ভুরুঙ্গামারীতে জমিজমার জেরে বাড়িঘর ভাংচুরের অভিযোগ
মোঃ মশিউর রহমান বিপুল, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের দক্ষিণ বাঁশজানী গ্রামের জিল্লুর রহমান গৼ ও পার্শ্ববর্তী আব্দুল লতিফ গংরা দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা নিয়ে একাধিক মামলা ও বিরোধ চলে আসছে এবং এ বিষয়ে দুই পক্ষের হাইকোর্টে মামলা চলমান থাকার অভিযোগ করে দুই পক্ষের ভুক্তভোগীরা।
সরেজমিন ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরভুবি ইউনিয়নের দক্ষিণ বাঁশজানী গ্রামের আনছার আলী পুত্র জিল্লুর রহমানের পরিবার এবং পাশ্ববর্তী জমির উদ্দিনের পুত্র আব্দুল লতিফ, এনামুল হক, শহিদুল ইসলাম, বাবব আলীর পরিবারের সাথে বাঁশজানী মৌজার ৮একর ৪৫শতক জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে এবং উক্ত জমি আব্দুল লতিফের পরিবার দীর্ঘ ২০বছর থেকে বসতবাড়ী করে জীবন অতিবাহিত করে আসছেন। সম্প্রতি আব্দুল লতিফ জানান, জিল্লুর রহমান গংরা আমাদের বৈধ জমির লোভে বশির্ভূত হয়ে জিল্লুর শতাধিক দলবল নিয়ে ১৯নভেম্বর ২০১৯সালে সন্ধ্যায় আমাদের পরিবারের বসতবাড়ীতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ৫টি বাড়ীঘর ভাংচুর ও সব লুটপাটসহ এলোপাতারী মারধর করে অবৈধভাবে জমি দখল করে নেয়। এ ঘটনায় গত এক বছরে আমার পরিবারে আঘাতপ্রাপ্ত তিনজন ব্যক্তি মারা যায় এবং এই ঘটনায় আমার ভাই বাদি হয়ে জিল্লুর রহমান গংদের নামে ভুরুঙ্গামারী থানায় মামলা করেন ও সে মামলা আদালতে বিচারধীন রয়েছে।
অপরদিকে জিল্লুর রহমানের (২১জুলাই) ভুরুঙ্গামারী থানার মামলা সূত্রে জানা গেছে, আব্দুল লতিফ উক্ত জমির ওপরে হাইকোর্ট থেকে মামলার রায় নিয়ে (১৩জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টা জিল্লুর রহমানের পরিবারের ৪টি টিনের ঘর ভাংচুর করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠে। এদিকে জিল্লুর রহমান জমিজমা বিরোধের বিষয় নিয়ে পাথরডুবি ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বিবাদি আব্দুল লতিফদের সাথে আপোষে ব্যর্থ হন। অবশেষে জিল্লুর রহমান বাদি হয়ে (১৯জুলাই) জমির উদ্দিনের পুত্র আব্দুল লতিফ, এনামুল হক, শহিদুল ইসলাম, বাবব আলী নবাসহ ২৬জনের বিরুদ্ধে ভুরুঙ্গামারী থানায় একটি মামলা করেন। অভিযোগ উঠছে জিল্লুর রহমান বাদি হয়ে ভুরুঙ্গামারী থানায় মামলা করার পরে একটি সিন্ডিকেটের পরামর্শে বলছে মামলা এখনও রেকর্ড হয়নি এমনি ভুরুঙ্গামারী থানার অফিসার ইনচার্জ এবং প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপ্রচার চালিনোসহ পুলিশ প্রশাসনের মান-সন্মান ক্ষুদ্র করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।
অত্র এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামীলীগ নেতা শামছুল হক, রবিউল ইসলাম ও মফিজুল হক বলেন, প্রকৃতপক্ষে এই জমি মালিক আব্দুল লতিফের পরিবার দীর্ঘদিন থেকে বাড়ীঘর তুলে ভোগ দখল করে আসছেন। জিল্লুর রহমান উক্ত জমি নিজের দাবি করে ১৯নভেম্বর ২০১৯সালে সন্ধ্যায় তার লোকজন নিয়ে আব্দুল লতিফের বসতবাড়ীতে এলোপাতারী মারধর করে ৫টি ঘর ভাংচুর ও সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে য়ায়। জমিজমার জেরে দুই পক্ষের একের পর এক দুর্ঘটনা চলছে।
মামলার বাদি জিল্লুর রহমান ও তার পরিবার জানান, আব্দুল লতিফ উক্ত জমির ওপরে হাইকোর্ট থেকে মামলার রায় নিয়ে এসে আমার পরিবারের ৪টি টিনের ঘর ভাংচুর করে। আমি পাথরডুবি ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বিষয়টি আপোষের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। বাধ্য হয়ে আমি বাদি হয়ে গত (২০জুলাই) রাত ১১টায় বিবাদি আব্দুল লতিফসহ ২৬জনের নামে ভুরুঙ্গামারী থানায় মামলা করি। এদিকে রাত ১টার সময় জিল্লুর রহমান এ প্রতিবেদক কে মোবাইল ফোনে বলেন, আমার মামলা ভুরুঙ্গামারী থানার ওসি এখনও রেকর্ড করনি। ভুরুঙ্গামারী থানার অফিসার ইনচার্জ আমার কোন কথা শুনেন না। আমি ওসি কে দেখে নিবো ও বদলি করাবো।
মামলার বিবাদী আব্দুল লতিফ বলেন, প্রকৃতপক্ষে উক্ত জমি আমাদের ও দীর্ঘ ২০বছর থেকে বাড়ীঘর তুলে ভোগ দখল করে আসছি। জিল্লুর রহমান তার দলবল নিয়ে উক্ত জমি নিজের দাবি করে ১৯নভেম্বর ২০১৯সালে সন্ধ্যায় আমাদের বসতবাড়ীতে প্রবেশ করে আমাদের এলোপাতারী মারধর করে ৫টি ঘর ভাংচুর ও সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে য়ায়। এ ঘটনায় গত এক বছরে আমার পরিবারে আঘাতপ্রাপ্ত তিনজন ব্যক্তি মারা যায় এবং এই ঘটনায় আমার ভাই বাদি হয়ে জিল্লুর রহমান গংদের নামে ভুরুঙ্গামারী থানায় মামলা করেন ও সে মামলা আদালতে বিচারধীন রয়েছে। জিল্লুর রহমানের পরিবারের বাড়ীঘর ভাংচুর করার বিষয়ে লতিফ বলেন জমিজমার জেরে এ ঘটনাগুলো হচ্ছে।
ভুরুঙ্গামারী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রহুল আমিন বলেন, জিল্লুর রহমান তার বাড়ি ভাংচুরের দিন বলার সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। মামলার জন্য তাকে একাধিকবার এজাহার করার কথা বলা পরে অবশেষে (২০জুলাই) জিল্লুর রহমান বাদি হয়ে লতিফদের বিরুদ্ধে ভুরুঙ্গামারী থানায় একটি মামলা করেন। সুষ্ঠু তদন্ত চলমান এবং আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
সহকারী পুলিশ সুপার ( ভুরুঙ্গামারী ও কচাকাটা সার্কেল) মোর্শেদুল হাসান (বিপিএম) বলেন, জিল্লুর রহমান আমার নিকটেও এসেছে। আমরা অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো। আসামী গ্রেফতারে জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।