এক ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নিল বিএনপি
আগামী ১২ জুলাই সরকারবিরোধী একদফা আন্দোলনের চূড়ান্ত ঘোষণা দিতে যাচ্ছে বিএনপি। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠেয় ‘বিশাল’ সমাবেশ থেকে এই ঘোষণা দেবে বিএনপি। এ জন্য বিএনপি ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনকে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শনিবার নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের (ভার্চুয়ালি) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রায় এক ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে লিখিত আবেদন করা হবে।
অভিন্ন দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল ও জোট আলাদা মঞ্চ থেকে একই ঘোষণা দেবে।
এদিকে রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একদফার আন্দোলনের সিদ্ধান্তসহ সার্বিক পরিস্থিতি চেয়ারপারসনকে অবহিত করতেই মহাসচিব এ সাক্ষাৎ করেন বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, ১৫ জুলাই একদফা ঘোষণার প্রস্তুতি ছিল দলটির। এ লক্ষ্যে সমমনাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করেন নেতারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাচন বিষয়ক ৬ সদস্যের তথ্যানুসন্ধানী মিশন ১৬ দিনের সফরে ঢাকা আসছেন। এদের মধ্যে দুজন শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছেছেন। বাকি ৪ জন আজ রোববার আসছেন। তাদের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া এ সপ্তাহে ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী একটি প্রতিনিধি দল। তাই কিছুটা আগেই সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এই এক দফার আন্দোলনের ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিএনপি বিদেশি প্রতিনিধিদের কাছে বার্তা পৌঁছাতে চায় যে, তারা এই সরকারের পতনের আন্দোলনে চূড়ান্ত ধাপে নেমেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈঠকের একাধিক সূত্র জানায়, ১২ জুলাইয়ের জমায়েতে ঢাকা মহানগর ছাড়া আশপাশের নেতাকর্মীদেরও যোগ দিতে বলা হয়েছে। এক ঘণ্টার বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও জেলা ও অঙ্গসংগঠনের একজন শীর্ষ নেতা বক্তব্য রাখেন। এদিকে বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপি ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের সভা শেষে রাতে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সূত্র জানায়, সমমনা জোট ও দলগুলোর কর্মসূচির প্রস্তাব নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। প্রস্তাবে হরতাল, অবরোধ, অসহযোগ ও ঘেরাওসহ লাগাতার নানা কর্মসূচির প্রস্তাব রয়েছে। তবে বিএনপি হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে যেতে চায় না। অহিংস কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন শুরু করতে চায়। পরিস্থিতি বাধ্য করলে কঠোর কর্মসূচিতে যাবে দলটি।
আগামীকাল ১০ জুলাই সোমবার গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক আছে। ওই বৈঠকে সম্মিলিত বিরোধী দলের রাষ্ট্র মেরামতের ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ নিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়াও আজ সিলেট ও ১৭ জুলাই খুলনায় বিএনপির ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ রয়েছে। ২২ জুলাই ঢাকায় সমাবেশ করবে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল।
এ বিষয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বলেন, চলমান আন্দোলনকে একটি গণ-আন্দোলন বা জাতীয় রূপ দিতে চাইলে বিরোধী দলগুলোকে এক মঞ্চে ওঠার জন্য আরও অপেক্ষা করা হতে পারে। রাজপথ থেকেই সব দলের বোঝাপড়ার মধ্য দিয়েই এক মঞ্চে উঠলে আন্দোলনে ভালো ফল আসবে বলে মনে করেন এই নেতা।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের সাক্ষাৎ: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন তিনি। সেখানে পৌনে এক ঘণ্টার মতো ছিলেন দলের মহাসচিব।
বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করে যুগান্তরকে জানান, ‘বিএনপি মহাসচিব এ সাক্ষাতে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়েছেন।’