ছাত্রী উত্ত্যক্ত, জাহাঙ্গীরনগরে দুই হলের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ
এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্তের জেরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইটি আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ও শহীদ রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়ান। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপের সময় দুই হলের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ শুরুর প্রায় এক ঘণ্টা পর প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য এবং দুই হলের প্রাধ্যক্ষ ঘটনাস্থলে আসেন। পরে সংঘর্ষে জড়ানো শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ হলে ফিরে যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মো. রনি হোসাইন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে একটা প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। তদন্তের মাধ্যমে ডিসিপ্লিনারি বোর্ড থেকে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার রাতে ইতিহাস বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক ছাত্র কাজী মহিউদ্দিন মিরাজ তার বান্ধবীকে নিয়ে নতুন কলাভবনের নিচে খাবার নিতে যান। এ সময় রফিক-জব্বার হলের কয়েক শিক্ষার্থী মিরাজের বান্ধবীকে উত্ত্যক্ত করেন বলে অভিযোগ মিরাজের। পরে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মিরাজ তার বন্ধুদের নিয়ে উত্ত্যক্তকারীদের মধ্যে একজন ইংরেজি বিভাগের ৫১তম ব্যাচের মো. রাফিকে মারধর করে। এর জেরে রাত সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ও শহীদ রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা রবীন্দ্র চত্বরে (দুই হলের মধ্যবর্তী স্থান) সংঘর্ষে জড়ান। তখন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি হয়। এ সময় রফিক-জব্বার হল থেকে পটকা ফোটানো হয়। পরে রাত সাড়ে চারটার দিকে দুই হলের প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টরিয়াল টিমের এক সদস্য ও নিরাপত্তা শাখার কয়েকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান।
এ ঘটনায় ২০ শিক্ষার্থী আহত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসাকেন্দ্রের উপপ্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা আবু জাফর মো. সালেহ।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আহতদের মধ্যে ১২ শিক্ষার্থীর অবস্থা গুরুতর। কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাতের বিষয়ে কাজী মহিউদ্দিন মিরাজ বলেন, গত বুধবার রাতে রফিক-জব্বার হলের কয়েক শিক্ষার্থী তার বান্ধবীকে উত্ত্যক্ত করেন। গতকাল রাতে তাদের মধ্যে রাফি নামের একজনকে হলের বন্ধুদের সঙ্গে রবীন্দ্র চত্বরে দেখতে পান। এ সময় উত্ত্যক্তের ঘটনার কথা জানতে চাইলে রফিক-জব্বার হলের কয়েকজনের সঙ্গে তার হলের (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল) কয়েকজনের হাতাহাতি হয়। পরে দুই হলের সিনিয়ররা এসে বিষয়টি সমাধান করে দেন। কিন্তু হঠাৎ রাত সাড়ে তিনটার দিকে রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা হামলা চালান।
এ বিষয়ে জানতে আজ শনিবার সকালে রাফির মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, যে ঘটনাটি ঘটেছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। অন্য একটি জায়গার ঘটনা এখানে টেনে আনায় এত বড় ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনার নিন্দা জানাই। যারা ছাত্রসুলভ আচরণ করছে না, তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিচার হওয়া উচিত।