Home জীবনযাপন জন্মভূমি ছেড়ে চায়না যেতে কেউ
জুলাai ১৬, ২০২৩

জন্মভূমি ছেড়ে চায়না যেতে কেউ

মোঃ বুলবুল হোসেন ::

সুমনের ছোট্ট একটা সংসার কোন রকম দিন চলে যায়। সংসারে সদস্য  চারজন। তার দুই ছেলে ও বউ  তাদের সংসার কোনরকম চলে। একবেলা খেয়ে আবার এক বেলা না খেয়ে। সুমন সারাদিন কাজের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে থাকে ।একদিন কাজ পেলে আরেকদিন কাজ পায় না সুমন।  স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে সুমন। সে সব সময় কল্পনাতে  ঘুরে বেড়াত ,কখনো রাজা কখনো বা জমিদার ।এমন অবস্থায় একদিন সুমন চিন্তা করলো আমি এক কাজ করতে পারি । আজকে বাজার থেকে একটা মুরগির বাচ্চা নিয়ে আসব। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। একটি বাচ্চা ক্রয় করে নিয়ে আসল। আর ভাবতে লাগলো  বাচ্চাটি বড় হবে, তারপর ডিম দিবে ডিম থেকে যখন বাচ্চা বের হবে ।তখন অনেকগুলো হয়ে যাবে, সেই সাথে বাচ্চাগুলো বিক্রি করে একটা গাভী কিনব, গাভী  দুধ দিবে, অপর দিকে যে বাছুরটা থাকবে, সেও একদিন গাভী হবে।  অনেকগুলো গরু হওয়ার পর। সেগুলো বিক্রি করে।আমার বাড়িতে বিল্ডিং হবে আর আমি পা, ধোলাতে থাকবো। এমন অবস্থায় হঠাৎ করে একটি মোটরসাইকেল এসে গেল। হাত থেকে বাচ্চার উড়াল দিয়ে মোটরসাইকেলের নিচে পড়ে মারা গেল।  বাড়ি থেকে কেউ একজন বলে গেল। সুমন তোমার ছেলে খুবই অসুস্থ, সুমন কিছু না ভেবে দৌড়ে বাড়ি চলে গেল।
বাড়িতে গিয়ে দেখে সত্যি তার ছেলে খুবই অসুস্থ, সুমনের হাতে কোন টাকা পয়সা নেই। এরপর তার এক বন্ধুকে ফোন দেয় বলে দোস্ত আমার ছেলেটা খুবই অসুস্থ আমাকে কিছু টাকা ধার দে । সুমনকে তার দোস্ত অনেক ভালোবাসতো সে ছেলের অসুস্থের কথা শুনে তাকে কিছু টাকা ধার দেয়। সুমন ছেলের চিকিৎসা করে ছেলেটা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যায়। একদিন সুমনের দোস্ত বলে , দোস্ত তুমি আমাদের বাড়িতে একদিন বেড়াতে এসো । কিন্তু সুমন মনে মনে ভাবে সে আমাকে কিছু টাকা দিয়েছিল। গেলে টাকা দিতে বলবে যার কারণে সুমান তার বন্ধুর বাড়িতে আর যায় না । এভাবে সুমন বিভিন্ন জায়গায় থেকে টাকা ধার করে। ধার দেনা প্রচুর হয়ে যায় যা সুমনের পক্ষে শোধ করা সম্ভব না। সুমন মানুষকে মিথ্যা বলতে বলতে মানুষ তাকে আর বিশ্বাস করে না । তবুও মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে কোনরকম দিন চালাচ্ছে সুমন। হঠাৎ একদিন সুমনের বউ বলল তুমি আমার কিছু গহনা বন্ধক রেখে।  একটা ব্যবসা শুরু কর। হয়তো আমাদের সংসার টা ভালো ভাবে চলে যাবে । সুমন বউয়ের গহনা নিয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। বাজারে যাওয়ার পথে মোড়ল সাহেব সুমন কে দেখে পিছ লেগে যায়। যখন স্বর্ণকারের দোকানে ভিতর ঢুকে যায় সুমন। তখন মোড়ল সাহেব পিছন থেকে সব খেয়াল করে। এরপর গয়নাটা বন্ধক রেখে কিছু টাকা নিয়ে আসে। টাকা হাতে দেখে মোড়ল সাহেব বলে আজকে সুমনের কাছ থেকে টাকা নিতেই হবে। তাছাড়া বেটাকে আজকে আর যেতে দেব না । সুমন যেই মাত্র স্বর্ণকারের দোকান থেকে বাহির হলো ।তখন মোড়ল সাহেব কিছু লোক নিয়ে সুমনকে আটকে ফেলে।
সুমন মোড়ল সাহেব কে বলে মোড়ল সাহেব কেন আমাকে আটকিয়েছেন। মোড়ল সাহেব বলো কেন বুঝতে পারিস না। তুই আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিস এক সপ্তাহ কথা বলে। আজকে পাঁচ বছর হয়ে যায় কোন টাকা পয়সা দেওয়ার নাম নাই। আজকে তোর কাছে টাকা আছে টাকাগুলো দিয়ে যা । এই বলে সুমনের হাত থেকে টাকা নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সুমান কিছুতে দিতে চায়না টাকা। না করাতে সুমনকে বেদম মারধর করে। লোকজন দিয়ে আর মোড়ল বলে সে আমার কাছ থেকে প্রচুর টাকা-পয়সা নিয়েছে। তার বাড়িও বন্ধক রেখেছে মিথ্যা কথা বলে। সুমন নিরুপায় হয়ে টাকা দিয়ে আসে। টাকা দিয়ে যখন বাড়িতে ফিরে আসে। সুমনের বউ বলে কই গয়না বন্ধক রেখে টাকা নিয়ে এসেছ। সেই টাকা গুলো দাও আর তোমার জামা ছেড়া কেন। ধুলাবালি লেগে আছে আর তুমি কান্নাকাটি করতেছ কেন। তখন সুমন তার বউকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল, সমস্ত কিছু শোনার পর সুমনের বউ অনেক কান্নাকাটি করতে থাকে। আর তারা সিদ্ধান্ত নেই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় বারবার বাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে সুমন ।জন্মভূমি মাটি ছেড়ে কেউ  যেতে চায় না, বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় সুমন কয়েকবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু তবুও যে যেতে হবে উপায় নেই। এভাবে আর কত মাইর খাবে । এই জগতে আমাদের কেউ নেই। সুমন তার বউ নিরুপায় হয়ে রাতের আঁধারে  বাচ্চা নিয়ে সমস্ত কিছু ছেড়ে চলে যায়।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *