Home বানিজ্য ঋণের সুদ বাড়াচ্ছে ব্যাংক
জুলাai ৬, ২০২৩

ঋণের সুদ বাড়াচ্ছে ব্যাংক

ঋণের সুদহার বাড়ানো শুরু করেছে ব্যাংকগুলো। গ্রাহক ভেদে ঋণের সুদহার বছরে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ইতিমধ্যে নতুন সুদহার আরোপ করে বাড়তি কিস্তিও কাটা শুরু হয়েছে। গ্রাহককে আগাম কোনো তথ্য জানানো হয়নি। প্রতি মাসে ঋণের কিস্তি দিতে হয়, এমন যাঁদের ব্যাংকঋণ রয়েছে, তাঁদের চলতি মাসের কিস্তিতে বাড়তি টাকা দিতে হবে। আবার কিছু ব্যাংক অপেক্ষা করছে পরিস্থিতি বুঝে ওঠার জন্য। তবে ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ যেভাবে বাড়িয়েছে, আমানতের সুদে সেভাবে হাত দেয়নি। তারল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে অনেক ব্যাংক পরবর্তী সময়ে আমানতের সুদহার বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে আমরা বিনিয়োগের ওপর মুনাফা বাড়িয়েছি, যা ইতিমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে।

ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি জুলাই থেকে স্মার্ট সুদহার নামে নতুন নিয়ম চালু করেছে। স্মার্ট হলো সিক্স মান্থস মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল। প্রতি মাসের শুরুতে এই হার জানিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মে মাসে স্মার্ট ছিল ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ, যা জুনে কমে হয়েছে ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। কোনো ব্যাংক মে মাসের হার ও কোনো ব্যাংক জুন মাসের হারকে বিবেচনায় নিয়ে জুলাই থেকেই নতুন সুদ নির্ধারণ করছে। আর সুদহার নির্ধারণে বেশির ভাগ ব্যাংক একেবারে সর্বোচ্চ সীমাকে বেছে নিয়েছে। ব্যাংকগুলো তারল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সম্পদ-দায় ব্যবস্থাপনা কমিটি (অ্যালকো) আমানত ও ঋণের সুদহার নির্ধারণ করে থাকে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, সুদহার বাড়ার ফলে ঋণের চাহিদা কমবে, যা মূল্যস্ফীতি কমাতে সহায়তা করবে। এতে ব্যক্তি পর্যায়ে যাঁরা ঋণগ্রহীতা, তাঁদের ওপর চাপ পড়বে। এতে কিছু করার নেই। তবে ব্যাংকগুলো একেবারে সর্বোচ্চ সুদ নির্ধারণ না করে ধীরে ধীরে বাড়াতে পারে; যাতে গ্রাহকেরা সইতে পারেন। কিস্তির টাকা হঠাৎ বেড়ে গেলে তা খেলাপি হয়ে যেতে পারে। ঋণের সঙ্গে আমানতের সুদও বাড়াতে হবে, না হলে আমানতকারীদের আসলও হারিয়ে যাবে।

সিএমএসএমই খাতের রপ্তানি অর্থায়নে সুদ হবে ৯ শতাংশ। কৃষিঋণের সুদহার হবে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। এ ছাড়া করপোরেটদের চলতি মূলধন ঋণে সুদ হবে ১০ শতাংশ, রপ্তানিতে ৮ শতাংশ, গাড়ি কেনায় ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ ও অন্য সব ঋণে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ।

কোন ঋণে সর্বোচ্চ কত সুদ

ব্যবসায়ী ও ব্যাংকমালিকদের দাবির মুখে চালু হওয়া ৯ শতাংশ সর্বোচ্চ সুদহারের সীমা থেকে চলতি জুলাইয়ে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। এই নিয়মে সব ধরনের ব্যাংকঋণের সুদহার বাড়ছে। এখন নতুন নিয়মে সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদের ওপর, যা স্মার্ট নামে পরিচিত করার চেষ্টা চলছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদের হারের সঙ্গে ৩ শতাংশ মার্জিন যোগ করে ঋণের সুদহার নির্ধারণ করা যাবে। অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি (সিএমএসএমই) ও ভোক্তা ঋণের আওতাধীন ব্যক্তিগত ঋণ ও গাড়ি ক্রয় ঋণে আরও ১ শতাংশ তদারকি মাশুল যুক্ত হবে। কৃষি ও পল্লি ঋণের সুদহার নির্ধারণ করা যাবে স্মার্টের সঙ্গে ২ শতাংশ মার্জিন যোগ করে। জুনে স্মার্ট ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ।

ফলে ব্যাংকঋণের সুদহার এখন ১০ দশমিক ১০ শতাংশ। আর সিএমএসএমই ও ভোক্তা ঋণের আওতাধীন ব্যক্তিগত ঋণ ও গাড়ি ক্রয় ঋণে আরও ১ শতাংশ তদারকি মাশুল যুক্ত করে সুদহার ১১ দশমিক ১০ শতাংশ। কৃষি ও পল্লি ঋণের সুদহার হবে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। আগে কৃষিঋণে সুদহার ছিল ৮ শতাংশ। অন্য সব ঋণে সুদহার ছিল ৯ শতাংশ। আর ক্রেডিট কার্ডে সুদহার আগের মতোই সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ বহাল আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক যে সীমা দিয়েছে, আমরা সেটাই নতুন করে নির্ধারণ করেছি

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এমডি জাফর আলম

সুদ বাড়ল কত: শরিয়াহ ব্যাংক

দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ ইসলামী ব্যাংকের। গত মার্চে ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা।

ব্যাংকটি নতুন করে আমানতের সুদহারে কোনো পরিবর্তন আনেনি। তবে জুলাই থেকে ঋণের সুদে পরিবর্তন এনেছে।

ইসলামী ব্যাংক প্রধান কার্যালয় থেকে সব শাখায় পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত ও গাড়ি কেনার ঋণের সুদ হবে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ। এর সঙ্গে ১ শতাংশ তদারকি মাশুল যুক্ত হবে। সিএমএসএমই ঋণে সুদ হবে ১১ থেকে ১১ দশমিক ১৩ শতাংশ। সিএমএসএমই খাতের রপ্তানি অর্থায়নে সুদ হবে ৯ শতাংশ। কৃষিঋণের সুদহার হবে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। এ ছাড়া করপোরেটদের চলতি মূলধন ঋণে সুদ হবে ১০ শতাংশ, রপ্তানিতে ৮ শতাংশ, গাড়ি কেনায় ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ ও অন্য সব ঋণে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ।

ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে আমরা বিনিয়োগের ওপর মুনাফা বাড়িয়েছি, যা ইতিমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে।’ একই রকম সুদহার নির্ধারণ করা শুরু করেছে ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকও। ব্যাংকগুলো সব চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এমডি জাফর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরাও জুলাই থেকে বিনিয়োগের ওপর মুনাফার হার বাড়িয়েছি।’

এর বাইরে আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংকে আগে কৃষি খাতে ঋণের সুদ ছিল ৪-৮ শতাংশ, নতুন করে তা বাড়িয়ে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বড় করপোরেট, সিএমএসএমই ও বাণিজ্য খাতের ঋণের সুদ ৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ দশমিক ১০ শতাংশ করা হয়েছে। রপ্তানি অর্থায়নে সুদহার ৭ থেকে বাড়িয়ে ১০ দশমিক ১০ শতাংশ করা হয়েছে। একই রকম সুদহার নির্ধারণ করেছে এক্সিম ব্যাংকও। ব্যাংকটির এমডি ফিরোজ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক যে সীমা দিয়েছে, আমরা সেটাই নতুন করে নির্ধারণ করেছি।’

খেলাপিরাও এখন ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন

ঋণ খেলাপি

প্রচলিত ধারার ব্যাংক

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক কৃষিঋণে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ, রপ্তানি অর্থায়নে ১০ দশমিক ১০ শতাংশ নতুন সুদহার নির্ধারণ করেছে। পাশাপাশি ছোট, মধ্য ও বড়দের সব ঋণের সুদহার ১০ দশমিক ১০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। আগে কৃষিঋণে সুদহার ছিল ৮ শতাংশ, অন্য ঋণে ৯ শতাংশ। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক বড়, ছোট ও মাঝারিদের জন্য মাশুল বাদে সুদহার ১০ দশমিক ১০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই থেকে নতুন সুদহার কার্যকর হয়েছে। এর আগে থেকে আমানতের সুদ বাড়ানোর জন্য চাপ শুরু হয়েছে। অনেক ব্যাংক ৮ শতাংশ সুদে আমানত নিচ্ছে। এর ফলে আমানত নিয়ে একটু টানাটানি শুরু হয়েছে। তারল্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আরও কয়েক মাস এমন চাপ থাকবে। এখন নতুন ঋণের তেমন চাহিদা নেই বললেই চলে।

ব্র্যাক ব্যাংক ছোট, মাঝারি ও বড়দের মেয়াদি এবং চলতি মূলধন ঋণের সুদহার ৮ দশমিক ১০ থেকে ১০ দশমিক ১০ শতাংশ কার্যকর করেছে। একই সুদহার হবে বাণিজ্য অর্থায়ন, ভোক্তা ঋণ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে। আবাসন ঋণের সুদ হবে ৭ দশমিক ৫০ থেকে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ, কৃষি খাতে ৮ দশমিক ১০ থেকে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। ক্রেডিট কার্ডে সুদহার ১৭ থেকে ২০ শতাংশ। অন্যান্য ঋণের ৭ দশমিক ১০ থেকে ১০ দশমিক ১০ শতাংশ। প্রাইম ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকে একইভাবে সুদহার বাড়িয়েছে।

ঋণ কেলেঙ্কারিমুক্ত ব্যাংক খাত কীভাবে

ঋণ কেলেঙ্কারিমুক্ত ব্যাংক খাত কীভাবে

না জানিয়ে বেশি কিস্তি কর্তন

বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দিয়েছে, গ্রাহককে না জানিয়ে কোনোভাবেই নতুন সুদহার প্রয়োগ করা যাবে না। তবে অনেক ব্যাংক তা মানছে না।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি বিভাগের কর্মকর্তা ফয়জুল্লাহ জিসান গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, প্রতি মাসে ইসলামী ব্যাংক গৃহঋণের কিস্তি কাটত ২৫ হাজার টাকা, কিন্তু এই মাস থেকে মূল্যস্ফীতি ও দুই অঙ্কের সুদের দোহাই দিয়ে কেটেছে ২৯ হাজার টাকা।

ইসলামী ব্যাংকের এমডি মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, গ্রাহককে জানিয়েই কিস্তি বেশি কাটার নিয়ম। কোনো গ্রাহককে জানানো না হলে সেটা ভুল হয়েছে। এটা শাখা পর্যায়ে সমাধান করে নেবে।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *