আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি এড়াতে বিএনপির নতুন কৌশল
পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের। মিথ্যা মামলা, বাসায় গিয়ে হয়রানি, মুঠোফোনের ব্যক্তিগত আলাপে নজরদারিসহ এমন সব অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
কেবল বিএনপি নয়, বিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও একই কৌশল অবলম্বন করছেন। এতে করে ডিজিটাল মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা খুব সহজেই তাদের অবস্থান শনাক্ত এবং মুঠোফোনের কথোপকথনে নজরদারি করতে পারছেন না।
রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা মহানগরের ১১টি থানা এলাকার পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।
বিএনপির কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের ৩০ জন নেতার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর বিশ্লেষণ করে যুগান্তর। সেখানে দেখা যায়, এদের ২৪ জনেরই বিদেশি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর রয়েছে। একইসঙ্গে তাদের কয়েকজনের দেশের কোম্পানির ফোন নম্বরও আছে।
তবে বিদেশি নম্বরগুলো তারা দলীয় কাজে ব্যবহার করছেন। কারণ দেশীয় নম্বর বা এর মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপসহ এ ধরনের অ্যাপগুলোর ব্যবহার তারা নিরাপদ মনে করছেন না। দলটির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, কেবল কেন্দ্রেই নয়, তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও এখন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন।
যদি কোনো নেতা দেশের বাইরেও যান তাহলেও এই নম্বরগুলোতে অনলাইনে তারা সক্রিয় থাকছেন। ফলে অনেক সময় নেতাকর্মীরাও বুঝতে পারছেন না অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি কোথায় অবস্থান করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী যুগান্তরকে বলেন, শুধু বিএনপি নেতাকর্মীই নয় সরকারের বিরুদ্ধে যারা সমালোচনা করছেন তাদের কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জনগণের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারকে রক্ষা করতে বহুমাত্রিক নীল নকশা করছে তারা। মোবাইল ফোনে নজরদারিও এরই অংশ।
আরেক যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যুগান্তরকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সরকার আমাদের ওপর নজরদারি করছে। মোবাইল নম্বর ট্র্যাকিং করে ব্যক্তিগত কথোপকথন ও অবস্থান জেনে গ্রেফতারসহ নানা ধরনের হয়রানি করছে। এজন্য অনেকে নিজ বাসায় থাকতে পারছে না। বিভিন্নজনের ব্যক্তিগত ফোনালাপ কাটছাঁট করে ছড়িয়ে দিয়েছে। এই ভয়ে অনেকে মোবাইল নম্বরে সরাসরি কথা বলা ছেড়ে দিয়েছেন। জীবন ও সম্মানের নিরাপত্তা রক্ষায় অভ্যস্ত হয়েছেন অনলাইন যোগাযোগে। এটি অনলাইন দুনিয়ায় ব্যক্তিগতভাবে সুরক্ষিত থাকার একটি প্রচেষ্টা।
পুলিশ সূত্রগুলো বলছে, থানাগুলো অপরাধীদের ওপর নজরদারির পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কেও খোঁজখবর রাখে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিষয়েও তাদের কাছে তথ্য থাকে। এটি কাউকে হয়রানির উদ্দেশ্যে নয়, বরং সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তথ্যগুলো হালনাগাদ করতে গিয়ে তারা নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
অনেক নেতার পূর্ববর্তী নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। থাকার ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন কেউ কেউ। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারা মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, সিগন্যালসহ কয়েকটি যোগাযোগ মাধ্যমে বিদেশি নম্বর ব্যবহার করেন। অনেক মোবাইলে আবার কোনো সিমও থাকে না। এতে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয় পকেট রাউটার দিয়ে। অন্য নামে রেজিস্ট্রেশনকৃত দেশি সিমও ইন্টারনেট সংযোগের জন্য ব্যবহার হচ্ছে। ফলে তাদের অবস্থান সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে জানা যাচ্ছে না। কেউ কেউ আবার রোমিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি বিদেশি সিম ব্যবহার করেন। তবে ব্যয়বহুল হওয়ায় এর ব্যবহার এখানে ব্যপকভাবে বিস্তৃত হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. মনজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, যেসব অপরাধী বিদেশি নম্বর ব্যবহার করছেন তাদের শনাক্তে পুলিশের গোয়েন্দা শাখাগুলো কাজ করছে। পুলিশ কাউকে হয়রানি করছে না। তারা তাদের নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছে।