Home দুর্ণীতি জামানতবিহীন ঋণে ঝুঁকি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর
জুন ২৬, ২০২৩

জামানতবিহীন ঋণে ঝুঁকি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর

কুরবানির পশুর চামড়া কিনতে জামানতবিহীন ঋণ দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বিপাকে পড়েছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণও বাড়ছে। জামানতবিহীন ঋণ নিয়ে সোনালী ব্যাংক ঝুঁকিতে আছে। একইভাবে কয়েকজন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির কারণে রূপালী ব্যাংক বেকায়দায় পড়েছে। ব্যাংকটি বড় অঙ্কের পুরোনো খেলাপি ঋণ টেনেই চলছে। অন্যসব সরকারি ব্যাংকের পরিস্থিতিও প্রায় একই রকম। যেসব ঋণ নিয়মিত দেখানো হচ্ছে, সেসবও পুনঃতফশিলের কারণে সম্ভব হয়েছে। ব্যাংকাররা বলছেন, পুনঃতফশিল বন্ধ করে দিলে কুরবানির চামড়া কিনতে দেওয়া প্রায় সব ঋণ খেলাপি হয়ে যাবে। মূলত খাতটিকে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চামড়া খাতে ব্যাংকগুলো ১৩ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে। এ খাতে রূপালী ব্যাংক ৬৪১ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এর মধ্যে ১৩৯ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে, যা বিতরণ করা ঋণের ২১ শতাংশ। সোনালী ব্যাংক ১৬৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে। এর মধ্যে ৭৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকার কোনো জামানত নেই। ফলে ঋণগুলো ঝুঁকিতে আছে। ব্যাংকটিতে চামড়া খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ছিল মাত্র ৯৪ লাখ টাকা। তিন মাস পর খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকায়। অগ্রণী ব্যাংক ৬৪৪ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২৮ কোটি টাকা ফেরত আসেনি। একইভাবে জনতা ব্যাংক প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে।

ব্যাংকটির বেশির ভাগ ঋণই নবায়ন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাঁচা চামড়া কিনতে এবার ১২টি ব্যাংক ঋণ দেবে। এর মধ্যে জনতা ব্যাংক একাই দেবে ১০০ কোটি টাকা। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংক ৮০ কোটি, রূপালী ব্যাংক ৩০ কোটি, সোনালী ব্যাংক ২৫ কোটি, ইসলামী ব্যাংক ৫ কোটি ৩১ লাখ, বেসিক ব্যাংক ৫ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ৫ কোটি, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ৬ কোটি ৫০ লাখ, এনসিসি ব্যাংক ২ কোটি এবং সিটি ব্যাংক ২০ লাখ টাকা দেবে। আর সাউথইস্ট ব্যাংক বলছে, অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, প্রতিবছরের মতো এবারও চামড়া সংগ্রহের জন্য ট্যানারি শিল্পের অনুকূলে ৫০০ কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা করতে তাদের চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)। তাই তারা ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনুরোধ জানায়। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়। এর আলোকে ব্যাংকগুলো ২৫৯ কোটি টাকা ঋণ দেবে। জানা যায়, চামড়া খাতের আগের ঋণের বড় অংশ খেলাপি। এ কারণে ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে চায় না। লক্ষ্যমাত্রা যতই রাখা হোক না কেন, ঋণ বিতরণ ১০০ কোটি টাকার সীমাও ছাড়াতে পারে না। ২০২০ সালে ৬৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও বিতরণ হয়েছিল মাত্র ৬৫ কোটি টাকা।

ব্যাংকগুলো বলছে, নতুন ঋণের বড় অংশই ব্যবসায়ীদের বকেয়া পরিশোধ বাবদ কেটে রাখা হয়। ফলে প্রকৃত ঋণ খুবই কম পান ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরাও বলছেন, বাস্তবে নতুন ঋণ বেশি পান না তারা। ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে পশুর চামড়ার প্রায় ৭০ শতাংশের জোগান আসে কুরবানির ঈদে। তবে ব্যবসায়ীদের হাতে নগদ টাকা না থাকায় তারা সব চামড়া সংগ্রহ করতে পারেন না। এ সুযোগটি একশ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগী নেয়।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, কুরবানির চামড়া কিনতে কয়েকটি ব্যাংক ঋণ দেয়। কিন্তু এটা শুভংকরের ফাঁকি। কারণ, বরাদ্দ ঋণের মাত্র ১০ শতাংশ বণ্টন করা হয়। যেসব ট্যানারি ব্যবসায়ীর সক্ষমতা থাকে কেবল তাদের পুনরায় ঋণ দেওয়া হয়। যারা বকেয়া পরিশোধ করতে পারে না, তাদের ঋণ পুনঃতফশিল করে কিছু ঋণ দেওয়া হয়। প্রকৃতপক্ষে তারা নতুন ঋণ পায় না। এ খাতে আগের যে টাকা বকেয়া আছে, সেটা ব্লকে নিয়ে নতুন করে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা অর্থায়ন করা প্রয়োজন। তা না হলে খাতটির সংকট কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *