Home বিশ্ব বাংলাদেশ প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের পররাষ্ট্রনীতি স্বতন্ত্র
জুন ২৫, ২০২৩

বাংলাদেশ প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের পররাষ্ট্রনীতি স্বতন্ত্র

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠকে আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে দিল্লি ও ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্রনীতি স্বতন্ত্র। যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে তাদের মিত্রদের ছাড়াই বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এককভাবে তাদের নীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে আগামীতে পরিস্থিতির প্রতি সবার নজর থাকবে।

যৌথ বিবৃতি মোতাবেক, বাইডেন প্রশাসন এশিয়ায় ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি মেনে চলবে। তার মধ্যে সমুদ্রসীমায় নিরাপত্তা সহযোগিতার জন্য গঠন করেছে কোয়াড। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারত কোয়াডের সদস্য। সামুদ্রিক নিরাপত্তার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করবে ভারত।

যৌথ বিবৃতিতে চীনের নাম উল্লেখ না থাকলেও কার্যত চীনের আধিপত্য বিস্তার রোধই এই সহযোগিতার লক্ষ্য। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত ঢাকাকে দেখবে যে যার চোখে, তবে চীনের আধিপত্য বিস্তার প্রতিরোধসহ সমুদ্র অঞ্চলের নিরাপত্তা সুরক্ষায় কাজ করবে যৌথভাবে।

দিল্লি ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সূত্রের ধারণা, মোদির সফরকালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে উভয় নেতা এসব বিষয় ডকুমেন্টে উল্লেখ করতে চাননি।

জানতে চাইলে দিল্লি ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত একজন বাংলাদেশি কূটনীতিক শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘আঞ্চলিক বিষয় আলোচনা হলে আমাদের দেশের প্রসঙ্গ বাদ যাবে কেন? নিশ্চয়ই আলোচনা হয়েছে। মোদির সফর সবে শেষ হয়েছে। তিনি মিসর গেছেন।’

তিনি আরও বলেন, মোদিকে যুক্তরাষ্ট্র অনেক সম্মান দিয়েছে। এমন সম্মান সবাইকে সব সময় দেয় না। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে দিল্লি ও ওয়াশিংটনের অবস্থান এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে বলে ওই কূটনীতিকের ধারণা।

আঞ্চলিক বিষয়ে তাদের প্রায় অভিন্ন অবস্থান থাকলেও বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এখন আর একনীতিতে নেই দিল্লি ও ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্র দিল্লির চোখে বাংলাদেশকে দেখে বলে দীর্ঘদিনের বিশ্বাস রয়েছে। সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশের বিষয়ে মার্কিন কর্মকর্তারা এখন দিল্লির মুখাপেক্ষী নন। তারা সরাসরি ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন।

জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমশের মবিন চৌধুরী শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরে নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আঞ্চলিক বিষয়গুলোর মধ্যে যেসব বিষয় স্পষ্ট সেগুলো যৌথ বিবৃতিতে এসেছে। পাকিস্তানের জঙ্গিবাদ, আফগানিস্তান পরিস্থিতি এবং মিয়ানমারে গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের আহ্বান যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রসঙ্গে যদি আলোচনা হয়েও থাকে তবে দুই নেতা মনে করেছেন, সেগুলো প্রকাশ্যে বলার প্রয়োজন নেই। কারণ সব বিষয়ই প্রকাশ্যে আসে না।’

জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের আরেক সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির যুগান্তরকে বলেন, ‘মোদির সফর যুক্তরাষ্ট্রে একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। একদিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে উচ্চমাত্রার সম্মান দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে, ভারতে গণতন্ত্রের সমস্যা, আইনের শাসন, মানবাধিকার প্রভৃতি বিষয়ে নাগরিক সমাজ বেশ মুখর ছিল। এসব প্রশ্নে মোদিকে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে হয়েছে। ফলে বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আলোচনার চেয়েও বৃহত্তর ক্যানভাসে বিষয়টা বিবেচ্য।’

বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য ঢাকার ওপর চাপ সৃষ্টি করে চলেছে ওয়াশিংটন। তার অংশ হিসাবে গত ২৪ মে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করলে ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।

ভিসানীতি ছাড়াও কয়েকজন কংগ্রেসম্যান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে চিঠি লিখে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার দাবি জানান। বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবাধিকার প্রভৃতি বিষয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশে যাতে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন না হয় সে বিষয়ে বাইডেন প্রশাসন বারবারই তাগিদ দিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিংকেন সম্প্রতি ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে বলেন, বাংলাদেশে এমন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া উচিত যা গোটাবিশ্ব তাকিয়ে দেখবে। বাইডেন প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা একের পর এক বাংলাদেশ সফর করেছেন।

অপর দিকে, ভারত তার জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প দেখছে না। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা মোকাবিলায় শেখ হাসিনার প্রশাসন দিল্লিকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে।

তাছাড়া, শিলিগুড়ি করিডোরে চীনের তৎপরতার কারণে বাংলাদেশকে বিশ্বস্ত বন্ধু হিসাবে পেতে চায় ভারত। অতিমাত্রায় চাপের কারণে বাংলাদেশ চীনের বলয়ভুক্ত হয়ে পড়ে কিনা সেটাই দিল্লির উদ্বেগের কারণ। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা জি-২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।

ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠককালে ভারতীয় সচিব বলেন, তার দেশ শেখ হাসিনার পাশে থাকবে। মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে ভারত সফর করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

তিনি উত্তর প্রদেশের বেনারসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে আলোচনা হওয়া স্বাভাবিক বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *