েক শ জনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে কেবল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কাছাকাছি মিডওয়ে হোটেল থেকেই দলটির ৫০ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে আটক করেছে। এর বাইরে বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেককে আটক করলেও সে সংখ্যা কত, আজ বেলা ১২টা পর্যন্ত পুলিশ তা জানায়নি।
আজ দুপুরে ডিএমপির একটি সূত্র জানায়, গতরাতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) মোট ৪১১ জনকে গ্রেপ্তার করে। এঁদের মধ্যে বিভিন্ন মামলার আসামি ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত ব্যক্তি রয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপির নেতা-কর্মী কতজন সেটা পুলিশ আলাদা করে বলেনি। এর আগে মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার ৭৫ জন বিএনপির নেতা-কর্মীকে গতকাল বুধবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে আজ বিএনপি পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, তাদের মহাসমাবেশে যোগ দিতে আসা ৩ শ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে পুলিশ এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছে।
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসা নেতা-কর্মীদের অনেকে মিডওয়ে ও পাশের ভিক্টোরিয়া হোটেলে উঠেছিল। সেখান পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। আটক নেতা-কর্মীদের মধ্যে আছেন ফেনী জেলার বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন, যুগ্মআহবায়ক এয়াকুব নবী, জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি শাহাদাত হোসেন (সেলিম), জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক দাউদুল ইসলাম (মিনার), জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকের হোসেন (রিয়াদ), জাতীয়তাবাদী হেল্প সেল-এর প্রধান সমন্বয়ক সুমন আহসান, ফেনী সদর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্মআহবায়ক মেজবাহ উদ্দিন মিয়াজী, সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুর নবী, সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন, বালিগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব কাজী কামরুল হাসান, যুগ্ম আহ্বায়ক নুর নবী, ফেনী পৌর ১৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন, বালিগাঁও ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আরিফুল ইসলাম, সদর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী শাকিল, তুহিন, সোহাগ, সাইফুর রহমান, রুবেল পাটোয়ারী ও সোনাগাজী ৭ নং ইউনিয়নের সমির খান ও জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
গতকাল রাতে পুলিশের মিরপুর বিভাগের বিভিন্ন থানায়ও অভিযান চালানো হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা। তবে আজ সকালে যোগাযোগ করা হলে পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মো. জসীম উদ্দীন আটকের মোট সংখ্যা জানাতে পারেননি।
আটক হওয়া নেতা-কর্মীরা হলেন, মুজাহিদুল ইসলাম, জিহাদুল ইসলাম, কাউসার প্রামাণিক, নবী উল্লাহ, মুকুল মিয়া, আবদুল রব, বদিউর রহমান, সামিউল আলম, রেজাউল ইসলাম, বক্কার প্রামানিক, তারিক প্রামাণিক, লিটন প্রামাণিক, আনিসুর রহমান, নজরুল ইসলাম, সজীব রাজা, ইমরান হোসেন, জাহিদ হোসেন, মো. কনক, ফজল হোসেন।
রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকা এসেছি। গ্রেপ্তার ও হয়রানি এড়ানোর জন্য নেতা-কর্মীরা আগেই ঢাকা এসেছেন। ঢাকায় আমাদের এক নেতা মুজাহিদুল ইসলামের কার্যালয় থেকে একসঙ্গে ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে। এমনকি কার্যালয়ের এক কর্মীকেও আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
পুরান ঢাকার কোতোয়ালি থানার পুলিশ মানিকগঞ্জের ঘিউর উপজেলা ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। তারা হলেন-রবিউল দেওয়ান. আকাশ, মোঃ অমি, রাসেল মোল্লা ও মো. শাহরুখ।
এ ব্যাপারে আজ সকালে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ওসি শাহীনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকালে পুরান ঢাকার বাবুবাজারে নিরাপত্তা চৌকিতে তল্লাশির সময় রবিউল মোল্লা ও আকাশ পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে তাদের আটক করা হয়। এরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে ঢাকায় এসেছিলেন।
গতকাল রাতে লালমাটিয়ার ডি ব্লকের বাসা থেকে আবদুল কুদ্দুস আকন নামের বিএনপির এক নেতাকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছে।
মোহাম্মদুর থানার ওসি মাহফুজুল হক ভুইয়া আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিছু ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বিএনপি নেতা আবদুল কুদ্দুস আছে কি না, তা খোঁজ নিয়ে পরে জানাতে পারবেন।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের ২৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সহ-সভাপতি মীর আশরাফ আলী আজম এবং তার ছেলে ব্যারিস্টার মীর মুনতাহা আলীকে লালবাগের তাদের বাসা থেকে গতকাল গভীর রাতে ডিবি গ্রেপ্তার করে। মীর আশরাফ আলী আজমের স্ত্রী অভিযোগ করেন, গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ পিটিয়ে তাঁর স্বামীর পা ও কোমর ভেঙে ফেলেছে। তাঁর ছেলে আইনজীবী, পরিচয় দেওয়ার পর তাঁকেও ধরে নিয়ে গেছে। এ সময় তাঁর পুত্রবধূর সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে লালবাগ থানা ওসি হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গতরাতে ডিবির লালবাগ বিভাগের সদস্যরা মীর আশরাফ আলীর বাসায় অভিযান চালায়, এ সময় তিনি তিন তলার জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন, এতে তাঁর পা ভেঙে যায়। আশরাফ আলী এখন পুলিশ পাহারায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এর বাইরেও বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের আজ দুপুরের পর থেকে প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে আনতে দেখা যায়। এ সময় তাঁদের অনেকে দলীয় স্লোগান দিতে থাকেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, শুক্রবারের সমাবেশে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঢাকায় এসেছেন। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে। তাদের ৩০০ জনেরও বেশি নেতা-কর্মীকে পুলিশ এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানুল্লাহ আমান আজ দুপুর ১২টার দিকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, গত মঙ্গলবার রাত থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশ ও ঢাকার বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে তাঁদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, একটা গণতান্ত্রিক দেশে সভা-সমাবেশ করার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। অনুরোধ থাকবে, প্রশাসন যাতে এতে হস্তক্ষেপ না করে।