Home জেলা রাজনীতি নির্বাচনের আগে এবারও ‘গায়েবি’ মামলা
জুলাai ২২, ২০২৩

নির্বাচনের আগে এবারও ‘গায়েবি’ মামলা

পুরান ঢাকার ব্যস্ততম এলাকা সূত্রাপুরের বানিয়ানগর মোড়। এই মোড়ে গত ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ২০ থেকে ২৫ নেতা-কর্মী সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে শুরু করেন। সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে নিষেধ করলে তাঁরা অতর্কিতভাবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালান। পরে হত্যার উদ্দেশ্যে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা খয়ের উদ্দিন আহমেদের করা মামলার এজাহারের ভাষ্য এটি। কিন্তু ঘটনাস্থলের ও আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলে কেউ এমন ঘটনা দেখেছেন বা শুনেছেন, সেটা বলতে পারেননি।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বিস্ফোরিত ককটেলের অংশবিশেষ এবং দুটি অবিস্ফোরিত ককটেল আলামত হিসেবে জব্দ করেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। কিন্তু মামলার বাদী ইটপাটকেল ছুড়েছে বলে দাবি করলেও কোনো ককটেল হামলা হয়নি বলে জানান।

নাশকতার ঘটনা ঘটেছে বলেই পুলিশ বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা নিয়েছে। মামলায় যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হচ্ছে। কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র, গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার ফারুক হোসেন

এ রকম হামলার অভিযোগ এনে গত সাত মাসে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় কেবল আওয়ামী লীগের নেতারা বাদী হয়ে ৪০টি মামলা করেছেন। গত বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩০ মে পর্যন্ত সময়ে করা এসব মামলায় আসামি হিসেবে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ১ হাজার ৭০১ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা আরও ২ হাজার ৫৭৫ জন।

বিএনপির নেতাদের দাবি, এ সবই ‘গায়েবি মামলা’। অর্থাৎ, ঘটনা ঘটেনি, তারপরও মামলা দেওয়া হয়েছে। যার কারণে মামলার বিবরণ ও ধারা প্রায় একই রকম।

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সারা দেশে এ রকম অসংখ্য মামলা হয়েছিল পুলিশ বাদী হয়ে। ওই নির্বাচনের আগের তিন মাসে (সেপ্টেম্বর-নভেম্বর) কেবল ঢাকা মহানগরে নাশকতার অভিযোগে ৬৯৭টি মামলা হয়। এর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরেই ঢাকায় মামলা হয়েছিল ৫৭৮টি। বিস্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা এসব মামলা তখন ‘গায়েবি মামলা’ নামে পরিচিতি পায়। নির্বাচনকে সামনে রেখে ওই সময়ের মতো এবারও ‘গায়েবি’ মামলা করা হচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, এসব মামলার উদ্দেশ্য, বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঘরছাড়া করা। তবে এবারের ব্যতিক্রম হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের মামলার বাদী করা হচ্ছে।

গত বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩০ মে পর্যন্ত সময়ে করা এসব মামলায় আসামি হিসেবে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ১ হাজার ৭০১ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা আরও ২ হাজার ৫৭৫ জন।

 নতুন করে গায়েবি মামলা করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র, গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাশকতার ঘটনা ঘটেছে বলেই পুলিশ বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা নিয়েছে। মামলায় যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হচ্ছে। কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।’২০১৮ সালে দেখেছিলাম, পুলিশ বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দিয়ে ঘরছাড়া করেছিল। এবারও আওয়ামী লীগের নেতাদের ওপর হামলার নাটক সাজিয়ে বিএনপির শত শত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছেন সরকারদলীয় নেতারা

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাদের করা ৪০ মামলার মধ্যে ৩৫টি হয়েছে গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে। বিএনপির ধারাবাহিক বিভাগীয় সমাবেশ ও ১২ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশ ঘিরে রাজনীতিতে যে উত্তাপ তৈরি হয়েছিল, তখন এসব মামলা হয়। এতে মূল অভিযোগ, বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে জখম করেছেন, হত্যার চেষ্টা করেছেন, গাড়ি ভাঙচুর করেন, দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর 

এসব অভিযোগকে ‘ডাহা মিথ্যা’ দাবি করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন হামলা কিংবা ককটেল বিস্ফোরণের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঘরছাড়া করতে আওয়ামী লীগের নেতারা নতুন ধরনের গায়েবি মামলা দিচ্ছেন।’

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *