Home জীবনযাপন ব্যাংক ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে, দেখার কেউ নেই
জুন ২৬, ২০২৩

ব্যাংক ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে, দেখার কেউ নেই

জাতীয় পার্টিসহ বিরোধী দলের সংসদ-সদস্যরা বলেছেন, ব্যাংকে লুটপাট চলছে। ব্যাংক ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। ঋণখেলাপিরা ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করছে। শেয়ারবাজার ধসে পড়েছে। অথচ সরকার সব জেনেও নির্বিকার। তারা কিছু বলছে না। লুটেরাদের ধরছে না। কারণ বড়লোকরা তাদের বন্ধু। দুর্নীতিবাজ-লুটেরারা সরকারের বন্ধু, মন্ত্রী-এমপিদের বন্ধু। তাই তারা ধনীদের কিছু বলে না। ধনীদের ধরে না। লুটেরাদের ধরে না। তারা গরিবের ওপর কর বসায়। গরিবদের ধরে। সাধারণ মানুষের ওপর কর বসায়। সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলে।  রোববার জাতীয় সংসদে আর্থিক বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। তবে বিরোধীদের এসব সমালোচনার কোনো জবাব দেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিরোধী দলের সদস্যরা তার এই নীরব থাকারও তীব্র সমালোচনা করেন।

তারা বলেন, আমরা এত কথা বলছি। এত সমালোচনা করি। অথচ অর্থমন্ত্রী কোনো কথারই জবাব দিচ্ছেন না। এই নীরব থাকা ও চুপ থাকা তার ভালো গুণ। কথায় আছে, সবচেয়ে ভালো চুপ থাকা। অর্থমন্ত্রী এই নীতিই হয়তো অবলম্বন করছেন।

বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দেশে এখন ধনী লোকের অভাব নেই। তাদের হাতে এত টাকা যে গুনে শেষ করা যাবে না। চারদিকে এত রিসোর্ট, এত বাগানবাড়ি, এত এত ফাইভ স্টার হোটেল। কারা এর মালিক। অর্থমন্ত্রী এদের ধরেন না। এদের ওপর কর বসান না। তিনি কর বসান গরিবের ওপর। ধনীদের কেন ধরেন না, কারণ তারা তার বন্ধু। সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের বন্ধু।

চুন্নু আরও বলেন, দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। কানাডায় বেগমপাড়া হচ্ছে। মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে সেকেন্ড হোম হচ্ছে। বিশ্বের সব নামিদামি ব্যান্ডের গাড়ি দেশে আসছে। কারা এসব গাড়ি আনছে, কিনছে। আর কারা এসব গাড়িতে চড়ছে। অর্থমন্ত্রী সব জানেন। কিন্তু এদের তিনি ধরেন না। কারণ তারা মন্ত্রী-এমপিদের বন্ধু-বান্ধব, কারও না কারও আÍীয়স্বজন। এজন্য এরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, লুটপাটকারীদের ধরেন। পাচারকারীদের ধরেন। তাহলে সরকারের টাকার অভাব হবে না। বিদেশ থেকে তো একবার কিছু টাকা এনেছেন। বাকি টাকা আনছেন না কেন। সিঙ্গাপুরে নাকি এদেশের কারা মার্কেট করেছেন। তারা কারা, খবর নেন। তাদের ধরেন। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী চাইলে দেশের বাইরে তার লোক পাঠাতে পারেন। অনুসন্ধান করাতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করবেন না। করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে যাবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী যখনই বলেন জিনিসপত্রের দাম কমাবেন। কিন্তু পরদিনই দাম বেড়ে যায় বলে অভিযোগ করেন মুজিবুল হক চুন্নু। বাণিজ্যমন্ত্রী সিন্ডিকেটে জড়িত কিনা এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, বাজার একটু নিয়ন্ত্রণ করেন। আসলে বাজারে নিয়ন্ত্রণটা লাগবে, নিয়ন্ত্রণ নেই।

জাতীয় পার্টির সংসদ-সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, সরকারি দল চায় আমরা তাদের ভাষায় কথা বলি। এটা তো ঠিক নয়। সংসদ তো জনগণের। আমাদের অর্থাৎ বিরোধী দলের কাজ সরকারের সমালোচনা করা। সরকারের ভুল-ত্রুটি তুলে ধরা। আমরা এই কাজটিই করছি। আজ যদি আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের আসনে থাকতেন, তারা আমাদের চাইতেও অনেক বেশি সরকারি দলের সমালোচনা করতেন। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকে লুটপাট চলছে। ব্যাংক খালি হয়ে গেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেখার কেউ নেই। সরকারও নিশ্চুপ।

কাজী ফিরোজ রশীদ আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী যা বলেন, দেশের মানুষ তার ওপর আস্থা রাখেন। কিন্তু তার মন্ত্রী-এমপিদের কথার ওপর জনগণ আস্থা রাখে না। গ্রামে এক ইঞ্চি জমিও ফাঁকা নেই। মানুষ চাষাবাদ করছে। উৎপাদন করছে। আমরা নিয়মিত গ্রামে যাই। মানুষের খবর রাখি। দেশের মানুষ ভালো নেই। গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। মানুষের আয় নেই। যা আয় করেন, তার চাইতে ব্যয় তাদের বেশি।

মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, এর ফলে মেধাবী ছেলেমেয়েরা মেডিকেলে পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। একই দলের ব্যারিস্টার শামিম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, সরকার ঋণখেলাপিদের ধরছে না। সরকার পাচারকারীদের ধরছে না। কারণে আজকে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, তিনি পেয়েছেন চাটার দল। শেখ হাসিনাও একইরকম চাটার দল পেয়েছেন। যারা দেশের ব্যাংকগুলা চেটে সাবাড় করে দিয়েছে। সরকার বিশাল ঘাটতির বাজেট করেছে। এ বিশাল ঘাটতি মেটানোর জন্য সরকারকে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিতে হবে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে দেবে, ওই টাকা ব্যাংক থেকে সরকারকে দেবে। টাকা ছাপানো হলে দুটি জিনিস হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার টাকা নিলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ঋণ পাবে না। কর্মসংস্থান হবে না। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, তৃতীয় বিশ্বের উদীয়মান দেশের কর, আর উন্নত বিশ্বের কর একই হতে পারে না। দুর্নীতির অশুভ প্রতিযোগিতা বাংলাদেশে চলছে। এ সরকার ওয়াদা করেছিল-দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। দুর্নীতি এখন নীতিতে পরিণত হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এখন শূন্য। জিরো টলারেন্স হয়নি।

জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান বলেন, আমি একজন শিক্ষক। আমি দুই-তিন কোটি টাকা ঋণ চাইলে পাই না। আর অন্যদিকে বিসমিল্লাহ গ্রুপ, পিকে হালদাররা হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ পায়। এই টাকা তারা পাচারও করে। তিনি বলেন, ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। যেসব আইন করার কথা তাও করা হচ্ছে না। কারণ ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা তাদের উদ্দেশ্য।

একই দলের ডা. রুস্তুম আলী ফরাজী বলেন, প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ না নিলে এ দেশে কিছু হয় না। তাই আমার অনুরোধ থাকবে, ঋণখেলাপি ও ব্যাংক ডাকাতদের বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। গণফোরামের সংসদ-সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, সরকার লুটেরাদের স্বার্থ দেখে। ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের স্বার্থ দেখে। মানুষের কথা এই সরকার ভাবে না। তিনি বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা সরাসরি সম্পৃক্ত। এ কারণে লুটেরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না।

প্রতিটি খাতে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণকে প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি : নতুন বছরের বাজেটে প্রতিটি খাতে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণকে প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। জাতীয় সংসদে তিনি বলেন, ১ জুন বাজেট উপস্থাপনের পর সংসদে এবং সংসদের বাইরে বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে, যা বাজেট বাস্তবায়নে আমাদের জন্য সহায়ক ভূমিকা রাখবে। আমি আলোচকদের সবাইকে জানাই, আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

মুস্তফা কামাল বলেন, আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, শেখ হাসিনার অসীম সাহস ও দূরদর্শী নেতৃত্বে সব চ্যালেঞ্জকে সুযোগে পরিণত করে, আপনাদের সবার সহযোগিতায় দেশের সব মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ‘উন্নয়ন অর্থনীতির কারিগর’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আমাদের বাংলাদেশকে মাত্র ১৪ বছরে ৬০তম অবস্থান থেকে ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত করে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বের ২০টি বৃহৎ অর্থনীতির দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও জ্ঞানভিত্তিক ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করা।

মন্ত্রী বলেন, আমাদের এবারের বাজেটের মূল দর্শন ২০৪১ সালের মাঝে আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্রেইনচাইল্ড সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ। তাই আমরা বাজেটের প্রতিটি খাতে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণকে প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনায় আমরা দেশের জনগণকে মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সুরক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতা সম্প্রসারণ ও বিভিন্ন ভাতার হার বৃদ্ধি করেছি।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *